অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে মানুষের গবেষণা বহু দিনের। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদও। নানা গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত খুঁজে চলেছে, চাঁদ মানব বসবাসের কতটা উপযোগী। এই গবেষণায় চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় আরও অনেক তথ্য উঠে আসছে যা চাঁদে বসবাসের পক্ষে সদর্থক ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, চাঁদে যে পরিমাণ জলের অস্তিত্ব জানা গেছিল, তার চেয়েও বেশি পরিমাণ জল রয়েছে। কাজেই চাঁদে মানুষের বসবাস সহজসাধ্য হতে পারে। প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় চন্দ্রযান-১ মিশন থেকে খনিজবিদ্যার মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা চাঁদের পৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকায় জলের অস্তিত্ব নির্দেশ করে। জানা গেছে, চাঁদের প্রায় সমস্ত অক্ষাংশে জলের অণুর চিহ্ন রয়েছে। সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে এসে কিছু জায়গায় জল শুকিয়ে যেতে পারে কিন্তু সেখানেও জল রয়েছে।
গবেষণার ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে চাঁদে আগত মহাকাশচারীদের জল সরবরাহের জন্য শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলের উপর নির্ভর করতে হবে না। নিরক্ষরেখার কাছাকাছিও তাঁরা জল খুঁজে পেতে পারেন। এর প্রভাবে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী মানব উপস্থিতি এবং মঙ্গল গ্রহের অনুসন্ধান উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ করতে পারে।
জানা গেছে, চাঁদের পৃষ্ঠে জল বহনকারী যে উপাদানগুলি পাওয়া যায়, সেগুলি ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপের ফল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এগুলি ক্রেটারিং এবং আগ্নেয়গিরির কারণে হয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলি কারণে ভূপৃষ্ঠে জল ধারণ করে এমন উপাদানগুলির সরবরাহ হয় এবং এটি হাইড্রেশনের পর্বগুলির সঙ্গে একটি অতি সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক অতীতের দিক তুলে ধরে।
এছাড়াও এই গবেষণা আণবিক জল (H2O) এবং হাইড্রক্সিল (OH) এর মধ্যে পার্থক্যকে চিহ্নিত করে। তবে হাইড্রোক্সিল, উল্কা দ্বারা সৃষ্ট গর্তগুলিতে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে রয়েছে। ফলে বোঝা যায়, ভূগর্ভস্থ জল চন্দ্র শিলা থেকে বাষ্পীভূত হতে পারে যখন সেটি পৃষ্ঠের সংস্পর্শে আসে।
পূর্বে ১৯৭০ সালে অ্যাপোলো মিশন একটি গবেষণা চালিয়েছিল। সেই সময় চাঁদের নমুনা ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল, যে চাঁদে যদি জল থাকে তবে তা সৌর বিকিরণের প্রভাবে হিমায়িত হবে এবং পচে যাবে। কিন্তু হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন সহজেই চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাই চাঁদকে শুষ্ক মহাকাশীয় বস্তু হিসাবে গণনা করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান চালিয়ে গেছে এবং তার ফলে চাঁদের জমিতে জলের অস্তিত্বের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের রজার ক্লার্ক। তিনি মতে চাঁদে জলের উপস্থিতি শুধুমাত্র চাঁদের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্যই নয়, ভবিষ্যতের মানবিক ফ্লাইটের জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।