বিখ্যাত লেডিকেনি মিষ্টির সৃষ্টি ভীম চন্দ্র নাগের হাত ধরেই

মাছে-ভাতে বাঙালির শেষপাতে মিষ্টি না হলে ভোজনের মধুরেণ সমাপেন হয় না। শুধু শেষপাতে নয়, প্রাতঃরাশেও রসনার পরিতৃপ্তির জন্য সন্দেশ, রসগোল্লা বা রাবড়ি চাই। মিষ্টির সঙ্গে বাঙালির শুধু উদর নয়, আবেগ এবং আইডেন্টিটিও জড়িয়ে গেছে।

কলকাতার মিষ্টির কথা উঠলে উত্তর কলকাতার নামই আগে আসে। প্রথমেই যে নামটি উঠে আসবে সেটি হল ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির দোকান। ঊনিশ শতকে কলকাতার মিষ্টিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল বৌবাজারের এই মিষ্টির দোকান। ১৮২৬ সালে হুগলির বাসিন্দা পরাণ চন্দ্র নাগ এই মিষ্টির দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর পুত্র ভীম নাগের হাত ধরে এই মিষ্টি দোকানটি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছোয়।

বৌবাজার মার্কেটের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ৫, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিটের ভীম চন্দ্র নাগের আইসক্রীম, সন্দেশ, রোজ ক্রীম সন্দেশ, পেস্তা সন্দেশ ভীষণ জনপ্রিয়। "আবার খাবো সন্দেশ" ও আম দই একবার চেখে দেখতেই হবে। আর এই দোকানের তৈরি লেডিকেনির কথা কে না জানে!

কথিত আছে ১৮৫৬ সাল নাগাদ কলকাতায় এলেন ভাইসরস পত্নী লেডি ক্যানিং। স্ত্রীর জন্মদিনে ভীম নাগকে মিষ্টি তৈরি করতে বলেন। লেডি ক্যানিং এমন মিষ্টি তৈরি করার জন্য আবদার করেন, যার স্বাদ হবে একদম আলাদা। আর সেই মিষ্টি এর আগে কেউ খায় নি। ভীম নাগ তাঁর কথা শোনা মাত্র রাজি হয়ে যান। এরপর তিনি যে মিষ্টি তৈরি করেছিলেন, তার স্বাদ লেডি ক্যানিংকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিল যে ক্যানিং সাহেব দুহাত তুলে উপহার দিয়েছিলেন। তারপর সেই মিষ্টি লেডি ক্যানিংয়ের নামানুসারে হয় লেডি ক্যানিং। পরে তা লেডিকেনি নামে পরিচিত হয়।

ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির দোকানে সাহেব থেকে শুরু করে এদেশের বিখ্যাত মণীষীরা মিষ্টি খেতে আসতেন। বিখ্যাত ঘড়ি কোম্পানি "কুক অ্যান্ড কেলভির" বড়োসাহেব একবার এই দোকানে মিষ্টি খেতে এসেছিলেন। ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টি খেয়ে একেবারে মোহিত হয়ে গেলেন। সাহেব খুশি হয়ে এই দোকানে একটি ঘড়ি উপহার দিতে চাইলেন। কর্মচারীরা ইংরেজি পড়তে না জানায় ভীম চন্দ্র নাগ বাংলায় ঘড়ি দিতে বলেন। সেই মতো বাংলা হরফে লেখা ডায়াল লন্ডন থেকে তৈরি হয়ে আসে। সেই ঘড়ি আজও দোকানের শোভা বর্ধন করে চলেছে।

শুধু সাহেব নয়, শোনা যায় বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ভীম চন্দ্র নাগের সন্দেশ না খেয়ে রাতে ঘুমতে পারতেন না। রাণী রাসমণির বাড়িতে যেকোন অনুষ্ঠানে ভীম নাগের কড়া পাকের মিষ্টি ছিল বাঁধা ধরা । জগদীশ চন্দ্র বসু, মেঘনাদ সাহা, প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এই দোকানের মিষ্টি খেতে ভালো বাসতেন। রাজা রামমোহন রায়েরও নাকি এই দোকানের ছিল মিষ্টি খুব প্রিয়।

ভীম চন্দ্র নাগ মিষ্টির সেই ট্র্যাডিশন আজও বহন করে নিয়ে চলেছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...