কথায় বলে বিশ্বাস থাকলে পাহাড় হাঁটতে পারে। এই প্রবাদ ভীষণ সত্যি বিদিশার জন্য। ২১ বছরের বিদিশা বালিয়ান। উত্তরপ্রদেশের মুজাফফর নগরের মেয়ে। জন্মের পর আর পাঁচটা শিশু যেমন কেঁদে ওঠে বিদিশার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। বিদিশা জন্ম থেকেই মূক বধির। সেই কারণে ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও কোনওদিন গানের সুর, তাল, লয় ছন্দকে স্পর্শ করতে পারেনি সে। গানের সুরকে সে হৃদয়ে ধারন করেছিল। সে সুরের ছন্দেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিদিশার ‘তান্ডব নৃত্য’ মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ এর মঞ্চে বিদিশার পারফরম্যান্স এখনও পর্যন্ত এই মঞ্চের সেরা প্রদর্শন। ২০০১ সালে শুরু হওয়া এই বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগীতায় বিদিশা বালিয়ান সেরা সুন্দরীর শিরোপা পেলেন। এই প্রথম ভারত থেকে কোনও প্রতিযোগী এই মঞ্চে সফল হল। দক্ষিণ আফ্রিকার মোম্বেলা শহরে গত ২২ জুলাই ওই প্রতিযোগিতার ফাইনাল ছিল। মূল পর্বে ১৬ টি দেশের ১১ জন প্রতিযোগীকে হারিয়ে সেরা হন বিদিশা।
ছোট বেলা থেকে নাচ, স্পোর্টসে আগ্রহ ছিল। বিদিশাকে তাঁর বাবা টেনিসে ভর্তি করে দেন। বিদিশাই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের টেনিস প্রতিযোগিতায় (ডেফ অলিম্পিক) ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। রৌপ পদক পেয়েছিলেন।
২১ বছরের সুন্দরীর শুরুর পথ অবশ্য সহজ ছিল না। বিদিশার নিজের ভাষায়, ‘একজন বধির শিশু, ডোরবেল অবধি শুনতে পায় না, তাকে সবাই কীভাবে এড়িয়ে যায়, তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে সে আমার দেখা, জানা। এক সময় নিজের বেঁচে থাকার জন্য কোনও কারণ খুঁজে পেতাম না। সেই সময় আমার পরিবার আমার পাশে থেকেছে।’
মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯- প্রতিযোগিতার আগেই কোমরে বড় ধরনের চোট পেয়েছিলেন বিদিশা। তাঁর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত মনের জোরে এই মঞ্চে পৌঁছে যান।
সুন্দরী প্রতিযোগীতায় শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর মুকুট যখন তাঁর মাথায় উঠছে সেই মুহূর্তটির ভিডিও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বিদিশা লিখেছেন, ‘ এই মুহূর্তে কথা বললে আমি যা বলতে পারতাম, আমার চোখের জল তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে।’