শাড়ি পরা দেহরক্ষী!

শাড়ি পরা দেহরক্ষী! ভাবাই যায় না হয়তো! আজকের দিনে সত্যিই অসম্ভব কিছুই নয়। ৪৯ বছর বয়সী, গুরুগ্রামের পুরস্কার বিজয়ী সুরক্ষা পরিষেবা পরামর্শক তিনি। যাঁর নাম বীণা গুপ্তা। যিনি সারা দেশে শতাধিক নারীকে বিনামূল্যে আত্মরক্ষা এবং আত্ম-সুরক্ষার প্রশিক্ষণ দেন। বীণা, যাঁর মন এবং দেহের শক্তি তাঁর শারীরিক শৌখিনতার অসমানুপাতিক। মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে নিজের মতো করে এক নতুন ধারণার জন্ম দেন বীণা। বডিগার্ড মানেই কালো পোশাক পরিহিত বলিষ্ঠ চেহারার পুরুষ- এটি যে একটি মিথ ছাড়া কিছুই নয়, তা প্রমান করে দেন তিনি।

 'লেডি বডিগার্ড' বা 'দাবাং সিং' নামেও পরিচিত বীনা সুরক্ষা এবং মার্শাল আর্টে বেশ কয়েকটি প্রফেশানাল কোর্স করেছে এবং তাঁর মতে আত্ম-সুরক্ষার জন্য শারীরিক শক্তির চেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধারণ জ্ঞান। মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় তিনি সাতটি এস(S) এর উপর জোর দেনআত্মবিশ্বাস(Self- Belief), স্ব-স্বীকৃতি(self-acknowledgement), আত্ম-সম্মান(self-esteem), আত্মবিশ্বাস(self-confidence), স্ব-ক্ষমতায়ন(self-empowerment), স্ব-অনুপ্রেরণা(self-motivation) এবং আত্মরক্ষা(self-defence)

অল্প বয়স থেকেই তাঁকে গুন্ডি’ বলা হতো।তাঁর পরিবারে বাবা-মা ও তিনি ছাড়াও চার বোন ছিল, হরিয়ানার একটি ছোট্ট গ্রামে তাঁদের বসবাস ছিল। প্রতিবারই বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ইভ টিজিং-এর শিকার হতেন তাঁরা। তাই তিনি নিজেই নিজের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন। পরে তিনি গ্রামের বাকি মেয়েদেরও আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। ছোটবেলা থেকেই পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের অমতের কারণে হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা করেন এবং চাকরিও শুরু করেন। সাধারণত সকল মেয়ের মতোই চাকরি-বিবাহ-সন্তান একে একে পেরোন সব পর্ব। তবে তাঁর এই চাকরি বেশিদিন ভালো লাগে নি। 

২০০০ সালে তিনি একটি আন্তর্জাতিক সুরক্ষা সমাধান সংস্থায় অর্জন করে নেন তাঁর চাকরি ও দায়িত্ব। পুরুষ-অধ্যুষিত ডোমেইনে তাঁর যাত্রা শুরু হয় সেভাবেই। সকল প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে, বীণা, যাঁকে বন্ধুরা ভালবেসে লেডি দাবাং সিং বলে, তাঁর প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সম্মানিত পেশাদার হয়ে ওঠেন। ২০১১ সালে, তিনি গুরুগ্রাম পুলিশের জন্য আত্মরক্ষা এবং সুরক্ষা নিয়ে প্রথম একটি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করেছিলেন। আজ, তিনি উইমেন ইন সিকিউরিটি (ডাব্লুআইএস) নামে একটি সুরক্ষা সংস্থা পরিচালনা করছেন, যা বেসরকারী সংস্থাগুলির পাশাপাশি সরকারী সংস্থাগুলির সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই তৈরি।

কাজের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের গোঁড়া ধারণাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন বীণা, শাড়ি পরিহিতা সংসার-সন্তানের দায়িত্ব সামলেও সমান তালে তাঁর কাজের জায়গাকেও বজায় রেখেছেন। তিনি স্টিরিওটাইপের উর্ধ্বে উঠে প্রমাণ করে দেন মনের জোর এবং ইচ্ছাই আসল।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...