'ভিস্তা ডোম'-এর মজা সমতলেও

আচ্ছা, মনে করুন আপনি কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন। ট্রেনে করে যেতে যেতে শুধুমাত্র জানালা নয়, গোটা ট্রেনটাই একটা জানালা হয়ে উঠেছে। কেমন হবে সেটা?  যেদিকে তাকাচ্ছেন, সেদিকেই নৈসর্গিক দৃশ্য আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। কল্পনায় ভাবুন একবার। ভারতে কয়েকটি জায়গায় এই রকম যাত্রার ব্যবস্থা করা হয়েছে খুব সম্প্রতি। আমাদের নিজেদের রাজ্যেও রয়েছে দার্জিলিং থেকে ঘুম অব্দি এই রকম ট্রেন যাত্রার ব্যবস্থা। এবারে সেই যাত্রা সমতল থেকেই করার কথা ভাবা হয়েছে। ভিস্তা ডোম কোচ হল সেই রকম কোচ,  যার মধ্যে চড়ে আপনি যেদিকে তাকাবেন,  সেদিকেই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।

   এই কোচ সম্পর্কে একটা পরিস্কার ধারণা দিতে গেলে বলতে হয়, সাধারনতঃ ৪০ সিটযুক্ত এই কোচগুলিতে চারপাশের এলাকা ছাড়া কোচের ছাদেও ট্রান্সপারেন্ট বডি থাকে, যার মাধ্যমে পর্যটক যেদিকে খুশি বা যেদিক দিয়ে খুশি প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। প্রতিটা সিট রোটেবল এবং পুশব্যাক সিস্টেমে তৈরী হয়, যাতে দেখার ক্ষেত্রে কোনোরকম আপোষ না করতে হয়। স্লাইডিং চওড়া দরজা, মাল্টিপল টেলিভিশন স্ক্রিন সম্বলিত কোচগুলিতে এলইডি আলোর ব্যবস্থাও রাখা হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই ধরণের কোচে পর্যটকদের ঘোরানোর ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক। চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরিতে নির্মিত এই কোচগুলি প্রথম আরাকু ভ্যালি এবং কাশ্মীরে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

   পরে ধীরে ধীরে ভারতের প্রায় প্রত্যেকটি পাহাড়ি এলাকার রেলযাত্রা এই রকম সুদৃশ্য করার সিদ্ধান্ত নেয় রেলমন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে এবছর মার্চ মাস অব্দি পাওয়া খবর অনুযায়ী মোট চারটি পাহাড়ি এলাকায় এখন ১১টি ভিস্তা ডোম কোচ চালু রয়েছে৪টি দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েতে, ২টি কালকা-সিমলা রেলওয়েতে, ১টি কাংড়া ভ্যালি রেলওয়েতে এবং আর ১টি মাদরান হিল রেলওয়েতে। পরবর্তী ৩মাসের মধ্যে আরও ১৮টি কোচ চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে এবং ২০১৯-২০র মধ্যে আরো ৬৯টি ভিস্তা ডোম কোচ চালু করে মোট ১০০ টি এই ধরণের কোচ যাতে চালু করা যায় তার ব্যবস্থা করছে রেল মন্ত্রক। ভারতের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটক বৃদ্ধি করাই এই লক্ষ্যের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গিয়েছে।

    সেই লক্ষ্যেই আমাদের রাজ্যের ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত টয়ট্রেনকে বিশ্বের দরবারে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এবারে উদ্যোগী হল উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষের তরফে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পাহাড়ের কোলে একসঙ্গে চারটি নতুন ডোম কোচ নির্মাণের কাজ চলছে। রেলকর্তারা আশাবাদী, পুজোর আগেই চারটি নতুন কোচ প্রস্তুত হয়ে যাবে। এ বিষয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম সুমিত সরকার জানান, পুজোর আগেই ভিস্তা ডোম কোচ দিয়ে জয় রাইড পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে চাহিদা অনুযায়ী কোচ বাড়ানো হতে পারে। কোচগুলি স্টিম ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হবে। নিয়মিতভাবে এই ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত ভাড়া নির্দিষ্ট করা হয়নি। শিলিগুড়ি থেকে রংটং, তিনধারিয়া, কার্শিয়াং, দার্জিলিং হয়ে ঘুম অব্দি এই পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই মোট চারটি কোচ নির্মাণ করা হচ্ছে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলসূত্রে খবর, টয়ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জয় রাইড ও জঙ্গল সাফারি ক্রমেই পর্যটকদের মন জয় করতে সক্ষম হচ্ছে। তাই এই নতুন কোচ সম্বলিত ট্রেনও পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে এ বিষয়ে আশাবাদী দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের কর্তারা।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...