'প্রাক্তন'কে নিয়ে মজা করার খেসারত

ভোট আর প্রকৃতির দাবদহে ধুন্ধুমার চলছে গোটা দেশ জুড়ে। কে বসবে কুর্সিতে, ভারতের মসনদ কার, তার চূড়ান্ত ফলাফল বেরোবে ২৩ মে, টানটান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সাধারণের বেডরুমে। এমত অবস্থায় 'প্রাক্তন'কে নিয়ে মজা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফের বিতর্কের ঝড় তুললেন বিবেক ওবেরয়।

সম্প্রতি বিবেক তাঁর টুইটারে একটি মিম শেয়ার করেন। ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকে নিয়ে বানানো সেই টুইটটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে এই মিমে রয়েছে ‘ওপিনিয়ন পোল’, ‘এক্সিট পোল’ ও ‘রেজাল্ট’। এই মিমে ‘ওপিনিয়ন পোল’-এ ঐশ্বর্য রাই বচ্চনকে দেখানো হয়েছে সলমান খানের সঙ্গে। ‘এক্সিট পোল’-এ তাঁকে দেখা গেছে বিবেক ওবেরয়ের সঙ্গে আর সবশেষে ‘রেজাল্ট’-এ  ঐশ্বর্য'র সঙ্গে আছেন তাঁর স্বামী অভিষেক বচ্চন ও মেয়ে আরাধ্যা। তবে এই মিমটি কিন্তু বিবেক নিজে তৈরি করেননি। তিনি মিমটি টুইটারে শেয়ার করে লেখেন, ‘কী সৃজনশীলতা! এখানে কোনো রাজনীতি নেই…এটা জীবন।’

মিমটা টুইটারে পোস্ট করার পরই তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন অভিনেতা। সোনম কাপুর সমালোচনা করে লেখেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক ও কুরুচিকর কাজ!ঊর্মিলা মাতোন্ডকর আর মধুর ভান্ডারকরকেও প্রতিবাদে সামিল হতে দেখা গিয়েছে।

 এমনকি মিমটি জাতীয় মহিলা কমিশনের নজরে আসার পর বিবেক ওবেরয়ের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশন থেকে তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সোমবার পাঠানো ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘একজন মহিলার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফলের কুরুচিকর তুলনা টেনেছেন অভিনেতা বিবেক ওবেরয়।’ আরাধ্যার সঙ্গে ঐশ্বর্য'র ছবি পোস্ট করা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কমিশন বলেছে, ‘ওই ছবি পোস্ট করা অত্যন্ত আপত্তিকর, অনৈতিক এবং এর মাধ্যমে সাধারণভাবে গোটা নারী জাতির প্রতি অমর্যাদা ও অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।

বিভিন্ন মন্তব্যে উঠে এসেছে- ‘আপনাকে ছেড়ে অভিষেককে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঐশ্বর্য যে একদম ঠিক করেছিল, তা প্রমাণ করে দিলেন।’ ‘সালমান খান যে আপনার কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ রইল না।’ অনেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বায়োপিকে বিবেক ওবেরয়ের অভিনয়ের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির বায়োপিকে অভিনয় করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য অভিনেতা হিসেবে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’ একটা বড় অংশ লিখেছে, ‘ফ্রান্সে কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ঐশ্বর্য রাই বচ্চন। একই সময় নিজের দেশে প্রাক্তন প্রেমিক টুইটারে ট্রোল করছেন তাঁকে। সেখানে আরাধ্যার মতো শিশুকেও রাখা হয়েছে।’

এহেন পোস্ট করার জন্য টুইটারে অনেকেই বিবেক ওবেরয়কে ক্ষমা চাইতে বলায় বিবেক মন্তব্য করেন, ‘আমি ক্ষমা চাইতে রাজি আছি, কিন্তু কেন ক্ষমা চাইব? আমি কী ভুল করেছি? কেউ মিমটা পোস্ট করেছে, আমি তাতে হেসেছি। বুঝতে পারছি না, সবাই এটাকে কেন এত বড় করে তুলছে! যে মিমটি তৈরি করেছে, আমি তার সৃজনশীলতার প্রশংসা করেছি। যদি কেউ তোমাকে নিয়ে মজা করে, তাহলে সেটা গম্ভীরভাবে দেখার কিছু নেই।’

 

(বিবেকের টুইট)

শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন বিবেক ওবেরয়। পাশাপাশি যে মিমটি শেয়ার করেছিলেন, তাও টুইটারে নিজের পেজ থেকে মুছে ফেলেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কোনো কিছু নিজের কাছে আনন্দের মনে হলেও অপরের জন্য তেমনটা না-ও হতে পারে। গত ১০ বছর আমি দুস্থ মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছি। কোনো নারীকে অসম্মান করার কথা ভাবতেও পারি না।’ পোস্টটি মোছার পর টুইটারে আবারও লেখেন, আমার মিমের রিপ্লাইয়ে কোনো একজন মহিলাও যদি বিরক্ত হন, তাঁর প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবকিছুর জন্য আমি দুঃখিত। টুইটটি মুছে ফেলা হয়েছে।’

 

(বিবেকের টুইট)

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে ‘কিউ! হো গ্যায়া না’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন বিবেক ওবেরয় ও ঐশ্বর্য রাই। সে সময় তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং তাঁদের প্রেম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হয়েছিল। তারপর বিবেক ওবেরয় অভিযোগ করেন, ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে মেলামেশার কারণে সলমান খান নাকি তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। শেষপর্যন্ত ভেঙে যায় বিবেক ওবেরয় ও ঐশ্বর্য রাইয়ের সেই প্রেম।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রে পিএম নরেন্দ্র মোদি’তে নরেন্দ্র মোদির চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিবেক ওবেরয়। দেশের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ ২৪ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ছবিটি।

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...