দিন গুনতে গুনতে ক্রমশ অভ্যাস হয়ে যাচ্ছিল একটি ঘরের মধ্যে থাকা।বাড়ির মধ্যে ঘুরে ফিরে আবার বসি এলোমেলো করা বিছানায়। বই টেনে নিই অথবা ফোন। কখনও অলস চোখে বাইরে তাকাই। কিছুই দেখিনা আসলে।
বড়ো ক্লান্ত,অবসন্ন দীর্ঘ দিন। অনন্ত রাত্রি।
জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছবার সময় কমে আসছে। হৃদয়ের মণিকোঠায় রয়ে গেছে, একমুঠো তারা, নদী একমুঠো, একমুঠো আকাশ , সমুদ্র তরঙ্গ একমুঠো,পাহাড়ী মেঘ কুয়াশা একমুঠো,স্বপ্ন একমুঠো, হাতের 'পরে হাত নামানো শিকড়ের মত একমুঠো বিশ্বাস, গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা একমুঠো প্রার্থনা। মেঠো বন্ধুর দোতারায় মালকোষ রাগ, বাঁশিতে করুণ বেহাগ। অঝোর শ্রাবণ, ঘুমপরী, ছাদের এককোনায় পড়ে থাকা অবহেলার সাদা টগর, আর ছোট্টবেলার এক্কা-দোক্কা খেলার দাগকাটা স্কুলমাঠ সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, “এসো,বেরিয়ে এসো।'
আমি আগল খুলে চৌকাঠ পার করি অবশেষে।
অসুখের সময় আমার যে ছেলে সবসময় সঙ্গে থেকেছে, গরম স্যুপ নিয়ে গেছে রোজ হাসপাতালে, সে আমাকে মাসীমণি ব'লে ডাকে, তার মা যে আমার বোন। সেই আমাদের দীর্ঘপথ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল মন্দারমণি।
আমরা দুটি দিন ভুলে গেলাম অসুখের আতঙ্ক। বসে বসে অবিরাম ঢেউ দেখলাম। তাজপুরে সমুদ্রতটে গরম গরম রান্না করা ডাল, ভাত, আলুভাজা, দিশি মুরগীর ঝোল খেলাম। অমৃত সমান তার স্বাদ।
মন্দারমণি বড়ো শান্ত, নির্জন।
শুধু সমুদ্রের গর্জন মনে করিয়ে দেয়, সে আছে প্রবলভাবে। আমরা এটুকু যেন স্মরণে রাখি।