শুনতে কি চাও তুমি

কানে কম শোনার সমস্যা হাজির হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হলো,

১) আপনি ধরুন এমন একটি জায়গায় রয়েছেন যেখানে কোনো একটি কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু আপনার কানে তার হাফ কথা আসছে কিংবা কোনো কথাই আসছে না| সেক্ষেত্রে মনযোগের অভাবকে দোষ দেওয়া গেলেও সেই ক্ষেত্রে হিয়ারিং লসের প্রভাবও থাকতে পারে|

২) কিছু ক্ষেত্রে কানে কম শোনা ব্যক্তিরা এমন অনুভূতির শিকার হন যে, তারা বলেন তারা একটি কথা শুনতে পাচ্ছেন কিন্তু কথার শব্দগুলো বুঝতে পারছেন না|

৩) টিভি বা রেডিওর শব্দ বারবার জোরে করা| বেশ জোরে টিভি চললেও তার সাউন্ড বাড়ানো একমাত্র হিয়ারিং লস পেশেন্টদের পক্ষেই সম্ভব|

৪) কথার মাঝে বারবার সেই কথা রিপিট করতে বলতে দেখেন যদি কাউকে তাহলে বুঝবেন সে হিয়ারিং লসের শিকার হয়েছেন|

৫) বেশি জনবহুল জায়গায় শুনতে অসুবিধা হতে পারে এই পেশেন্টদের ক্ষেত্রে কারণ কানে কম শুনতে পাওয়ার ফলে অধিক শব্দ হচ্ছে যেই জায়গায় সেখানে কথা শোনা তার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যার হয়ে পড়ে|

৬) হিয়ারিং লসের পেশেন্টরা কানে কম শোনার সাথে সাথে কানে একধরনের অদ্ভূত শব্দ শুনতে পান যাকে টিনিটাস বলা হয়ে থাকে|

কানে শুনতে না পাওয়া বা হিয়ারিং লস আবার তিনপ্রকারের হয়ে থাকে| এর মধ্যে কিছু টাইপ চিকিৎসার ফলে সেরে যাওয়া সম্ভব আর কিছু কখনই সাড়ে না| তাদের ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হিয়ারিং এড ব্যবহার করা| হিয়ারিং লসের শ্রেণীবিভাগটি হলো ঠিক এরকম-

১) সেন্সোনিউরোনাল হিয়ারিং লস- এই টাইপটিই হলো সবচেয়ে কমন টাইপ| বেশির ভাগ মানুষ যারা হিয়ারিং লসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের হিয়ারিং লসটি এই জাতীয়| এই ধরনের হিয়ারিং লস চিরস্থায়ী প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং এটি সাধারণত কানের অভ্যন্তরে থাকা ছোট ছোট রোমের অবক্ষয়ের ফলে হয়ে থাকে| অন্তঃকর্ণ থেকে অডিটরি নার্ভের দিকে যাওয়ার পথে এই রোমগুলি অবস্থান করে থাকে| এই রোমগুলির কাজই হলো শুনতে সাহায্য করা| এই অডিটরি নার্ভের কাজ হলো শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য মস্তিষ্কে পৌছে দেওয়া| এই দুয়ের মধ্যে একটিরও যদি কোনো সমস্যা হয় তবে সেই সমস্যার ফলে সম্পূর্ণ শ্রবণ পদ্ধতিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যায়|

২) কনডাক্টিভ হিয়ারিং লস- এই ধরনের হিয়ারিং লস সাধারণত মধ্যকর্ণ বা বহিঃকর্ণে মেকানিকাল ফল্টের ফলে হয়ে থাকে| সাধারণত কানের মধ্যে ওয়াক্স বিল্ড আপ হওয়ার ফলে এই ধরনের হিয়ারিং লসের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে| কিছু ক্ষেত্রে এটি চিরস্থায়ী বধিরতার সৃষ্টি করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ওসুধের মাধ্যমেই সারানো যায়|

৩) মিক্সড হিয়ারিং লস- মিক্সড হিয়ারিং লস হলো এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে একজন ব্যক্তির মধ্যেই কনডাক্টিভ হিয়ারিং লস এবং সেন্সোনিউরোনাল হিয়ারিং লস এই দুয়ের প্রভাবই বর্তমান|

বয়সের কারণ ছাড়াও আর কি কি কারণে হতে পারে এই সমস্যা চলুন জানা যাক-

১) বয়সকে এই সমস্যার মাঝখান দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আর যেসব কারণে কানে কম শোনার সমস্যা হতে পারে তা দেখা হলে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো,  কোনো বিশেষ ওষুধের সাইড এফেক্ট| এই ধরনের ওষুধকে বলা হয় অটোটক্সিক ড্রাগ|

২) মাথায় বা কানে কোনো কারণে আঘাত লাগলেও সেই আঘাতের ফলস্বরূপ শ্রবণ শক্তি চলে যেতে পারে|

৩) অনেকসময় এই শ্রবণ সমস্যা বংশগত হয়ে থাকে| অনেক সময় দীর্ঘদিন জোরালো শব্দের মাঝে থাকার ফলেও কানে শোনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে|

৪) বিশেষ কোনো অসুখ হলে অনেক সময় তার প্রভাব আমাদের শ্রবণ ক্ষমতার উপর পড়ে থাকে| যেমন, মামস, মেনিয়ারস ডিজিজ, অস্টিওস্কেলেরোসিস বা কোনো অটোইমিউনো ডিজিজ শরীরে হানা দিলে কানের কম শোনার সমস্যা আসতে পারে|

এই রোগের কারণ প্রচুর রয়েছে কিন্তু ট্রিটমেন্ট খুব লিমিটেড| আপনি যদি মনে করেন উপরোক্ত কোনো লক্ষনগুলি আপনার বা আপনার প্রিয়জনের কারোর হচ্ছে তাহলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন| হিয়ারিং কতটা রয়েছে তা জানার জন্য যে সকল টেস্ট করা হয় তা সাধারণত যন্ত্রণামুক্ত হয়ে থাকে| চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক নিজেই কিছু টেস্টের কথা বলবেন যার থেকে বোঝা যাবে আপনার সত্যিই কোনো হিয়ারিং লস হয়েছে কিনা| এরই সাথে চিকিৎসক মাইক্রোস্কোপ লাগানো একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কানের ভিতরের অংশগুলি ভালো করে দেখবেন যে কোথাও কোনো ওয়াক্স বিল্ড আপ হয়েছে কিনা| প্রথমেই যদি পাওয়া যায় যে এই ক্ষেত্রে ভিলেনের ভূমিকা নিছে কানের মধ্যে হওয়া ওয়াক্স বিল্ড আপ তাহলে চিকিৎসক নিজেই একধরনের তরল পদার্থের সাহায্যে সেই ওয়াক্স দূর করার চেষ্টা করবেন| কিন্তু সমস্যা যদি এত সহজ না হয় তখন অন্যান্য টেস্ট করার পরামর্শ দেবেন|

এই পরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে আপনার ঠিক কতটা পরিমান হিয়ারিং লস হয়েছে এবং তার জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি অধিক উপকারী| চিকিৎসক যদি মনে করেন ওষুধের দ্বারাই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে তাহলে তিনি ওষুধ দেবেন| এছাড়াও অপারেশনের মাধ্যমেও হিয়ারিং আবার ফিরিয়ে আনা যায়| অপশন থাকলে ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্টেশনের মাধ্যমেও হিয়ারিং ফেরানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা| আর এই ক্ষেত্রে সর্বশেষ পদ্ধতি হলো হিয়ারিং এড ব্যবহার করা| কোনো ক্ষেত্রেই হিয়ারিং সম্পূর্ণ ফিরে আসে না| তবে সেই ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা অনেকটা আয়ত্ত্বে এসে যায় যাতে সাধারণ কথাবার্তা,  টিভি দেখা প্রভৃতি কাজ সহজ হয়|

          

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...