হিমাচল প্রদেশের কিছু গ্রামে অদ্ভুত এক প্রথা আছে। আর এই প্রথাটি হল, এখানকার মানুষ জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ থেকে ফেব্রূয়ারি মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত কথা বলেনা। এর মধ্যে মানালির কুলু জেলার গোশাল গ্রাম একটি। তবে এই গোশাল গ্রাম ছাড়াও আছে বরুয়া, সানাগ, কুলু,পালচাল ও কোঠি ইত্যাদি গ্রাম। এখানকার মানুষ একটানা ৪২ দিন নীরবতা পালনের বিয়ষটি বিশ্বাস করে। এছাড়া সোলাং ও রুয়ারের মানুষ চুপ থাকার পাশাপাশি চাষবাসও বন্ধ রাখে।
মকরসংক্রান্তির দিনটি থেকে শুরু হয় এই বিশেষ প্রথা। তবে মৌন থাকার কারণ খুঁজে পেতে গিয়ে জানা যায়, ইশ্বর এই সময়কালে গভীর ধ্যান করে স্বর্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ঈশ্বরের যাত্রাকালে যাতে কোন বাধা না আসে তাই এই প্রথার চল। তবে এই নিয়ে পৌরাণিক মতও রয়েছে। বিপাশা নদীর পাশে ঋষি গৌতম তপস্যা করছিলেন। তাঁর তপস্যা যাতে ভঙ্গ না হয়, তাই নাকি এই ব্যবস্থা। বহু প্রাচীন একটি মন্দিরও রয়েছে এখানে। মকর সংক্রান্তির দিন লোহরিতে পূজার্চনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দির। গৌতম ঋষি ছাড়াও বেদব্যাস ও কাঞ্চন নাগের মূর্তিও রয়েছে এই মন্দিরে। মানালির গোশাল গ্রামের এই মন্দিরটি এই সময়ে পর্যটকের জন্য বন্ধ থাকে বলে জানা গিয়েছে। এরপরে ফেব্রূয়ারি মাসের ২৫ তারিখের পরে খোলা হয় মন্দির। গ্রামের মানুষ আরও জানান যে, মন্দির খোলার পরে সেই সময়ে একটা ফুল যদি পড়ে থাকে মন্দিরের মেঝেতে, তা হলে তা গ্রামগুলির জন্য শুভ বলে মনে করা হয়। আর তা না হয়ে যদি, কয়লার টুকরো পড়ে থাকে, ধরে নেওয়া হয় গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে পাঁচ দিনের মধ্যেই। তবে বিজ্ঞানের মতে বরফ ঢাকা এই জায়গাগুলিতে রোদের আভাস মিললে খোলে মন্দির। এতটাই বেশি বরফ পড়ে জায়গাগুলিতে যে, শীতকালে কর্মক্ষমতাই থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেশিরভাগ সময়টাই ক্লান্ত লাগে। তাই কথা বলার বা বাড়ি থেকে বেরোনোর সুযোগ প্রায় মেলেই না। তবে চুপ করে থাকলেও গ্রামের মানুষ এই সময়ে হেডফোনে গান শোনেন, বেড়াতে যান, বাড়ির কাজও করে থাকেন। অবাক করা ব্যাপার না? ভারতের মাটিতে কত রকম ধর্মীয় রীতি আছে, যা আমরা জানিই না। এই রকম বৈচিত্রে ভরা ভারতবর্ষই তো আমাদের দেশ।