শিবের ছলনাতেই হর পার্বতীর বিয়ে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল একপ্রকার! শুনুন সেই কাহিনি!

বিবাহ করতে যাওয়ার জন্য দেবাদিদেব মহাদেব অপরূপ অবর্ণনীয় রূপে সজ্জিত হয়ে উঠলেন। তার দৈব প্রভাবে প্রাকৃত বস্তু সকল কৃত্রিম রূপ ধারণ‌ করলো। মহাদেব ঐশ্বর্য মন্ডিত হয়ে উঠলে তার অনুচরগণ বাদ্য বাজাতে শুরু করে দিল। এরপর সকল দেবতাগণ এসে উপস্থিত হলেন। ব্রহ্মা ঋষিগণ পরিবৃত হয়ে শিবকে প্রণাম করে সেখানে অবস্থান করলেন। বিষ্ণু তার বাহন পক্ষীরাজ গরুড়ের পিঠে চেপে এলেন। এরপর ইন্দ্র, বরুণ,যম‌ ও কুবের প্রভৃতি দেবগন অন্যান্য লোকপাল সকল বসু সূর্য ও ঋষিগণ নিজ নিজ চিহ্নসহ সেখানে উপস্থিত হলেন। দেবগণের প্রত্যেকের ছিল এক একটি নিজস্ব চিহ্ন।

গঙ্গা প্রভৃতি নদী সকল সমুদ্র সকল যক্ষগণ ও শিব সেবার উপযুক্ত সময় বুঝে সুশোভিত হয়ে এখানে এসে অবস্থান করতে লাগলেন। দেবগণ নিজ নিজ দলবলের সঙ্গে মিলিত হয়ে এক একটি ব্যুহ রচনা করলেন। পরে তারা এক একটি দলে বিভক্ত হয়ে কৈলাস পর্বত থেকে বেরিয়ে গেলেন। তখন সবকিছু দেখে সন্তুষ্ট হলেন শিব তিনি তখন দেবগণকে অগ্রগতি করে বিবাহের জন্য যাত্রা করলেন। দেবগণ বাদ্যকরদের সঙ্গে আগে আগে যেতে লাগলেন ও তারা তখন শিবের প্রীতির জন্য নানা কথাবার্তা বলতে লাগলেন।

এইদিকে হিমালয় শাস্ত্র বিধি অনুসারে মণ্ডপাদি রচনা করে বিবাহের প্রস্তুতি পর্ব শেষ করলেন। এমন সময় বর ও বরযাত্রীরা আসছেন শুনে তাদের অভ্যর্থনা করবার জন্য তিনি প্রস্তুত হলেন। হিমালয়ের গৃহে যাওয়ার পথে স্থানে স্থানে বহু সুন্দর তোরণ নির্মিত ছিল‌‌। সেই সব তোরণের ওপর ধ্বজা বা পতাকাও ছিল। পর্বত সকল স্ত্রী পুত্রকন্যা সহ মানব রূপ ধারণ করে পর্বতরাজ হিমালয়ের নানা কাজে এসে তারা সহায়তা করতে লাগলেন। অন্যদিকে পার্বতীও বিবাহকালীন বেশভূষায় সজ্জিত হলেন। তিনি দেবার্চনা ও বিবাহ কার্যের নানা উপকরণ সংগ্রহ করে বরকে নিয়ে আসবার জন্য গন্ধমাদন পর্বতকে পাঠালেন অন্যদিকে বিয়ের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে বরের আগমনের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন হিমালয়। এমন সময় দেবাদিদেব মহাদেব সেখানে সদলবলে উপস্থিত হলে বর বেশী দেবাদিদেব মহাদেবকে দেখে হিমালয়রাজ মনে মনে বললেন,' আজ আমি ধন্য হলাম'। এরপর মেনকা দেবাদিদেব মহাদেবকে সেখানে দেখবার জন্য উপস্থিত হলেন তিনি সমস্ত দেবতাদেরকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বিস্ময় অভিভূত হয়ে বললেন শিবের অনুগামী সকল দেবতা যদি এত দেখতে সুন্দর হয় তাহলে না জানি শিব কত সুন্দর দেখতে হবে। তিনি প্রথমে ইন্দ্রের রূপ শোভা এবং সূর্যের শোভা দেখে ভাবলেন তারাই রুদ্র কিন্তু পরে তিনি জানতে পারলেন এঁরা কেউই শিব নন। এরপর মেনকা বিষ্ণুকে দেখে ভাবলেন ইনি শিব। কিন্তু নারদ তাঁকে বললেন ইনিও শিব নন, শিব এর প্রধান। মেনকা তখন তার কন্যার সৌভাগ্যের কথা চিন্তা করে অবাক হলেন, এই সকল পরম তেজস্বী রূপবান দেবতাদের স্বামীকে স্বামী হিসেবে লাভ করবেন তার কন্যা। না জানি তিনি কত সুন্দর দেখতে! এই সময় দেবাদিদেব মহাদেব সেখানে এসে উপস্থিত হলে নারদ বললেন এই যে রুদ্র দেব শিব আসছেন। ইনি সাক্ষাৎ শিব। 

মেনকা দেখলেন শিবের পাঁচটা মুখ, তিনটে নেত্র ও ভস্ম মাখা দেহগাত্র। তার পরিধানে চর্ম এবং বৃষের উপর আরোহন করে আছেন তিনি। তার মাথায় জটা সর্প ভূষণ হাতে পিনাক। যতসব ভীষণ দর্শন ভূত-প্রেত হচ্ছে তার অনুচর। শিবের যে রূপ মেনকা মনে মনে কল্পনা করেছিলেন তা দেখতে না পেয়ে তিনি অতীব হতাশ হলেন। তিনি ভেবেছিলেন যিনি সকল দেবতার আদি এবং তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তিনি নিশ্চয়ই অতীব সুন্দর হবেন এবং ভুবন ভুলানো রূপ হবে তার কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেবকে দেখে তিনি,'হায় পার্বতী এ কি হল!' এই বলে বিলাপ করতে করতে মূর্ছিতা ও জ্ঞানশূন্যা হয়ে পড়লেন। তিনি বুঝতেই পারেননি দেবাদিদেব মহাদেব তাকে এই রূপ দেখিয়ে আসলে তাঁর সঙ্গে ছলনা করেছেন।

এরপর শিবের ইচ্ছা ও চেষ্টায় মেনকা জ্ঞান ফিরে পেলেন। তিনি চৈতন্য লাভ করলেও নানা প্রকার খেদোক্তি করে বিলাপ করতে লাগলেন তিনি বললেন, অরুন্ধতী সহ যে সকল ঋষিগণ শিবের সঙ্গে আমার কন্যার বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন আজ তারা কোথায়? অযথা ওদের দোষ দিয়ে লাভ কী যত দোষ আমার কন্যার‌ই। কত সব সুন্দর সুন্দর দেবতা থাকতে কেন সে এই কুরূপ বরকে পতি‌রূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিল? এখন সে তার সেই তপস্যার দুঃখময় ফল ভোগ করুক।

এরপর তিনি দেবর্ষি নারদকে তিরস্কার করতে শুরু করলেন এবং ক্ষোভের সঙ্গে নিজের কন্যা পার্বতীকে বললেন, পার্বতী তুই এ কি করলি! আজ তোকেও ধিক তোর চরিত্রকেও ধিক! তোর তপস্যাকেও ধিক তোর কুলেও ধিক! আজ সকলেই তুচ্ছ করে ফেললি গৃহ দগ্ধ হয়ে যাক। আমার মৃত্যু হোক। পর্বতরাজ হিমালয় বা কেন আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাচ্ছে না ঋষিগণ‌ই বা কেন এই হতভাগিনীর মুখ দেখছেন? আমার এমন সন্তান হল কেন? আজ আমি তোর শিরশ্ছেদ করব অথবা দেহত্যাগ করব এখন আমি কোথায় যাই কি করি? আমার জীবনে ব্যর্থ হল! 

এইভাবে বিলাপ করতে করতে এক নিবিড়তম দুঃখ ও হতাশার ভার সহ্য না করতে পেরে ভূমির ওপর পড়ে গেলেন মেনকা‌। এমন সময় ব্রহ্মা সেখানে উপস্থিত হলেন! পর্বতরাজ হিমালয় মেনকার কথা শুনে সব কিছু জানতে পেরে তার কাছে আর এলেন না। তখন নারদ মেনকাকে বললেন শিবের যথার্থ রূপ তুমি এখনও দেখোনি সেই রূপের কথা এখনও জানতে পারনি। মেনকা বললেন,থাক তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না।

ব্রহ্মা ও নারদকে মেনকা বললেন আপনারা কেন বৃথা শিবের রূপের বর্ণনা করছেন? আমি শিবের যে রূপ স্বচক্ষে দেখেছি তার তুলনা নেই। আপনাদের আর কিছু বলতে হবে না। আপনারা পার্বতীকে হরণ করুন শিবের হাতে তাকে দান করবেন না। এরপর ইন্দ্রাদি লোক পালগন এসে উপস্থিত হয়ে শিবের গুণ বর্ণনা করতে শুরু করলেন তারা বললেন, ওই শিব সাক্ষাৎ ভগবান। পরম দুঃখনাশক। আজ কৃপা বলে তুমি সেই ভগবান শঙ্কর ও পার্বতীকে দর্শন করলে, কৃপা ছাড়া তাদের দর্শন লাভ সম্ভব নয় কারও পক্ষে। কিন্তু এতসব কথা শুনেও শান্ত হলেন না মেনকা। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন শিবের যে রূপ সেই শিবের গুণগান সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। উপরন্তু তার মনের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছিল। তিনি ইন্দ্রাদি লোকপাল গণকে বললেন, আপনারা পার্বতীকে হরণ করে নিয়ে যান কিন্তু কুরূপ শিবের হাতে তাকে দেওয়া যাবে না। এইসব কথা শুনে সপ্তর্ষিগণ সেখানে এলেন, তারা বললেন, হে দেবী আমরা মধ্যস্থতা করার জন্য এসেছি। যে কাজ নীতিবিরুদ্ধ আমরা ঋষি হয়ে কীরূপে অনুমোদন করব? ভগবান শংকরের দর্শনই আমাদের পরম লাভ সেই ভগবান শিব আপনাদের দ্বারে আগমন করেছেন এর থেকে মঙ্গলজনক ও সৌভাগ্যের ব্যাপার আর কী হতে পারে? 

সপ্তর্ষিদের কথা শুনে মেনকা ঘৃণা প্রকাশ করে বললেন, আজ আমি অস্ত্র দ্বারা আমার কন্যার মাথা কেটে ফেলব। তবুও শিবের হাতে তাকে সম্প্রদান করব না।

এরপর হিমালয় এসে মেনকাকে বললেন, প্রিয়ে কেন তুমি বৃথা দুঃখে কাতর হচ্ছ? এত দুঃখের কী আছে! আমি জানি শিব জগতের পালনকর্তা। সকল নিগ্রহ অনুগ্রহের কর্তা। সকল সুখ-দুঃখের বিধাতা। তিনি সমুদয় জগতের পুজ্য। অতএব দুঃখ পরিত্যাগ করে কর্তব্য কাজ সম্পন্ন করো। কিন্তু স্বামী হিমালয়ের কথা শুনেও মেনকা কিছু মাত্র শান্ত হলেন না তার মনের ক্ষোভ এতটুকু কমল না। বরং তিনি ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলেন তিনি রেগে গিয়ে বললেন, আমার কথা শোন গিরিরাজ ঐ শিবের হাতে কন্যাকে দান না করে তার গলবন্ধন করে তাকে পর্বত চূড়া থেকে সাগরে নিক্ষেপ করো। আমার কথা না শুনে যদি কন্যাকে শিবের হাতে দান করো তাহলে আমি অবশ্যই দেহত্যাগ করব জানবে।

 এরপর স্বয়ং পার্বতী মেনকার কাছে এসে বললেন মাতা বিপরীত বুদ্ধি এসে আপনাকে আশ্রয় করেছে। ধর্মকে অবলম্বন করে চলেও কেন আজ আপনি ধর্মকে পরিত্যাগ করছেন? ওই শিব‌ই স্থাবর ও জঙ্ঘম জগতের কারণ। উনিই শংকর, উনি শম্ভু, উনি দেবগণের প্রভু।‌ উনি ঈশ্বর উনি সকল জীবের আশ্রয়। উনি পালক এবং সংহার কর্তা। ওই দেব‌ই সকলের আদি এবং সনাতন। অন্যান্য যে সকল দেবগণকে দেখছেন তারা শিবের কিঙ্কর মাত্র তার অপেক্ষা আর কে বড় আছে বলুন? অতএব আর পরিতাপ করবেন না দুঃখ ত্যাগ করে শিবের হাতেই আমাকে দান করুন যদি তা না করেন তাহলে আমি অন্য কোন বরকে পতি রুপে বরণ করবো না। সিংহের ভোজ্য কখনই শৃগালের ভোগ্য হবে না। আমি সত্য করে বলছি আমি কায়মনোবাক্যে সেই শিবকেই পতি রূপে বরণ করেছি। পার্বতীর এই কথা শুনে ক্রোধে অগ্নিমূর্তি হয়ে উঠলেন মেনকা। তিনিই তাকে ধরে তার ওপর কিল চড় ঘুসি মারতে লাগলেন। নখ দিয়ে তার দেহগাত্র ছিঁড়ে দিতে লাগলেন। তখন নারদ প্রভৃতি ঋষিগণ পার্বতীকে মেনকার হাত থেকে ছাড়িয়ে দূরে নিয়ে গেলেন। 

মেনকা তখন রোষ ভরে বলতে লাগলেন, এই কন্যাকে নিয়ে আমি কি করবো? একে কি কোন না কোন ভাবে বধ করব না কি আমি নিজেই কূপের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ ত্যাগ করব ও কেন অযোগ্য পাত্রকে মনে মনে গ্রহণ করলো। কে ওই শিব? তার রূপ গুণ কি আছে? কে তার পিতা-মাতা? কি তার বংশ? তার জ্ঞান-বিদ্যা, গৃহ , ধন, রূপ গুণ কিছুই নেই যা দেখে তাকে আমরা কন্যাদান করতে পারি।

এরপর স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এসে মেনকাকে শিব তত্ত্ব বোঝাতে শুরু করলেন, তিনি বললেন, আমরা সকলেই বিরুদ্ধ কথা বলছি আর একমাত্র তুমিই শুভ কথা বলছো? তা কী করে হয়?আসলে তুমি শিব কী বস্তু তা জানো না। শিবই স্বরূপ অর্থাৎ তার দেহ হাত,পা প্রভৃতি সকল অঙ্গ‌ই তার আছে আবার তিনি অরূপ, তার কোনও প্রকৃত রূপ নেই। তিনি অমর,সর্বান্তর্যামী,তিনি সর্বত্র সত্ত্বঞ্জানময়, তিনি অজেয়। তিনি সর্বত্র‌ই বিরাজ করেন‌। শিব নির্গুণ ও সগুণ,তিনি মূল কারণ তিনি প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই ব্যাপ্য এবং ব্যাপ্য জগতের ব্যাপক, তার থেকেই বেদ চতুষ্টয় উৎপন্ন হয়েছে। তার থেকেই দেবগণ ও স্থাবর ও জঙ্গম যা কিছু বিশ্বে দেখা যায় সবই সৃষ্টি হয়েছে। শিব‌ই হলেন ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান। এই জগত শিবময় এবং শিব সর্বময়। শিব‌ই হচ্ছে এই জগতের কারণ ও এ জগতের কার্য। যতদিন না মানুষের প্রকৃত জ্ঞান না হয় ততদিন কার্যকারণের ভেদ মন থেকে দূর হয় না। প্রকৃত জ্ঞানের উদয় হলেই কার্যকারণ সব এক হয়ে যায়। কোন ভেদ জ্ঞান থাকে না। তখন এ জগতের সব কিছুই শিবময় মনে হয়। হে দেবী তুমি শিব তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করো, যে শিব এই জগতের সব কিছুরই কারণ তিনি নির্গুণ ও নিরাকার তার আবার রূপ গুণ কী? তিনি শুধু লোকহিতেদের জন্যই সগুণ ও বিবিধ রূপ ধারণ করেছেন।- ভগবান নারায়ণের মুখ থেকে এই সকল কথা শুনে মেনকার মধ্যে ভেদ জ্ঞান কিছুটা দূর হলো তখন শিব ভক্তের প্রতি দয়াবশত তার সুন্দর ও শোভন রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। নারদ তখন মেনকাকে শিবকে একবার দেখার জন্য অনুরোধ করলেন।

নারদের কথায় মেনকা দেখলেন শিবের রূপ কোটি সূর্যের মতো উজ্জ্বল। তার তিনটি নেত্র তার অপরূপ দেহ সৌন্দর্যকেই প্রকাশ করছে। তার মাথায় মুকুট ও বিভিন্ন অঙ্গে বিচিত্র অলংকার শোভা পাচ্ছে। স্বয়ং সূর্যদেব তার মস্তকে ছত্র ধারণ করে আছেন চন্দ্র ব্যজন করে আছেন। অষ্টসিদ্ধি তার সামনে নৃত্য করছে। গঙ্গা-যমুনা চামর ধারণ করে আছেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও ইন্দ্রাদি দেবগণ উত্তম বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে তার জয়ধ্বনি করতে করতে বিচরণ করে বেড়াচ্ছেন তার সামনে। সমুদ্র নদনদী পর্বত প্রভৃতির অধিষ্ঠাত্রীগণ নানা ভূষণে বিভূষিত হয়ে তার সামনে বিরাজ করছে ভগবান শিবের সেই রূপ ও ঐশ্বর্য বর্ণনা করার সাধ্য কারোর নেই। শিবের এই অমৃত রূগ সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্য দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মেনকা। এরপর তিনি নিজের কন্যার প্রশংসা করতে লাগলেন তিনি আপন মনে বলতে লাগলেন, দেবগণ ঋষিগণ শিবের যে রূপ বর্ণনা করেছিলেন শিব সত্যি অবিকল সেই রূপের অধিকারী। অতএব এই পুরুষকেও যে আমার কন্যা বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছে ধন্য সেই কন্যা পার্বতী, মেনকা কিছুক্ষণ আগে শিবের প্রতি বিরূপ হয়ে যা কিছু বলেছিলেন এবং যা কিছু করেছিলেন তার জন্য লজ্জিত হলেন। অন্যদিকে দেবাদিদেব মহাদেব ও মেনকাকে তার কুরূপ দেখিয়ে ছলনা করার জন্য দরজার প্রান্তে লজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

এরপর যেখানে যত স্ত্রীগণ ছিলেন প্রত্যেকেই নিজের নিজের কাজ ফেলে দিয়ে দৌড় লাগালেন শিবকে দেখার জন্য।সকলে বলাবলি করতে লাগলেন,কি মনোহর রূপ!এঁর দর্শনেও সুখ লাভ হয়। আজ এই হিমালয়বাসীদের নয়ন সফল হল। যে জন সর্বপাপ নাশক এই শিবকে দর্শন করেছে তার‌ই জন্ম সার্থক হয়েছে‌। এই পার্বতী সত্যি ধন্য। তার তপস্যা সফল হয়েছে। লক্ষী যেমন নারায়ণকে পতিরূপে লাভ করেছেন,পার্বতীও তেমনি হরকে লাভ করে শোভা পাচ্ছেন। এ যেন মনিকাঞ্চন যোগ।- এইভাবে স্ত্রীগণ বলতে শুরু করলেন। 

এরপর বিবাহ শুরু হল বিষ্ণু প্রভৃতি দেবগন যদি দেবাদিদেব মহাদেবকে কেউ কৌতুক করে এই ভেবে সেখানে অবস্থান করতে থাকলেন এমন সময় মেনকা নতুন বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে শিবকে পূজা করলেন পরে শিবের পিছনে গিয়ে তার গলদেশ বস্ত্র লগ্ন করে টানতে লাগলেন কিন্তু দেবতাদের ভয়ে কিছুক্ষণ পরেই হাসতে হাসতে সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর ব্রহ্মা ঋষিগণের সঙ্গে বিবাহ বেদীতে উপস্থিত হলেন তখন শিব ও সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। কিছুক্ষণ পর হিমালয় ও হিমালয় পত্নীসহ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন বিবাহের কার্য শুরু হলো। বিধি মত কন্যা সম্প্রদান হলো। বিবাহবেদিকার অগ্নিসংস্থাপন করা হলো। যথাবিহিত ভাবে বিবাহ কার্য সম্পন্ন হলো ব্রহ্মার দ্বারা। এরপর হরপার্বতীর বিয়ে সমাপ্ত হলে দেবগণ পার্বতীকে জগত মাতা রূপে স্বীকার করে প্রণাম করলেন। বিবাহ সমাপ্তে শিব পার্বতীকে নিয়ে কৈলাসের পথে যাত্রা শুরু করলেন।

এই বিবাহ পর্ব থেকে এই শিক্ষা পাওয়া গেল যে,বিবাহে যত‌ই বাধা আসুক না কেন বিধি নির্ধারিত বিয়ে যার সঙ্গে স্থির করা আছে তার সঙ্গেই হবে। কন্যার মাতা এবং পিতার অমত ও মত হয়ে বদলে যেতে পারে যদি বিবাহ বিধি নির্ধারিত হয়।

বিভিন্ন বিষয়ে মনোগ্রাহী ফিচার আর্টিকেলের জন্য আপনার ঠিকানা www.jiyobangla.com

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...