ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কলকাতার অন্যতম হেরিটেজ আকর্ষণ। দেশ বিদেশ থেকে নানা ভাষার লোক আসেন এই স্থানটি নিজ চোখে একবার দেখে নিতে। এমন ক্ষেত্রে ট্যুর গাইডের পেশাও বেশ চাহিদাপূর্ণ। এবারে ট্যুর গাইড নির্বাচনে অবসরপ্রাপ্তদের সুযোগ করে দিচ্ছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত ষাটোর্দ্ধ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জানা গেল ট্যুর গাইড হিসেবে তাঁর উৎসাহের কথা।
অবসর প্রাপ্ত উৎপল রায় জানালেন, ইতিহাস নিয়ে কখনো তাঁর উৎসাহ না থাকলেও এখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলো যেমন অবাক হয়ে ইতিহাসের গল্প শোনে তাতে বেশ গর্ব বোধ হয় তাঁর। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ট্যুর গাইডের কাজ উৎপল বাবুকে ইতিহাস ভালোবাসতে শিখিয়েছে। কয়েক বছর আগে যখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে 'ভলান্টিয়ার ট্যুর গাইড' পদের জন্য প্রার্থীর আবেদনপত্র চাওয়া হয় তখন আবেদন করেন ষাটোর্দ্ধ ইঞ্জিনিয়ার বাবু। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে কিভাবে সময় কাটাবেন এই ভেবেই আবেদন করেছিলেন তিনি। বাছাইপর্বে নির্বাচিত হয়ে নতুন পেশায় ইতিহাস জানবার প্রতি যেমন ভালোবাসা বেড়েছে উৎপল বাবুর তেমন বিভিন্ন বয়সীদের ইতিহাস জানিয়েও বেশ সময় কাটছে তাঁর। এমন আরো অবসর প্রাপ্তরা তাঁর সাথে কাজ করছেন 'ভলান্টিয়ার ট্যুর গাইড' হিসেবে।
বর্তমানে ১২ জন 'ভলান্টিয়ার ট্যুর গাইড কাজ করছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল -এ। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেল এই পদে দ্বিতীয় দফাতে আবারো আবেদন পত্রের জন্য আহ্বান জানানো হবে শীঘ্রই। জ্ঞান আর অভিজ্ঞতায় দক্ষ এমন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের নিয়ে ইতিহাস আর শহরের ঐতিহ্য প্রচারের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। এই উদ্যোগ বেশ জনপ্রিয় ও প্রশংসিত হয়েছে বর্তমানে। সাথে রয়েছে সামান্য সাম্মানিকের ব্যবস্থা।
ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে অবসরপ্রাপ্তদের পাশাপাশি শহরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে উৎসাহী এমন কেউও আবেদন করতে পারে ভলান্টিয়ার পদের জন্য।এ ক্ষেত্রে তারা গৃহবধূদেরও এই কাজে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছেন। বিদেশের মিউজিয়াম গুলোতে ট্যুর গাইডের ব্যবস্থা থাকলেও দেশীয় মিউজিয়াম গুলোতে তেমনটা লক্ষ্য করা যায় না। তাই ভিক্টোরিয়ার কর্তৃপক্ষ এই কাজের মাধ্যমে চেয়েছেন শহরবাসীকে শহরের ঐতিহ্য আর গর্বের ভাগিদার করতে, জানালেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর -সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত। 'ভলান্টিয়ার ট্যুর গাইড' হিসেবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে প্রতি সোমবার, যেদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকি ছয়দিন এখানে বেড়াতে আসা টুরিস্টদের জন্য ট্যুর গাইডের ব্যবস্থা থাকে বলে জানা গেছে।
আগামীতে ভিক্টোরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ৫৭ একর বিস্তৃত সবুজের সমারোহ - বৈচিত্রময় গাছ-গাছালি, ঐতিহাসিক মূর্তি নিয়েও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারবে ট্যুর গাইডরা, এমন পরিকল্পনা রয়েছে ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষের। এমন বড় বাগানের বিভিন্ন অংশে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপত্য রয়েছে যা সম্পর্কে অজ্ঞাত সাধারণ জানালেন ভিক্টোরিয়া এডুকেশন ইউনিটের একজন সদস্য। এ বিষয়ে বিশদ প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করা হবে সম্পূর্ণ ভিক্টোরিয়া ট্যুর গাইডের ব্যবস্থা। আর পাঁচটা বাগান থেকে অনেক দিক থেকে ভিন্ন ভিক্টোরিয়ার বাগান, তারই গুরুত্ব তুলে ধরতে উদ্যোগী মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্ত।