শরৎ রোদে বেজে উঠেছে দেবী দুর্গার আগমনীর সুর। মাঠে-ক্ষেতে শস্যের সমারহে যেন দেবীর পায়ের দাগ। ধরার তাঁর আসার প্রস্তুতিতে সেযে ওঠে প্রকৃতি। দেবী দুর্গার আর এক নাম শাকাম্ভরী। তাঁর সেই নাম যেন সার্থক হয়ে ওঠে সোনালী শস্যের ঢেউয়ে।
আষাঢ় শ্রাবণের এক টানা বর্ষণ , ফসল ক্ষয়ের ভয় থেকে মুক্ত হয়ে নতুন বীজ রোপনে মন দেয় কৃষিজীবী মানুষ। ধান্যে, শস্যে এবার তার পূর্ণ হয়ে ওঠার পালা। শেষ রেশ মানুষের মনেও।
প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী বা পার্শ্ব একাদশীর দিন করম পরবে মেতে ওঠে মানভূমের মানুষ । এই উৎসব প্রকৃতির উৎসব। তারুণ্যকে উদযাপনের উৎসব। করম প্রধানত সৃষ্টির উৎসব। কর্ম থেকে করমের উৎপত্তি।
পুরাণ এবং প্রবচন বলে পার্শ্ব একাদশীর দিন বাসুকী নাগ ডান থেকে বাম পাশ ফেরেন।
করম পরবে ব্রত রাখে কুমারী মেয়েরা। দুর্গার প্রতিরূপ হিসেবে তাদের সম্মান জানানো হয় এই দিন।
এই উৎসব আসলে কৃষি ভিত্তিক উৎসব। শবর, লোহার, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, ওঁরাও, সরাক, মাহালি উপজাতির মানুষরা পালন করে থাকেন।
মূল পূজার প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে কুমারী মেয়েরা এবং বিবাহিতা নারীরাও ব্রত শুরু করেন। শুক্লা একাদশীর সাত, পাঁচ বা তিন দিন আগে শালের দাঁতনের কাঠি ভেঙে নদীর পুকুর বা জলাশয় স্নান করে ছোট ছোট বাঁশের ডালার মধ্যে নদীর বালি রেখে তার মধ্যে বিভিন্ন রকমের দানা শস্য বপন করেন মহিলারা। এই ডালাকে বলা হয় ‘জাওয়া’। এই সময় কুমারী মেয়েরা শাক খায় না,খাটিয়ায় ঘুমায় না, মাথায় তেল দেয় না, চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ায় না।
প্রতিদিন সকালে জাওয়াতে হলুদ জল দেওয়া হয়। জাওয়া ঘিরে প্রতি সন্ধ্যায়মেয়েরা নাচ ও গান করে থাকে। এই নাচকে বলে জাওয়া নাচ। করম গাছের ডাল ঘিরে এই পুজো মূলত প্রকৃতি বন্দনা। ধান-সহ যাবতী শস্যের উৎপাদ যাতে ভাল হয়, সেই কামনাতেই এই পুজো করা হয়।
করম পরবে প্রকৃতিকে আবাহন করা হয়। নারীই প্রকৃতি। তাই এই উৎসব নারী কেন্দ্রিক। করম দেবতার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য লৌকিক দেবতারও পুজো করা হয়।
রাখীবন্ধন উৎসবের আর এক রূপ দেখা যায় করম পরবে। এই উৎসব ভাইবোনের সম্পর্ক উদযাপনের উৎসব। এই দিনে, বোনেরা সারাদিন উপবাস করে এবং ভগবান কর্মের পূজা করেন এবং তাঁর কাছে তাঁদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু এবং সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।