ভারতে ভূমি এলাকা এবং এর বিস্তৃতি বিবেচনা করে, ক্যারাভান ও ক্যারাভ্যান পার্কগুলি পর্যটনের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ নতুন দিক খুলে দিতে পারে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ডোমেস্টিক টুরিস্টদেরকেই আশা করা হচ্ছে যারা এই বিষয়ে ইচ্ছাপ্রকাশ করবেন। বর্তমানে ইকো, অ্যাডভেঞ্চার, ওয়াইল্ড লাইফ এবং তীর্থযাত্রা পর্যটনের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। আর এরই অন্তর্ভুক্ত হল প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থাৎ কোনো বন, মরুভূমি বা নদীতট পরিদর্শন এবং থাকা। পর্যটনস্থলগুলিতে বিশেষত প্রত্যন্ত এলাকায় এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেখানে স্থায়ী থাকার জায়গা নির্মাণ সম্ভবপর নয় সেখানে এই ক্যারাভ্যান খুবই কার্যকর। ক্যারাভ্যান পর্যটন ভ্রমনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে পারে ট্রিপের গুণমান এবং নিরাপত্তা বজায় রেখে। ক্যারাভ্যান টুরিজম তরুণ থেকে শুরু করে সিনিয়র নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকসহ সমস্ত ধরণের মানুষকেই আকৃষ্ট করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক কিংবা ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, সুইৎজারল্যান্ড, দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে অজস্র পর্যটক ক্যারাভ্যানে চড়েই দূরদূরান্তে বছরভর ভ্রমণে যাচ্ছেন। বিদেশের মাটিতে এর প্রচলন অনেক আগে থেকে হলেও এটি কিন্তু ইতিমধ্যেই ভারতেও যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে।
মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, কর্ণাটক ইত্যাদি জায়গায় এই পর্যটনব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ন্যাশনাল পারমিটও রয়েছে, তিনটি বিভিন্ন প্যাকেজের ক্যারাভ্যান রয়েছে সেখানে। মধ্যপ্রদেশ প্রথম 'হলিডে অল হুইলস' নাম দিয়ে ক্যারাভ্যান ট্যুরিজম চালু করে। কর্নাটক ও কেরালায় একাধিক প্যাকেজের ক্যারাভ্যান ট্যুরিজম চালু হয়েছে তার পরে। এবার এই পর্যটন ব্যবস্থা আসতে চলেছে বাংলাতেও। ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স সহ রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন সার্কিটে চালু হতে চলেছে এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থাটি।
এখন থেকে বাংলার মানুষও তাদের রোমাঞ্চের সাধ ও স্বাদ দুইই পূরণ করতে সক্ষম হবেন এই ক্যারাভ্যান টুরিজম এর সাহায্যে। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, 'ক্যারাভ্যান ট্যুরিজম নিয়ে পর্যটন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। কোন কোন জায়গায়, কী ভাবে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট দিন এখনই না ঠিক হলেও এই বছর দুর্গাপুজোর পর ক্যারাভ্যান ট্যুরিজম চালু করতে পারব বলে আশা করা যায়।' তবে রাজ্যের এই ক্যারাভ্যান টুরিজমে কিন্তু বিদেশের বা দেশের কোনটারই অনুকরণ করা হবে না, পরিবর্তে রাজ্যের মানুষের অভ্যাস, রুচি, সংস্কৃতি ইত্যাদিকে মাথায় রেখে তৈরী হবে বাংলার ক্যারাভ্যানগুলি। প্রতিযোগিতার বাজারে এই ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পর্যটন দপ্তর ইতিমধ্যে হাউজ বোটে পর্যটন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে হাউজ বোট পর্যটনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা।
এই ক্যারাভ্যানগুলির মধ্যে থাকবে পর্যটনের জন্য যাবতীয় সামগ্রী, যেহেতু পর্যটকরা এক্ষেত্রে যাত্রী এবং বসবাসকারী দুটোই তাই এই ক্যারাভ্যানকে ট্রান্সপোর্ট এবং হোটেল দুটোর ভূমিকাই সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হয়। মৌলিক বা সাধারণ সুবিধাগুলি যেমন ফোল্ডিং বেড যাকে সোফা ও বেড দুভাবেই ব্যবহার করা যায়, ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার সঙ্গে থাকা রেফ্রিজারেটর, স্টোভ অথবা গ্রিল, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। শৌচালয় রয়েছে ভ্যানের ভিতরেই। রয়েছে প্রয়োজনে হিটার অথবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের বন্দোবস্ত। এছাড়া রয়েছে সিনেমা, গান ইত্যাদি উপভোগের জন্য নানারকম বিনোদনের ব্যবস্থা। এক কথায় ভ্রাম্যমান বাড়ি বলে যাকে। আর এই ভ্রাম্যমান বাড়ি থুড়ি গাড়িতে চড়েই পর্যটকরা চলে যেতে পারেন পাহাড়ের কোলে, সমুদ্রের কিনারে| সবুজের হাতছানি উপভোগ করতে জঙ্গলেও চলে যেতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। যেখানে তাঁরা ক্যারাভ্যান থামিয়ে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সাথে নিজের ইচ্ছামতো একাত্ম হয়ে যেতে পারেন। দৃশ্যগুলি উপভোগ করতে পারেন।এই অভিনব ব্যবস্থা যে সহজেই মন কেড়ে নেবে বাংলার ভ্রমণপিপাসুদের তা নিশ্চিত।