ছ বছর বয়সে হারিয়েছিলেন চোখের আলো। ব্রেইল এর সাহায্য ছাড়াই জীবনের পথে হাঁটবেন ঠিক করেছিলেন। সে ভাবনায় তিনি সফল। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে আজ আইন পড়ান মউশ্রী বশিষ্ঠ। হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা। হঠাৎ-ই বিরল রোগের কারণে চোখে নেমে আসে অন্ধত্ব। চিকিৎসকরা একরকম বলেই দিয়েছিলেন তাঁর দ্বারা আর সম্ভব নয় পড়াশোনা।
কিন্তু হাল ছাড়েননি মউশ্রী। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেন। আইনে পিএইচডিও সম্পূর্ণ করেন।
২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের সেরা দৃষ্টিহীন মহিলা কর্মীর পুরস্কার পান তিনি।
হাবিন গ্রিমা। পেশায় আইনজীবী। প্রতিবন্ধী মানুষদের অধিকার রক্ষার জন্য তিনি আইনি সংগ্রাম করেন। হোয়াইট হাউসে বিতর্ক সভার চ্যাম্পিয়ন। নাচের ছন্দে বলরুম মাতাতেও তাঁর জুড়ি নেই। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি কিন্তু জন্ম থেকেই অন্ধ, এবং মূক। ইথিওপিয়ার অভিবাসীর বড়ো হয়ে ওঠা ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। হাবিন পাবলিক স্কুলে পড়তেন। সেখানে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ , ব্রেইল এবং ইংরেজির মাধ্যমে তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতেন। দুটি কি-বোর্ড ব্যবহার করেন তিনি। এবং পোষ্য সারমেয়। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সারমেয় হাবিনের নিত্য সহচর।
এভাবেই তিনি পা রাখেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন। হাভার্ড কলেজের প্রথম প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট তিনি।
সম্প্রতি নিজের জীবন নিয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। হাবিন বলেন, ‘ বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ হলেই তাকে কাজে অক্ষম ভেবে নিতে অভ্যস্থ মানুষ। এটা বন্ধ না হলে মূল স্রোতের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়।’
মউশ্রী এবং হাবিন দুজনেই পৃথিবীর দুই প্রান্তের বাসিন্দা। কিন্তু তাঁদের জীবনের লড়াইটা একই। বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের চলার পথে শারীরিক বাধা একমাত্র বাঁধা নয়। সমাজও প্রতি মুহূর্তে বাধার সৃষ্টি করছে। তাঁদের লড়াই আরও কঠিন হয়ে যায় সামাজিক প্রতিকূলতার কাছে। তাঁরা কিন্তু ‘আর পাঁচ জনে’র মতোই নিজেদের বাধা কাটিয়ে এগিয়ে চলতে চেয়েছেন। নিজেদের বাধা অতিক্রমের রাস্তা বের করেছেন নিজেরাই। সেভাবেই এসেছে সাফল্য।