কিডনি স্টোনের সাতকাহন

কিডনি স্টোন বা রেনাল লিথিয়েসিস হলো একধরণের শক্ত পদার্থের ডিপোজিট যা কিডনির অভ্যন্তরে  মিনারেল ও লবণের জমাট রূপ। কিডনিতে স্টোন তৈরী হওয়ার পিছনে থাকে নানা কারন। কিডনির এই রোগ মূলত দেহের ইউরিনারি ট্র্যাককে আক্রমন করে থাকেমূত্রনালি থেকে সংক্রমণ শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত এই রোগের প্রভাব বৃক্ক বা কিডনিতে গিয়ে শেষ হয়। কিডনিতে স্টোনের আগমন ঘটলেই বদলে যেতে থাকে মূত্রের ধরণ। কিডনি স্টোনের ফলে মূত্র হয়ে ওঠে অত্যধিক ঘন এবং মূত্রে থাকা সমস্ত মিনারেল একত্রিত হয়ে জমাট বাঁধতে শুরু করে, এর থেকেই জন্ম হয় কিডনি স্টোনের। মূত্রের মাধ্যমে স্টোন নির্গত হওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু স্বস্তির কথা একটাই এই রোগ শরীরে চিরস্থায়ী কোনো ড্যামেজ করে না

চলুন আজ এই কিডনি স্টোনের ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক। প্রথমেই আসা যাক এই রোগের লক্ষণের দিকে। শরীরে কিডনি স্টোন বাসা বাঁধার ফলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো,

১) শরীরের পিছন দিকে অর্থাৎ পাঁজরের ঠিক নিচে এবং দুই পাশে ব্যাথা অনুভব হতে থাকে। এই ব্যাথা ধীরে ধীরে তলপেটের দিকে নামতে থাকে। ব্যাথার প্রকোপ সবসময় এক থাকে না। কোনো কোনো সময় খুবই তীব্র ব্যাথা অনুভূত হয়ে থাকে। বিশেষ করে মূত্র ত্যাগের সময় সবচেয়ে বেশি ব্যাথা অনুভব হয়।

২) এই রোগের প্রকোপে মূত্রের ধরণ বদলে যেতে শুরু করে। মূত্রের রং বদলে প্রথমে হয় পিঙ্ক  তারপর লাল এবং অবশেষে খয়েরি। বদলে যেতে থাকে মূত্রের স্বচ্ছতাও। স্বচ্ছ মূত্রের বদলে ঘোলাটে মূত্র তৈরী হয় শরীরে।

৩) এইসব লক্ষণের সাথে জ্বর, বমিভাব, বমি, মাথা যন্ত্রনা, কোমর ব্যাথা প্রভৃতি অনুভূত হয়।

কিডনির এই স্টোন আবার নানা প্রকারের হয়ে থাকে যেমন, ক্যালসিয়াম স্টোন, স্ট্রাভাইট স্টোন, ইউরিক অ্যাসিড স্টোন, সিস্টিন স্টোন প্রভৃতি। বেশির ভাগ কিডনি স্টোন সাধারণত ক্যালসিয়াম স্টোনই হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম অক্সালেটের রূপে কিডনিতে জমতে থাকে। অক্সালেট মূলত তৈরী হয় আমাদেরই যকৃতের দ্বারা। তাছাড়া বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমেও আমাদের শরীরে অক্সালেটের আগমন ঘটে থাকে। কিডনিতে ক্যালসিয়াম স্টোন ক্যালসিয়াম ফসফেটের আকারেও জমতে পারে। স্ট্রাভাইট স্টোন সাধারণত হয় কোনো ইনফেকশনের ফলে যেমন ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন। ইউরিক অ্যাসিড স্টোন সেইসব মানুষেরই হয় যারা পরিমাণমতো জল বা অন্য কোনো তরল পান করেনা। সিস্টিন স্টোন মূলত বংশগত ভাবে হয়ে থাকে। এর ফলে কিডনি থেকে সিষ্টিনিউরিক নামক একধরণের অ্যামাইনো অ্যাসিডের অত্যধিক ক্ষরণ হয়ে থাকে।

এই রোগের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলির মধ্যে অন্যতম কিছু হলো, এই রোগ কিছু ক্ষেত্রে বংশগত থাকে। ফলে পরিবারের একজন এই রোগে আক্রান্ত হলে বংশ পরম্পরায় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থেকে যায়। এছাড়া পরিবারের কারোর কিডনিতে স্টোন ধরা পড়লে পরিবারের বাকিদেরও কিডনি স্টোনে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থেকে যায়। এই রোগ শরীরে একবার থাবা বসিয়ে ফেললে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে আবারও ফিরে আসতে পারে। প্রতিদিন পরিমাণমতো জল বা অন্য কোনো তরল পান না করার ফলে বা অতিরিক্ত সময় গরম আবহাওয়ায় থাকার কারণে এই রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।

তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমান জল পান করুন এবং শরীরকে নানা রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচান। ডাক্তারের কথা মতো, প্রতিদিন ২ লিটার জল পান করা উচিৎ

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...