শ্রী জগন্নাথদেবকে কেন ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয় জানেন?

জগন্নাথ দেবের উৎসবের অন্যতম অঙ্গ হল জগন্নাথের মহাপ্রসাদ। সেই প্রসাদের অন্নকণা পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে থাকে ভক্তরা। জগন্নাথদেব ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়।

পুরাণ প্রচলিত গল্প বলে, গোকুলে মা  যশোদা বালক কৃষ্ণকে আট প্রহর খেতে দিতেন। একবার ইন্দ্রের রোষে মহাপ্রলয়ের মুখে পড়ে শ্রীকৃষ্ণ। সেই সময় জীবকূলকে রক্ষা করতে শ্রীকৃষ্ণ কনিষ্ঠ আঙুলে গিরি গোবর্ধনকে তুলে ধরেন। সেই পাহাড় তলায় আশ্রয় নেয় গোকুলের জনতা। সাতদিন ওইভাবেই ছিলেন তিনি। প্রলয় বন্ধ হওয়ার পর গিরি গোবর্ধনকে পূর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে দেন। সেই সাতদিন অন্ন-জলহীন ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।

পুত্রকে অনাহারে দেখে কেঁদে ছিলেন যশোদা। শেষে প্রলয় থামলে ব্রজবাসী-সহ যশোদা সাতদিন ও আট প্রহরের হিসেবে কৃষ্ণের জন্য ৫৬টি পদ পরিবেশন করেছিলেন। সেই থেকেই নারায়ণের ছাপ্পান্ন ভোগ চলে আসছে।

FotoJet (25)

বলা হয় শ্রী বিষ্ণু মর্ত্যে এসে তাঁর চার ধাম পরিভ্রমণ করেন। বদ্রীনাথ ধাম,দ্বারকা ধাম,পুরী ধাম এবং রামেশ্বরম। তিনি হিমালয়ের বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন। তারপর গুজরাটের দ্বারকা ধামে গিয়ে বস্ত্র পরিধান করেন। ওড়িশার শ্রীক্ষেত্র ধামে ভোজন সারেন এবং রামেশ্বরমে গিয়ে বিশ্রাম শয়নে যান।

পুরীধামে যেহেতু বিষ্ণু আহার নেন তাই সেখানেই তাঁকে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদন করা হয়।

জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘর পৃথিবী বিখ্যাত। সাধারণের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। জগন্নাথের ভোগ ঘরে ৭৫২ টি উনুন আছে। ভোগ প্রস্তুতের কাজ ব্যস্ত থাকেন প্রায় তিনশোর বেশি রাঁধুনি। প্রতিদিন যে পরিমান ভোগ প্রতুত করা হয় তাতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের ক্ষুধা নিবারণ হয়। কোনও দিন কম পড়ে না। মানুষের বিশ্বাস জগন্নাথের আশীর্বাদেই এমনটা সম্ভব হয়।

জগন্নাথের ভোগ নিবেদন শুরু হয় বাল্য ভোগ দিয়ে। তারপর থাকে রাজাভোগ। দুপুরে অন্নভোগ। সন্ধ্যেয় দারুদেবকে দই, লেবু দিয়ে মেখে পান্তাভাত দেওয়া হয়। নানারকম ভাজা মিষ্টি থাকে তার সঙ্গে।  রাত ১১টার সময় ভাজা মিষ্টি আর ক্ষীর নিবেদন করা হয়। মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে শয়নে যান ভগবান।

এভাবেই ৫৬ ভোগ নিবেদিত হয়।

দেখে নিন শ্রী জগন্নাথ দেবের ৫৬ ভোগ তালিকায় কী কী থাকে-     

১)উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি

২)নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু

 ৩)খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর

৪)দই

 ৫)পাচিলা কাঁদালি অর্থাৎ টুকরো টুকরো কলা

৬)কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত

 ৭)টাটা খিচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিচুড়ি

 ৮)মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের পিঠে

 ৯)বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় পিঠে

 ১০)মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে

 ১১)হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি পিঠে

 ১২)ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের মিষ্টি রুটি

 ১৩)এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি পিঠে

 ১৪)আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি

 ১৫)শাক ভাজা

১৬)মরীচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু

 ১৭)করলা ভাজা

 ১৮)ছোট্ট পিঠে

 ১৯)বারা অর্থাৎ দুধ তৈরি মিষ্টি

 ২০)আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি

 ২১)বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে

 ২২)পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত

২৩)খিড়ি অর্থাৎ দুধভাত

 ২৪)কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি

২৫)পাত মনোহার মিষ্টি

২৬)তাকুয়া মিষ্টি

২৭)ভাগ পিঠে

২৮)গোটাই অর্থাৎ নিমকি

 ২৯)দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি

৩০)কাকারা মিষ্টি

৩১)লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট

 ৩২)আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি

 ৩৩)বিড়ি পিঠে

 ৩৪)চাড়াই নাডা মিষ্টি

৩৫)খাস্তা পুরি

 ৩৬)কাদালি বারা

 ৩৭) মাধু রুচী অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি

 ৩৮)সানা আরিশা অর্থাৎ চালের পিঠে

 ৩৯)পদ্ম পিঠে

 ৪০)পিঠে

 ৪১)কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি

৪২)দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত

 ৪৩)বড় আরিশা

৪৪)ত্রিপুরি

 ৪৫)সাকারা

 ৪৬)সুজি ক্ষীর

 ৪৭)মুগা সিজা

৪৮)মনোহরা মিষ্টি

৪৯)মগজ লাড্ডু

 ৫০)পানা

 ৫১)অন্ন

 ৫২)ঘি ভাত

৫৩)ডাল

 ৫৪)বিসার অর্থাৎ সবজি

 ৫৫)মাহুর অর্থাৎ লাবরা

 ৫৬)সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...