শেষ দিনে বিবেকানন্দ

১৬ অগাস্ট ১৮৮৬ ও ৪ জুলাই ১৯০২, মাঝে ব্যবধান দেড় দশক। প্রথম দিন গঙ্গার ওপারে বিলীন হয়েছিলেন গুরু পরম হংসদেব আর দ্বিতীয়দিন এপারে পঞ্চভূতে মিশেছিলেন শিষ্য। মাত্র বিবেকানন্দ দেহত্যাগ করেন ৪ জুলাই ১৯০২, শুক্রবার, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। বেশ কিছুদিন ধরেই বিবেকানন্দের শরীর ভাল যাচ্ছিল না, নানান রোগে জর্জরিত ছিলেন। ১৮৯৪ সালে শিকাগো ধর্মসভায় জগদ্বিখ্যাত ভাষণের পর পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরে অসংখ্য বক্তৃতা করে স্বামীজি দেশে ফেরেন; তখনই তাঁর স্বাস্থ্য ভগ্ন। আমেরিকার চিকিৎসকরা যা ধরতে পারেননি, কলম্বোর চিকিৎসকরা তাঁর রোগনির্ণয় করে ফেললেন, স্বামীজির ডায়াবেটিস হয়েছে।

Swami

বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, স্বামীজির কমবেশি ৩১ ধরনের রোগ ছিল। অনিদ্রা, যকৃৎ ও কিডনির সমস্যা, মাইগ্রেন, হৃদরোগে কিছুই বাদ নেই। রোগের হাত থেকে বাঁচতে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এমনকি কবিরাজী চিকিৎসাও করিয়েছেন। অত্যাধিক চিন্তা, ঠিক মতো খেতে না পারার জন্য তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছিল। স্বামীজি যে এত দ্রুত মহাপ্রয়াণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তা সম্ভবত তিনি ছাড়া শিষ্য ও সঙ্গীদের মধ্যে কেউই বুঝতে পারেননি। স্বামী দেবেন্দ্রানন্দের লেখায় জানা যায়, ১৮৯৮ সালে শৈবতীর্থ অমরনাথে গিয়ে স্বামীজি ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন। সঙ্গী ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা। 

সুগার ছাড়াও স্বামীজির দেহে অ্যালবুমিনের পরিমাণ বেড়েছিল। রবিবার ৯ ডিসেম্বর, ১৯০০ সালে বেলুড় মঠে ফেরা। অনুরাগী জন ফক্সকে চিঠিতে লিখলেন, ‘আমার শরীর দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। মাকে এবং সংসারকে দেখার ভার নেওয়ার জন্য মহিমকে তৈরি হতে হবে। আমি যেকোন সময়ে চলে যেতে পারি’। প্যারিস থেকে প্রিয় গুরুভাই হরি মহারাজকে লিখেছিলেন, ‘আমার কাজ আমি করে দিয়েছি বস। গুরু মহারাজের কাছে ঋণী ছিলাম, প্রাণ বার করে আমি শোধ দিয়েছি।’ স্বামীজির মৃত্যু চিন্তা শুরু, গৌহাটিতে হাঁপানি বাড়ে এবং শিলংয়ে অবস্থা এমন খারাপ হয় যে, কতকগুলো বালিশ একত্র করে বুকে উপর ঠেসে ধরতেন। অ্যালবুমিন বেড়ে শরীর দ্বিগুণ ফুলে গিয়েছিল।

 

৭ মার্চ ১৯০২ বারাণসী থেকে ফিরলেন বেলুড় মঠে। শেষপর্বে শরীর সম্বন্ধে নিয়মিত চিঠি লিখেছেন সিস্টার ক্রিস্টিনকে, তাঁর বক্তব্য—হাঁপানি এবার পোষ মানছে, ডায়াবেটিস ও ব্রাইটস ডিজিজ একেবারেই উধাও। দ্বিতীয় অসুখটি কিডনি সংক্রান্ত। গ্রীষ্মে ঘামাচির আক্রমণ। নভেম্বরে দুটি খারাপ খবর, ডান চোখটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক সময় তিনি সর্দিতে বিছানাবন্দি। এবং হাঁপানির পুনরাগমন। দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন। শেষ কয়েক মাসে চিন্তার কারণ শোথ ও ড্রপসি। গুরুভাইরা একবার ছুটছেন কবিরাজ মহানন্দ সেনগুপ্তর কাছে, আর একবার ডাক্তার সন্ডার্সের কাছে। এরই মধ্যে হাওয়া বদলাবার জন্য আত্মীয়া তথা শিষ্যা মৃণালিনী বসুর কাছে বড় জাগুলিয়ায় গেলেন স্বামীজি। শেষ পর্বে স্বামীজির রোগের তালিকায় নতুন সংযোজন উদরী পেটে জল হওয়া। শেষপর্বে শরীর নিয়ে হতাশ ছিলেন স্বামীজি। জুন মাসের শেষের দিকে কবিরাজি চিকিৎসার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে বরাহনগরের খ্যাতনামা ডাক্তার মহেন্দ্রনাথ মজুমদারকে ডাকা হয়।

শ্রী রামকৃষ্ণ বলতেন, নরেন যবে বুঝতে পারবে তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তখন সে নিজেই চলে যাবে। স্বামীজির প্রয়াণের ইঙ্গিত পেয়েছিলেন নিবেদিতাও। জানা যায়, মৃত্যুর মাস চারেক আগে নিবেদিতাকে স্বামীজি জানিয়েছিলেন, আমার যা দেবার ছিল তা দিয়ে ফেলেছি, এখন আমাকে যেতেই হবে। মৃত্যুর ঠিক দুদিন আগে নিবেদিতাকে বেলুড়ে নেমন্তন্ন করেন স্বামীজি। ১৯০২ সালের ২ রা জুলাই, স্বামীজি ও তাঁর নিবেদিতার শেষ সাক্ষাৎ হয়, বেলুড় মঠে। গুরু সে দিন পরম পিতা। শিষ্যা যেনো তাঁর স্নেহের কন্যা। গুরু যত্ন করলেন, ঠিক যেনো যীশুর সেই লাস্ট সাপার। নানা পদ দিয়ে পরম যত্নে নিবেদিতাকে খাওয়ান বিবেকানন্দ। নিবেদিতার হাত ধোয়ার জন্য নিজের হাতে জল ঢেলে দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। নিবেদিতা প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেননি। তিনি অবাক হলে স্বামীজির উত্তর ছিল, তুমি যিশুর কথা পড়োনি? যিশু তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই চমকে গিয়েছিলেন নিবেদিতা। যিশুর এই কাজ তো মৃত্যুর আগে! 

যীশু যেমন ক্রসিফিকেশানের আগে তাঁর শিষ্যদের নিজের হাতে খাইয়েছিলেন, এক্ষেত্রেও তাইই হল। 

সেদিন ছিল একাদশী, স্বামীজি কিছুই খাবেন না। তাই নিবেদিতা নিজে খাওয়ালেন, খাওয়ানোর পরে হাত ধুয়ে মুছিয়ে দিলেন। বিব্রত হয়ে পড়লেন নিবেদিতা, কোথায় তিনি গুরু সেবা করবেন, তা নয় গুরুই উল্টে তাঁর যত্ন পরিচর্চা করছেন। লজ্জিত শিষ্যাকে স্বামীজি শিষ্যার স্বজাতির কথা মনে করালেন। বললেন তোমাদের ওখানেও তো যীশু তাঁর শিষ্যদের খাইয়েছিল। 

এবার বিচলিত নিবেদিতা। যীশু শিষ্যদের সেবা করেছিলেন জীবনের শেষ লগ্নে তবে কী স্বামীজিও....

জোসেফিন ম্যাকলাউডের লেখা থেকে জানা যায়, স্বামীজির মৃত্যুর দুদিন আগে তাঁর স্কুলে একটি বিশেষ বিজ্ঞান পড়ানো উচিত হবে কি না, সেই ব্যাপারে স্বামীজির মতামত নিতে বেলুড়ে গিয়েছিলেন নিবেদিতা। স্বামীজির উত্তর ছিল, তুমি যা করতে চাইছ হয়ত সেটাই ঠিক। তবে কি জান, জাগতিক কোনও কিছুতেই আর মন দিতে পারছি না। আমি এখন মৃত্যুর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছি। এরপর আর গুরু শিষ্যার সাক্ষাতের কথা শোনা যায়নি। তবে তখন থেকেই স্পষ্ট হতে থাকে স্বামীজি আর নেই।

স্বামীজির জীবনের শেষ দিন নিয়ে বহু লেখা প্রকাশিত। ৪ জুলাই সকাল এগারোটা নাগাদ অন্যান্য দিনের মতোই কাজকর্ম চলছিল বেলুড় মঠে। ঠাকুরঘরে ধ্যানে বসেছিলেন স্বামীজি। স্বামীজির তখন শান্ত, ধ্যানপর্ব সমাধা হলে শুরু করলেন গান। সেদিন সকালে বেলুড়ের ঘাটে জেলেদের নৌকা ভিড়েছিল। প্রচুর ইলিশ উঠেছিল। শোনা যায়, ইলিশের ঝাল-ঝোল-অম্বলের মতো পদ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন স্বামীজি। দুপুরের খাওয়ারের পর লাইব্রেরিতে গেলেন, সঙ্গী প্রেমানন্দকে নিয়ে বেড়িয়ে আসেন বেলুড় বাজার পর্যন্ত। মঠে ফিরে সন্ধ্যা সাতটার আরতির পর ফের ধ্যানের ঘরে ঢুকলেন, কিছুক্ষণ পর স্বামীজির ঘর থেকে সাড়া এল, গরম লাগছিল তাঁর। জানলা খুলে দেওয়া হল। সঙ্গী ব্রজেন্দ্র স্বামীজির পা টিপে দিতে শুরু করলেন। এরপর রাত ন’টার পরই সব কিছু বদলে যেতে শুরু করল। স্বামীজির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, জোরে জোরে শ্বাস পড়ছিল; কিন্তু মুখে কথা নেই। 

রাত ৯টা ১০মাথা বালিশ থেকে গড়িয়ে পড়ে গেল দেহ, সব নিস্তব্ধ! মুখে হালকা হাসি লেগে আছে। সন্ন্যাসী গুরুভাইরা মনে করলেন, ভাবসমাধি হয়েছে হয়ত। চলল শ্রীরামকৃষ্ণের নাম গান। আরও কিছুক্ষণ কোন সাড়া না মেলায় বেলুড় থেকে এলেন ডাক্তার মহেন্দ্র মজুমদার, বৈকুন্ঠনাথ সান্যাল। কলকাতায় থাকা স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও সারদানন্দের কাছে খবর গেল, তাঁরাও চলে এলেন। ডাক্তারের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দেহ রাখলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

শুক্রবার ৪ জুলাই ১৯০২ এর ঘটনাক্রম একটু বলি, ওইদিন খুব ভোরে উঠে উপাসনার জন্য মন্দিরে গিয়েছিলেন স্বামীজী। প্রাতরাসে দুধ ও ফল খেলেন। সকলের সঙ্গে হাসি মজা হল, সেদিন গঙ্গার ইলিশ কেনা হল। তারপর মর্নিং ওয়াক। সকাল ৮.৩০, স্বামী প্রেমানন্দকে ঠাকুরের শয়নঘরে তাঁর আসন করে দিয়ে, চারদিকের দরজা বন্ধ করে দিতে বললেন। বেলা ১১টা, ধ্যানভঙ্গের পরে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে স্বামীজি নিজের হাতে ঠাকুরের বিছানা ঝেড়ে দিলেন। ১১.৩০ টার সময়ে আনন্দে করে সকলের সঙ্গে একত্রে মধ্যাহ্নভোজন সারলেন ইলিশ মাছের ঝোল, ভাজা, অম্বল দিয়ে ভাত খেলেন। বললেন, একাদশী করে খিদেটা খুব বেড়েছে, ঘটিবাটিগুলো ছেড়েছি অনেক কষ্টে। দুপুর ১২.৩০তে পনেরো মিনিট ঘুমিয়েই স্বামী প্রেমানন্দকে নিয়ে সঙ্গে স্বামীজি ছুটলেন পড়তে। বললেন, সন্ন্যাসী হয়ে দিবানিদ্রা পাপ, চল পড়ি গিয়ে। বেলা ১.৩০-এ লাইব্রেরি ঘরে সাধু-ব্রহ্মচারীদের পাণিনীর ব্যাকরণ পড়ালেন। বিকেল ৪-তে এক কাপ দুধ খেয়ে বাবুরাম মহারাজকে নিয়ে বেলুড় বাজার পর্যন্ত গেলেন। প্রায় দুমাইল ভ্রমণ করলেন, সে সময় এতটা হাঁটতেন না কিন্তু সেদিন হাঁটলেন। বেদ এবং বেদবিদ্যালয় আলোচনা করলেন। বিকেল ৫টা, স্বামীজি মঠে ফিরলেন। তামাক খেয়ে শৌচকর্ম সেরে এসে বললেন, আজ শরীর যেমন সুস্থ, এমন অনেকদিন বোধ করি না। সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় স্বামীজি এককাপ চা চাইলেন।

সন্ধ্যা ৭.০৫-এ, সন্ধ্যা ঘণ্টা বাজতেই স্বামীজি নিজের ঘরে চলে গেলেন, সঙ্গে ব্রজেন্দ্র। ধ্যান শুরুর আগে ব্রজেন্দ্রকে বললেন, যতক্ষণ না ডাকি, অন্য ঘরে গিয়ে জপ, ধ্যান কর। সন্ধ্যে ৭.৪৫-এ স্বামীজি ব্রজেন্দ্রকে বললেন, গরম বোধ হচ্ছে, জানলা খুলে দাও। মেঝেতে শুয়ে পড়লেন, হাতে জপমালা। খানিক পরে বললেন, আর বাতাস করতে হবে না। একটু পা টিপে দিতে বললেন। রাত ৯.০০ চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে বাম পাশ ফিরলেন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তাঁর ডান হাত একটু কাঁপল। স্বামীজির কপালে ঘামের ফোঁটা জমল। রাত ৯.০২ থেকে ৯.১০, গভীর দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ল। মিনিট দুই পরে আবার গভীর দীর্ঘশ্বাস, একটু নড়ে উঠে মাথা বালিশ থেকে পড়ে গেল। চোখ স্থির, মুখে অপূর্ব জ্যোতি ও হাসি। ৯.২০ যোগেন বুড়ো গোপালদাকে ডেকে আনলেন। 

ডাঃ মজুমদার থাকতেন নদীর ওপারে বরাহনগরে, তাঁকে ডাকা হল, আর প্রেমানন্দ ও নিশ্চয়ানন্দ স্বামীজির সমাধি ভাঙাবার জন্য তাঁর কানে রামকৃষ্ণ নাম শোনাতে লাগলেন। রাত ১০.৩০ বেলুড় মঠে এসে ডাক্তার মজুমদার দেখলেন, নাড়ি বন্ধ এবং কৃত্রিম উপায়ে হার্ট সচলের ব্যর্থ প্রচেষ্টা শুরু হল। রাত বারোটায় ডাক্তার বলেদিলেন, স্বামীজি আর ইহলোকে নেই। পরের দিন সকাল, ৫ জুলাই শনিবার দেখা গেল স্বামীজির দুটো চোখ জবাফুলের মতো লাল, নাকমুখ দিয়ে অল্প অল্প রক্ত বেরিয়েছে। ডাক্তার বিপিন ঘোষ বললেন সন্ন্যাস রোগে দেহত্যাগ। যদিও মহেন্দ্র ডাক্তার বলে গিয়েছেন হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়াই দেহাবসানের কারণ। 

ভুবনেশ্বরী দেবী খবর পেয়েছিলেন সকালে। ভগ্নীপতিকে নিয়ে ভ্রাতা ভূপেন্দ্রনাথ বেলুড় মঠে এলেন, কিছুক্ষণ পরে কাঁদতে কাঁদতে এলেন জননী ভুবনেশ্বরী, তাঁর সঙ্গে দৌহিত্র ব্রজমোহন ঘোষ। সকাল সাতটাতেই নিবেদিতা এসে গিয়েছিলেন, তারপর নির্বাক হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাত-পাখায় স্বামীজিকে হাওয়া করেছিলেন। সন্ন্যাসীরা এক সময়ে বিবেকানন্দ জননীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন।

চিতাগ্নি প্রজ্জ্বলিত হতে একটু সময় লেগেছিল, বিকাল চারটের সময় শুরু হল দাহকার্য। শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যা ছটায়।

তবে এক ঘটনার কথা না বললেই নয়, ৪ ঠা জুলাই, ১৯০২ সালের রাতে নিবেদিতা স্বপ্ন দেখলেন, শ্রী রামকৃষ্ণ যেন সে রাতে আবার দেহ ত্যাগ করছেন। পরের দিন ভোরেই বেলুড় মঠ থেকে স্বামী সারদানন্দের লেখা চিঠি নিয়ে একজন সন্ন্যাসী এলেন নিবেদিতার কাছে। স্বামীজির মহাপ্রয়াণ ঘটেছে। নিবেদিতার সামনে তখন চারিদিক শূন্য। শুধুই আঁধার। ছুটলেন বেলুড় মঠে, স্বামীজির ঘরে গিয়ে দেখলেন মেঝের মধ্যে শুয়ে আছে রাজা...হ্যাঁ তিনি রাজাই। মহারাজও একি সাজে, স্বামীজি এই প্রথম বিশ্রাম নিচ্ছেন, একটি পাখা নিয়ে গুরুর মাথার কাছে বসলেন নিবেদিতা। তখন তিনি যেন জননী আর গুরু তাঁর পুত্র। নীরবে হাওয়া করে যেতে লাগলেন নিবেদিতা। ৫ই জুলাই অর্থাৎ ঐ দিনই দুপুরে গেরুয়া বস্ত্রে ঢাকা স্বামীজির দেহে নিয়ে আসা হল সৎকারের জন্যে। তাঁর মনে হল ওই বস্ত্রটি তিনি যদি পেতেন। 

সারদানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন ঐ বস্ত্রটি কী আগুনে দেওয়া হবে। সারদানন্দ ওঁর মনে অভিপ্রায় উপলব্ধি করে বললেন, ইচ্ছে হলে তিনি নিতে পারেন। কিন্তু বুঝতে পারলেন না শোভন হবে কি না, তাই আর রাজি হলেন না। শুরু হল পঞ্চভূতে মেশা, পিতার জ্বলন্ত চিতার দিকে যেনো তাকিয়ে বসে রইলেন সর্বশান্ত কন্যা হয়ে। সন্ধ্যে ছটা, চিতার আগুন প্রায় নিভে এসেছে, স্বামীজির দেহ আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোমের মধ্যে। হঠাৎ নিবেদিতার মনে হল কেউ যেন তাঁর জামার হাতায় টান দিচ্ছে, নিবেদিতা দেখলেন বস্ত্রখন্ডের একটি টুকরো তাঁর পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে। তিনি পরম যত্নে গুরু শেষ চিহ্ন তুলে নিলেন। পার্থিব জীবনে শেষ হল বিবেকানন্দ আধ্যায়।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...