পদ্মের বীজ মাখানা

পাড়ার মুদিখানার দোকানে গেলে আমরা প্রায়শই দেখি সেখানের একটি কৌটোতে ভরা রয়েছে সাদা রঙের সুপারির মতো দেখতে একটি বস্তু। খানিকটা পপকর্নের মতো দেখতে এই বস্তুটির দোকানে নাম জিজ্ঞেস করলে জানা যায় তার নাম মাখানা। কি এই মাখানা আর কি কি কাজ করা যায় এই মাখানা দিয়ে চলুন জানা যাক..........

 

মাখানা হলো আসলে পদ্মফুলের বীজ। জানা যায়, পদ্ম বীজকে মুড়ির মতো শুকনো খোলায় ভেজে তৈরী হয় মাখানা। কিন্তু কি কি কাজে লাগে এটি? মাখানা নামক এই বস্তুটি আবার ফক্স নাট নামেও পরিচিত। মূলত ইন্ডিয়ান ডেজার্ট তৈরিতে এই মাখানা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ক্ষীর থেকে শুরু করে রায়তা সবেতেই এর উপস্থিতির টের পাওয়া যায়।এমনকি এই বীজটি দিয়ে সাধারণভাবে তরকারিও তৈরী করা যায়। মাখানাকারি নাম পরিচিত এই রান্নাটি শুধু দেশে নয়  বিদেশে ও অধিক জনপ্রিয়। রোস্টেড মাখানা আবার ইভিনিং স্ন্যাক্স হিসেবে বেশ পরিচিত। আজকাল বেশ কয়েকটি নামি স্যাঙ্কস কোম্পানি কমার্সিয়ালি এই মাখানা বিক্রি করছে।জানা গেছে এই বীজকে সঠিকভাবে প্রসেস করার পর এই বীজকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এই খাদ্য যথেষ্ট নিউট্রিয়াসও বটে। তাহলে চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক কিভাবে তৈরী হয় এই মাখানা।

 মাখানা সংগ্রহ করা বেশ কষ্টদায়ক একটি পদ্ধতি। আর এই মাখানা সংগ্রহের জন্য আলাদা দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে থাকে। সকলের পক্ষে এই মাখানা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। মাখানা সংগ্রহের এই কাজ শুরু হয় সকালের দিকে কিন্তু সেই কাজই শেষ হতে হতে বেলা বয়ে যায়।জলের তোলা থেকে এই বীজ সংগ্রহ করতে মোটামুটি পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে যায়। 'কারা' নামক একধরণের বাঁশের সাহায্যে জল থেকে তুলে আনা হয় পদ্মের বীজ। বীজ সংগ্রহের পর তাকে ভালো করে জলে ধোওয়া হয়। এর পর এই বীজ পরিষ্কার একটি জায়গায় স্টোর করা হয়ে থাকে। এর পরেই স্টেপটি বেশ কষ্টকর। এরপর গ্রেডেশনের জন্য বীজকে চালা হয়। মোট ১০ বার করে চালা হয় এই বীজ। তারপরেই একে শুকনো খোলায় ভেজে নিতে হয়। কারণ গ্রেডেশনের পরে মাখানা খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একে ফ্রাই করে নেওয়া হয়। ভাজার পর এই ফুলে ওঠা বীজ ঠান্ডা করতে রাখা হয়। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফুলে ওঠা সাদা অংশের থেকে কালো খোসা ছাড়িয়ে ফেলা হয়। এমনভাবে সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি করা হয় যাতে বীজের খোসার সম্পূর্ণ অংশটিই উঠে যায়।

এতো গেলো সংগ্রহ পদ্ধতির কথা। এবার আসা যাক এর স্বাস্থ্যগুণের কথায়। কি কি উপকার করে এটি শরীরের চলুন জানা যাক......................

 

১) ওজন হ্রাস- লো ক্যালোরি এবং হাই নিউট্রিশনের জন্য যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ খেয়াল রাখেন তারা মাখানার উপর অধিক ভরসা করে থাকেন।

২) বৃক্কজনিত সমস্যা- মাখানার ধারক ক্ষমতার জন্য কিডনি সম্পর্কিত সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে সক্ষম।

৩) ডায়াবেটিসের সমস্যা- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে মাখানার ভূমিকা রয়েছে। এটি শর্করাবিহীন স্ন্যাক্স হওয়ার কারণে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এই স্যাক্সটি খুব উপকারী।

৪) পেটের সমস্যা- মাখানাতে থাকে প্রচুর পরিমান দ্রবীভূত ফ্যাট। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় যারা জর্জরিত তাদের ক্ষেত্রেও এই মাখানা খুবই উপকারী।

 

তাহলে জেনে নিলেন পদ্মফুলের দানা বা বীজের নানা উপকারিতার কথা। তাই বাড়িতে যদি ডায়াবেটিক রোগী থাকেন তাহলে শর্করাবিহীন স্যাক্স হিসেবে মাখানা দিতে পারেন। শরীরে সমস্যা থাকলেই যে মাখানা খাওয়া যায় তার কোনো মানে নেই। সান্ধ্যকালীন স্ন্যাক্স হিসেবে আপনি প্রতিদিন খেতেই পারেন। অনেকেই আমরা এর আগে এই জিনিসটির সাথে খুব একটা পরিচিত ছিলাম না আর তার যে এতো স্বাস্থ্যগুণ তাও আমাদের জানা ছিল না।কিন্তু আজকের পর থেকে যদি পাড়ার মুদিখানার দোকানে গিয়ে মাখানা দেখতে পান তাহলে অবশ্যই কিনে নেবেন। বাড়িতে এনে হালকা ঘিয়ে ভেজে নিলেই তৈরী সান্ধ্যকালীন স্ন্যাক্স।   

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...