জিঙ্গেল বেলস জিঙ্গেল বেলস
জিঙ্গেল অল দ্য ওয়ে
ওহ হোয়াট ফান ইট ইস টু রাইড
ইন-অ্যা ওয়ান হর্স ওপেন স্লেজ...
জিঙ্গেল বেলসের সুর বেজে ওঠা মানেই কাছে এসে গিয়েছে ক্রিসমাস, এবার বড়দিনের জন্য সেজে ওঠার সময়। চেনা গানের সুরে মুহূর্তে বদলে যায় মন। হাজার কাজের মাঝেও অকারণ খুশি খুশি ভাব। কেক, ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ সব যেন হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে শহরে।
জিঙ্গেল বেলস- উৎসবের গান। পৃথিবীর যে দেশেও যাও না কেন বদলায় না এই সুর। বাচ্চা থেকে বুড়ো সব্বার কাছে ক্রিমমাসের সুর মানেই জিঙ্গেল বেলস। ক্রিসমাসের ক্যারল সং আরও অনেক আছে কিন্তু জিঙ্গেল বেলস ‘গোট’, মানে গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম।
কে লিখেছিলেন এই গান
১৮৫৭ খ্রীস্টাব্দে জেমস লর্ড পিয়েরপোন্ট লিখেছিলেন জিঙ্গেল বেলস। তবে আমরা যেভাবে এই গানকে চিনি ঠিক সেভাবে নয়। ‘দ্য ওয়ান হর্স ওপেন স্লেজ’ নামে প্রকাশিত হয় গানটি। গানের কথা এবং সুরও ছিল কিছুটা অন্যরকম। সবথেকে বড় কথা এই গানের নাকি ক্রিসমাস উদযাপনের সঙ্গেও সেরকম কোনও যোগ ছিল না।
জেমস লর্ড পিয়েরপোনের জন্ম ১৮২২-এ, বোস্টনে। তাঁর বাবা ছিলেন ধর্মযাজক। নিয়মিত কবিতা লিখতেন। তাঁর ছিল ৬ সন্তান।
জেমস লর্ড পিয়েরপোনের যখন দশ বছর, বয়স তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বোর্ডিং স্কুলে। কিন্তু সেখানকার জীবন তাঁর বিশেষ ভাল লাগত না। বরং বাড়ির খোলামেলা পরিবেশ, বাবার কবিতা, বাইবেল পাঠ এসব অনেক বেশি টানত। খুব বেশি দিন থাকতে পারলেন না সেখানে। চার বছর পর চলে এলেন। এবার পাড়ি দিলেন জাহাজে। সমুদ্রে সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন জাহাজের ক্রু হয়ে। আমেরিকার নৌ সেনাবাহিনিতেই কেটে গেল ২১ বছর বয়স পর্যন্ত।
সেনার জীবন শেষ হলে ঘরে ফিরলেন। তাঁর বাবা তখনও পাদরির ভূমিকায়। বিয়ে করে থিতু হলেন জেমস। স্ত্রী মিলিসেন্ট আর ৩ সন্তানকে নিয়ে সংসার, চলতে লাগল জীবন আর পাঁচজন প্রাক্তন সেনানির মতোই। কোথাও কোনও গানের সুরের খোঁজ নেই সেখানে। একমাত্র চার্চরুমের গানে ছাড়া।
তবে ধরা বাঁধা একরকম নিয়মের জীবন বোধহয় কোনওদিনই জেমসের ভাল লাগত না, ক্যালিফোর্নিয়ার সোনার খনি তাঁকেও টানল। ভাগ্য বদলাতে ১৮৪৯-এ সানফ্রান্সিসকোতে শুরু করলেন ব্যবসা। নিজে কাজ শুরু করলেন ফটোগ্রাফার হিসেবে।
কয়েক বছর পর স্ত্রীকে হারালেন। আচমকাই যেন বদলে গেল জেমসের জীবন। হঠাৎ আসা এই আঘাতকে কী করে সামলাবেন, জানা নেই। চার্চরুমের প্রার্থনা কিছুটা শান্তি দেয় অশান্ত ভাবনায়। বাবা জেমসের জীবনে বড় আশ্রয়। তাঁর পথকেই বেছে নিলেন নিজের পথ হিসেবে। যেমন তাঁর দাদা নিয়েছিলেন। চলে এলেন জর্জিয়ায়। জেমসকে গির্জায় অরগ্যানের সামনে দেখা গেল। তাঁর ভূমিকা সঙ্গীত পরিচালকের। মিউজিক কয়্যারের দায়িত্ব পেলেন। অরগ্যান আর গান শেখাতেন তিনি।
মিউজিক কয়্যারের জন্য চাই নতুন নতুন গান। খানিকটা সেই প্রয়োজনেই শুরু করলেন গান লেখা। তাঁর প্রথম গান ‘দ্য রিটার্নড ক্যালিফোর্নিয়ান’। প্রকাশকাল ১৮৫২। ক্যালিফোর্নিয়ার সোনার খনি আর এক ভাগ্যসন্ধানীর বিপর্যয়ের কাহিনি বলা আছে গানে। সেই গান খারাপ লাগেনি মানুষের। তাই চলতে লাগল কলম। ৫ বছর পর এক গ্রীষ্মে এল সেই গান- ‘জিঙ্গেল বেল’। তখন অবশ্য এই গানের নাম ছিল আলাদা। একটা এক ঘোড়ার স্লেজ আর তার চালকের গল্প গান জুড়ে। সানডে স্কুলে থ্যাঙ্কস গিভিং ডের এর গান কীভাবে, কবে থেকে জিঙ্গেল বেলস ক্রিসমাসের সঙ্গে জুড়ে গেল তার কোনও সঠিক তথ্য মেলে না।
‘জিঙ্গেল বেল’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৪৩-এর পর থেকে। গানের কিছু পুরনো রেকর্ডিং সামনে আসে। সহজ সুর, সহজ কথায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গান। বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া খুদেদের মধ্যে হয়ে ওঠে সবচেয়ে প্রিয় রাইম সং।
গানের এক ঘোড়ার স্লেজ গাড়ি হয়ে ওঠে সান্টাক্লজের স্লেজ। ক্রিসমাসের উপহার নিয়ে এই স্লেজ গাড়ি চেপেই যেন সে আসছে...
গান কী করে ছড়িয়ে পড়ল সে তো জানা গেল, কিন্তু কী হল গানের লেখকের?
নতুন গানে সুর দেওয়ার পর সেই গান বাজতে লাগল চার্চরুমের অন্দরে। শীত কেটে আবার গ্রীষ্ম এল। নতুন পাতায় সেজে উঠল গাছ আর মরসুম। জেমসের মনেও এল পালা বদলের মরসুম। বেদনার স্মৃতি কাটিয়ে নতুন ভাবে সেজে উঠতে চায় জীবন। নতুন সুরের নেশা ফুলিয়ে দেয় পুরনো ক্ষত। আবার বিয়ে করলেন জেমস। শুরু হল নতুন সফর।
বেশ চলছিল সব হঠাৎ শুরু হল গৃহযুদ্ধ। যে চার্চের দায়িত্বে ছিলেন জেমস সেটা বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য। উত্তরে চলে গেলেন জেমসের দাদা। সেনাবাহিনীতে গেলেন জেমস, তবে গান থামালেন না। জীবন ফের একবার বদলে গিয়েছিল তার। যুদ্ধে যাওয়া আর পাঁচটা মানুষ যেভাবে বদলায় ঠিক সেভাবেই। কিন্তু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গানকে কাছ ছাড়া করেননি জেমস।
১৮৯৩-তে নিজের ছেলের বাড়িতে প্রয়াত হন লর্ড পিয়েরপোন্ট । জীবৎকালে ভাবতেও পারেননি কীভাবে তাঁর লেখা এক খামখেয়ালী গান হয়ে উঠবে সারা পৃথিবীর উৎসব-সঙ্গীত। গান যে লেখে সে চলে যায়, গায়ক চলে যায়, শুধু শেষ পর্যন্ত থেকে যায় গান...এটাই যে সৃষ্টির রীতি...