জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের স্কুল যাবার দূরত্ব কমিয়ে এনেছে দু' চাকার সবুজ সাথী প্রকল্প। পায়ে হাঁটা পথের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে পরিবেশ বান্ধব দুচাকার সাইকেল। স্কুল ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি উপকৃত হয়ে চলেছে তাদের পরিবারের সদস্যরাও। যাত্রা পথের দূরত্ব যেমন কমেছে সাথে বেড়েছে কাজের গতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সাথী প্রকল্পের উদ্যোগে নতুন জোয়ার এসেছে এখানে বসবাসকারীদের জীবনযাত্রায়।
ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম ব্লকের বেশির ভাগ গ্রাম জঙ্গলে ঘেরা। আগে সেই পথ পেরিয়ে স্কুল অব্দি পৌঁছানো ছিল বেশ কষ্টকর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সবুজ সাথী প্রকল্প শুরু হবার পর এ সব গ্রামের স্কুল পড়ুয়ারা বেশ উপকৃত হয়েছে। এমন স্কুল শিক্ষার্থীদের ভিতর সীতা মুর্মুর বাড়ি দামোদরপুর। চলতি বছরে পাতিনা এসসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। বাড়ি থেকে স্কুল পৌঁছনোর জন্য জঙ্গলের পথ পেরোতে হয় প্রায় ৪ কিলোমিটার। এই জঙ্গলের রাস্তায় রয়েছে নানা বন্য প্রাণীদের যাতায়াত। সীতা জানায়, নবম শ্রেণীতে থাকা কালীন সাইকেলটি পেয়েছে সে, জঙ্গলের পথ পেরিয়ে স্কুল পৌঁছাতে এখন আর ভয় থাকে না মনে। সীতার বাড়িতে একমাত্র তার মা উপার্জনক্ষম সদস্য। অন্যের জমিতে চাষের কাজ করে, কখনও বা শালপাতা -কেন্দুপাতা জোগাড় করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। মেয়ের স্কুলে যাবার জন্য সাইকেল কেনবার ক্ষমতা তাঁর ছিলনা। যাতায়াতের কষ্ট দেখে মা ভেবেছিলেন মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখন আর সেই সম্ভাবনা নেই। বরং মেয়ের সাইকেল চড়ে হাট পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি নিজেও।
লালগড় সারদামনি বালিকা বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক রাখি সিং জানালেন, সবুজ সাথী প্রকল্পের দু'চাকা শুধু পথের দূরত্ব লাঘব করেছে এমনটা নয়, পাশাপাশি শারীরিক বিকাশ এবং স্বনির্ভর হতেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে চলেছে। রাখি সিং জানিয়েছেন সাইকেল করে বিদ্যালয় পৌঁছে যেতে ছাত্রীদের শরীরচর্চাও হচ্ছে। কারন সাইকেল চালানোর অনুশীলন শরীর চর্চার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। শারীরিক ভাবে আরো সচল হবার জন্য সাইকেল চালানো শেখাটাও বেশ জরুরি। জঙ্গল পথে বিদ্যালয় পৌঁছতে এখানকার শিক্ষার্থীদের শক্তি জুগিয়ে চলেছে দু চাকার সাইকেল।
নয়াগ্রামের বিহানকুড়িয়ায় থাকে পানগো মুর্মু। সেও এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। পানগো জানিয়েছে তাদের বাড়ি জঙ্গল ঘেঁষা। সেখান থেকে থেকে স্কুল, বাজার, বাসস্ট্যান্ড সবই প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার দূরত্বে। সাইকেল ছাড়া এই দীর্ঘ পথে যাতায়াত করা সম্ভব ছিলোনা তার। এছাড়া জামবনি ব্লকের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মলয় সিং জানায় দিদির মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়াতে সে এবারে সাইকেল চড়ে স্কুলে যাচ্ছে। দিদির সবুজ সাথীতে পাওয়া সাইকেল পেয়ে এখন সেও কম সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে স্কুলে।
গোপীবল্লভপুরের নেহেরু বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণীর আর্টস নিয়ে পড়াশোনা করছে সোনালী রানা। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন সবুজ সাথির সাইকেল পেয়েছিল সে। এখনো সেই সাইকেলই তার পরিবারের বড় ভরসা। সোনালীর মা জানিয়েছেন সাইকেল কেনবার মত পরিস্থিতি তাদের ছিলোনা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিনা পয়সায় সাইকেল দেবার এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি জানান, এই প্রয়াস, ওদের অন্যের কাছে হাত পাততে দেয়নি।