বাঙালিদের পাশাপাশি সমগ্র শহরবাসীর কাছে ছুটির বিকেল অথবা শীতের বেড়াতে যাওয়ার জায়গার তালিকায় ভিক্টেরিয়া মেমোরিয়াল সবার শীর্ষে। এই স্মৃতিসৌধটি নিয়ে বাঙালির নস্টালজিয়ার শেষ নেই। কিন্তু এই ভিক্টোরিয়া ও সংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু এমন সব জিনিস যার ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নন বহু মানুষ। তাই এবার সেই সমস্ত দিকের কথা মাথায় রেখে এক নতুন ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে চলেছে কর্তৃপক্ষ। এবার থেকে মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে তুলে ধরা হবে সেই সমস্ত অজানা ইতিহাস কে। এবার অ্যাপ ডাউনলোড করলে দর্শকরা এমন প্রায় ৫০টি নিদর্শন সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন।
এই বিশেষ অ্যাপটি কাজ করবে ‘ভার্চুয়াল গাইড’-এর মতোই। সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, এই মিউজিয়ামে রয়েছে অন্তত ৩৫ হাজারের মতো দ্রষ্টব্য। কিন্তু এই অ্যাপের মধ্যে দেওয়া থাকবে কয়েকটি বস্তুর তথ্য। কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, এটি একটি স্মার্ট ফোন ভিত্তিক অ্যাপ। প্রতিটি দ্রষ্টব্যের বিষয়ে ৩০ সেকেন্ড করে তথ্য থাকবে। এই অ্যাপ ডাউনলোড করলে ওই বাছাই করা নিদর্শনগুলির বিবরণ শুনে নেওয়া যাবে। তবে এই অ্যাপ কীভাবে কাজ করবে এই বিষয়ে জানা যায় - যে সমস্ত দ্রষ্টব্যগুলিকে নির্বাচন করে অ্যাপে দেওয়া হবে, তাদের নম্বর থাকবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল নামে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করার পর মিউজিয়ামে গিয়ে কোন দ্রষ্টব্যের কত নম্বর, তা অ্যাপে দিলেই অডিও শুরু হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে দর্শকরা সংশ্লিষ্ট নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে সেটি দেখতে দেখতেই তার ব্যাপারে সবটা হেডফোন লাগিয়ে শুনে নিতে পারবেন। তাছাড়া বাড়িতে বসেও এই অডিও শোনা যাবে। সেক্ষেত্রে ওই নিদর্শন সামনে থাকবে না। তাতে অবশ্য খুব বেশি লাভ হবে না। কারণ বস্তুটিকেই যদি দেখা না যায়, তাহলে শুধু শুনে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
যেসব দ্রষ্টব্য বাছাই করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতার জলছবি। দুর্মূল্য এই ছবির গুরুত্ব অপরিসীম বলেই মনে করেন ভিক্টোরিয়ার কর্তৃপক্ষরা। এর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু থাকবে এখানে। তবে বর্তমানে এই বস্তুগুলির অডিও তৈরির কাজ চলছে। কী কী বিবরণ দেওয়া হবে, তার একটি খসড়াও লেখা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। এই বিষয়ে আরও জানা যায়, এই বিশেষ অ্যাপটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু করা হবে। ধীরে ধীরে পরে দ্রষ্টব্যের সংখ্যাও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েক মাস বাদেই এই অ্যাপটির উদ্বোধন করা হবে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবসের দিনে এই অ্যাপটির সূচনা করতে চাইছেন ভিক্টোরিয়ার কর্তারা। জানা গিয়েছে যে ভারতীয় জাদুঘরও এই নিদর্শনগুলির ব্যাপারে এমন বিবরণমূলক অডিও তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। তাই তাদের কয়েকটি নতুন গ্যালারি খুলতে চলেছে। সেগুলিতে এই নয়া ব্যবস্থা চালু করার চিন্তাভাবনা করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই কাজ। তবে ভিক্টোরিয়া বিগত সময়ে তাদের মিউজিয়ামকে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে একাধিক পদক্ষেপও নিয়েছে। যেমন গুগল আর্টের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা। মিউজিয়ামের দুর্মূল্য বেশ কিছু দ্রষ্টব্যকে অনলাইন তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই অ্যাপটির ফলে দেশ-বিদেশের মিউজিয়ামের সঙ্গে যে কেউ ঘরে বসে অনলাইনেই ভিক্টোরিয়ার বস্তুগুলিকে দেখতে পারবেন। তবে যে রয়্যাল গ্যালারি নতুন করে খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, জানা গিয়েছে তা খুলতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।