দুধকে শরীরের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় এক অন্যতম উপাদান হিসেবে ধরা হয়। চিকিৎসকেরাও এক সুষম আহার হিসেবে দুধকেই সবার আগে রাখেন। দুধের মধ্যে থাকা নানা উপাদান নান শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় বলে দেয়। অনিদ্রা থেকে হজমের গন্ডগোল সব কিছুতেই উপকারী হলো দুধ।
কিন্তু কোন দুধ শরীরের পক্ষে বেশি উপকারী তা জানা আছে কি? চলুন আজ এই নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
বাজার থেকে দুধের প্যাকেট ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়াই দস্তুর। কিন্তু অনেকে বলে থাকেন দুধ ফুটিয়ে নিলে তার পুষ্টিগুণ কমে যায়। সত্যিই কি তাই? চলুন জানা যাক।
বাজারে যে প্যাকেটবন্দি দুধ পাওয়া যায় তা হলো 'পাস্তুরাইজড'। এই দুধ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত। এই দুধ জীবাণুমুক্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, এই দুধ ফুটিয়ে খাওয়াই শ্রেয়। তারা জানালেন, পাস্তুরাইজড দুধও সবসময় ১০০ শতাংশ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করা যায় না। তাই এই দুধ ফুটিয়ে খেলে দুধ থেকে স্যালমোনেল্লা, সিউডোমোনাস, ব্যাসিলাস প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া যারা শরীরে প্রবেশ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, দুধ প্যাকেটের হলেও তাকে ফুটিয়ে খেলেই শরীরের উপকার হয়। অল্প আঁচে কাঁচা দুধ ফুটিয়ে নিলে কাঁচা দুধে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। তবে হাই ফ্লেমে দুধ ফোটালে দুধের পুষ্টিগুণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্যাকেটের দুধ কিনলেও তা অল্প আঁচে ফুটিয়ে নিয়ে তবেই খান কারণ কাঁচা দুধেই বেশি ব্যাকটেরিয়া জন্মায়।এখানে কাঁচা দুধ বলতে সেই দুধকে বোঝানো হচ্ছে যেই দুধ তখন হোমোজিনাইজড বা পাস্তুরাইজড নয়।
কাঁচা দুধ বা পাস্তুরাইজড অনেক সময় অ্যালার্জির সৃষ্টি করে সেইসব মানুষের শরীরে যাদের দুধ বা ল্যাকটোজ সহ্য হয়না।
ল্যাকটোজ হলো গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ দিয়ে তৈরী দুধের একধরণের শর্করাজাত দ্রব্য। এই ল্যাকটোজ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে নির্গত ল্যাকটেজ নামক হ্মণের দ্বারা পাচিত হয়ে থাকে। কিছু মানুষ আছেন যাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ল্যাকটেজ তৈরী হয় না। তাদের শরীরে ল্যাকটোজ হজম হয় না এবং নানা পেটের সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। কাঁচা দুধে অর্থাৎ যে দুধ এখনো প্রসেসড হয়নি সেই দুধে উপস্থিটি থাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া যা ল্যাকটেজ তৈরী করতে সাহায্য করে । এই ব্যাকটেরিয়া পাস্তুরাইজেশনের সময় মারা যায়। তাই যারা কাঁচা দুধ খায় তাদের শরীরে ল্যাকটোজ হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কাঁচা দুধে ইমিউনোগ্লোবিউলিন, লাইসোজাইম, ল্যাকটোপারঅক্সিডেজ প্রভৃতি অ্যান্টি মাইক্রোবিয়ালের পরিমান বেশি মাত্রায় থাকে। এই উপাদানগুলি দুধকে বেশিদিনের জন্য সঞ্চিত হয়ে থাকে সাহায্য করে থাকে। এই উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায় দুধ ফ্রিজে রাখার ফলে। বলা হয়ে থাকে, কাঁচা দুধে নিউট্রিয়েন্টস এর পরিমান বেশি থাকে। তাই কাঁচা দুধ ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স মানুষজন এবং যাদের অ্যাজমা, ইমিউনো ডিজিজ প্রভৃতি রয়েছে তাদের জন্য খুবই উপকারী।
কাঁচা দুধ গরম করার ফলে দুধে থাকা মাইক্রোব মারা যায় এবং সেই দুধ তখন অধিক স্বাদযুক্ত বলে মনে হয়। পাস্তুরাইজড দুধ ঠান্ডা অবস্থাতেও পান করা যায়। কিন্তু সেই দুধ যদি গরম করে নেওয়া যায় তাহলে তার সংরক্ষণের সময় বেশি হয়।