চারিদিকে অট্টহাসি। ত্রাহি ত্রাহি রব। এক অসুরের অত্যাচারে দেবতারা স্বর্গ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সকলে উপস্থিত হয়েছেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিবের দরবারে। এই বিভীষিকা থেকে রেহাই পেতে তাঁরা মরিয়া। মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ-মর্ত্যে মুনি- ঋষি থেকে শুরু করে দেবতা সবাই অতিষ্ঠ। মহিষাসুর আবার পুরুষ দ্বারা বধ্য নয়। ব্রহ্মার আশীর্বাদে সে একপ্রকার অমর।
এই ঘটনা প্রতি বছর মহালয়ার দিন টিভির পর্দায় আমরা সকলেই কম-বেশি দেখে থাকি। ছোট থেকে বয়স্ক সবাই মহালয়ার এই প্রভাতী অনুষ্ঠান মোটামুটি দেখতে ভালোবাসি। রেডিওতে ভোরের দেবী বন্দনা তো বাঙালির আইডেন্টিটি হয়ে গেছে। দেবতাদের বরে ধীরে ধীরে দেবী দুর্গার হয়ে ওঠা আমরা তাড়িয়ে তাড়িয়ে অনুভব করি।
দেবীর গড়ে ওঠার পিছনে কোন দেবতা কী কী দিয়েছিলেন মনে আছে? বা দুর্গার দশ হাতে কী কী অস্ত্র আছে বা কারা দিয়েছেন? ব্রহ্মা অসুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহাদেব ও অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হলেন। দেবতা বিষ্ণু সকল দেবতাদের নিজ তেজ থেকে একটি নারীর সৃষ্টির পরামর্শ দিলেন।
দেবতা বিষ্ণুর পরামর্শে দেবতারা নিজেদের তেজ এক জায়গায় একত্র করলেন। মহাদেবের তেজ থেকে সৃষ্টি হল মুখ। যমের তেজ থেকে চুল। দেবতা বিষ্ণুর তেজে সৃষ্টি হল বাহু। চন্দ্রের তেজে স্তন। ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ। বরুণের তেজে জঙ্ঘা। পৃথিবীর তেজে নিতম্ব। ব্রহ্মার তেজে পদযুগল। সূর্যের তেজে পায়ের আঙুল। বসুগণের তেজে হাতের আঙুল। কুবেরের তেজে নাসিকা। প্রজাপতি, অগ্নি, সন্ধ্যা এবং বায়ুর তেজে যথাক্রমে দাঁত, ত্রিনয়ন, ভ্রূ এবং কান তৈরি হয়।
দেবী সৃষ্টি হওয়ার পর রণাঙ্গনা রূপে তাঁকে সাজানো হয়। মহাদেব তাঁর হাতে তুলে দিলেন ত্রিশূল। তমঃ, রজঃ ও সত্যের ব্যাখ্যা করে ত্রিশূলের ত্রিফলা। গদা দিয়েছিলেন যমরাজ। আনুগত্য, ভালোবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
দেবরাজ ইন্দ্র দেবীকে দিলেন বজ্রাস্ত্র। মায়ের হাতের এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। দুর্গার গলায় যে শেষ নাগ দেখা যায় তা দিয়েছিলেন নাগহার। বিশুদ্ধ চেতনার চিহ্ন বহন করে সাপ। অগ্নি দিলেন অগ্নিদেব। অগ্নি দেয় জ্ঞান ও বিদ্যা। শঙ্খ জীব জগতে প্রাণের সৃষ্টি করে। তা দেবীকে দিলেন বরুণ।
দেবীর হাতে চক্রের অর্থ হল সমস্ত সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান করছেন তিনি। এই চক্র তাঁকে দিয়েছিলেন বিষ্ণু। তীর ও ধনুক তুলে দিয়েছিলেন বায়ু। পদ্ম দিলেন ব্রহ্মা। তরোয়াল হল বুদ্ধির প্রতীক।
পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, ঊর্ধ্ব এবং অধঃ এই দশদিক হল দেবী দুর্গার দশহাতের প্রতীক। অর্থাৎ দশ দিক থেকেই তিনি মহিষাসুরকে প্রতি আক্রমণ করেছিলেন। মানব জাতির অশুভ বিনাশ করার জন্যই দুর্গতিনাশিনীর সৃষ্টি।