বাংলার বিদ্যা সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে

ভোট মিটে গিয়েছে গত ১৯তারিখ। এই নির্বাচনের প্রচারপর্বের সময় বিভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য, বা আচরণ আমাদের মত সাধারণ মানুষদের বিরক্তির কারন হয়ে ইঠেছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শব্দ দূষণে ছেয়ে গিয়েছিল চারিদিক। আমরা সবথেকে স্তম্ভিত হয়েছিলাম বিদ্যাসাগরের মূর্তী ভাঙা নিয়ে। কতখানি অশিক্ষিতের মত আস্ফালন হলে এমন আচরণ করা যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কোন দল কি করেছে, কিসের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে নাই বা ঘাঁটালাম, কিন্তু ঘটনা যে ঘটেছে, সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। কি মাত্রায় হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে উঠলে এই রকম একটা কান্ড ঘটানো যায়, তা আমিও জানি, আপনিও জানেন। অনেক বাকবিতন্ডা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। সে বিষয়ে তাই দৃষ্টিনিক্ষেপ করলাম না।

        তবে মন্দের ভালো এই যে, কলকাতায় এ হেন আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শিলিগুড়ি পুরসভা নড়েচড়ে বসেছে। রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুড়ির মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভা সেখানকার মনীষীদের মূর্তিগুলি বিশেষভাবে রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা নিয়েছে। মূর্তিগুলি রক্ষনাবেক্ষণের পাশাপাশি সেগুলির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে অস্থায়ী কর্মীও নিযুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। গোটা ভোট প্রক্রিয়া শেষ হলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় কমপক্ষে ১৭ জন মনীষীর মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও একাধিক মনীষীর মূর্তি রয়েছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। যেগুলি বেসরকারি উদ্যোগে বসানো হয়েছে। সেসব মূর্তিগুলি যদিও অবহেলার শিকার। শহরের উল্লেখযোগ্য মূর্তিগুলি হল বাঘাযতীন পার্কে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের মূর্তি, সুভাষপল্লিতে নেতাজির মূর্তি, দার্জিলিং মোড়ে ক্ষুদিরামের মূর্তি, জলপাইমোড়ে থাকা বিনয় বাদল দীনেশের মূর্তি

   মূর্তি সংস্কারের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভার শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদ সদস্য শংকর ঘোষ বলেন, ভোট পর্ব শেষ হলে মনীষীদের মূর্তি সংরক্ষণের বিষয়ে একটি জরুরী বৈঠক করা হবে। সারা বছর মূর্তিগুলির দেখভালের জন্য অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার কথা ভাবা হবে। এছাড়া স্থানীয়দের সাহায্যও নেওয়া হবে। অপরদিকে যে মূর্তিগুলি ঘেরাটোপের বাইরে আছে, সেগুলি যাতে সুরক্ষিত থাকে, তার ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। শহরের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক তথা লেখক গৌরী শংকর ভট্টাচার্য জানান, সমাজ সভ্যতা যে চূড়ান্ত অবক্ষয়ের পথ চলেছে, সে বিষয়ে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ভাবতে অবাক লাগে, আমাদের দেশের মনীষীদের প্রতি কেউই আর শ্রদ্ধাশীল নয়। এক্ষেত্রে পুরসভার উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। পুরসভা যদি এগুলি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয় তাহলে তো খুবই ভালো।

   পাশাপাশি আরো একটি খবর আশার আলো জাগিয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লীর বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তী এবং পর্ণিকা চক্রবর্তী তাঁদের ছেলের অন্নপ্রাশনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ দিয়ে নিমন্ত্রণ করছেন অতিথিদের। যদিও তাঁরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সহজ পাঠ  দিয়ে নিমন্ত্রণ করবেন, কিন্তু কলকাতার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ব্যাপারটি তাঁদের প্রভাবিত করে। তাঁরা তাই আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বর্ণপরিচয় দিয়েই নিমন্ত্রণ করছেন। আগামী ২৪শে মে তাদের ছেলের অন্নপ্রাশন। ছেলের অন্নপ্রাশনে ছেলেবেলাকজার স্মৃতি উস্কে দিতেই তাঁরা এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানান দেবাশিসবাবু। এখনকার শিশুরা জানেইনা এই সব বইয়ের কথা। তাদের জানাতে চেয়েছিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার সমগ্র শিক্ষা অভিযানের কর্মী দেবাশিসবাবু ও তাঁর স্ত্রী। ওই দম্পতি বাজার থেকে বই কিনে তার উপরে ও ভেতরে অন্নপ্রাশনের আমন্ত্রণপত্রটি ছেপে জুড়ে দিচ্ছেন। বিদ্যাসাগর ও শিশু শিক্ষা একেবারেই আলাদা করা যায়না। তাই এই অভিনব আয়োজন তাঁদের। এর মধ্যে দিয়েই স্পষ্ট, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা শুধুই রাজনৈতিক তরজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজের প্রতিটি স্তরকে নাড়া দিয়েছে এই ঘটনা।

 

 

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...