হাতির সাথে কখোনো হাতাহাতি করেছেন? করেননি? তা শিবরাম বাবুর নাম শুনেছেন নিশ্চয়, শোনার কথাই বটে ওরকম মানুষ এই ধরাধামে আর দ্বিতীয়টি জন্মান নি, তাকে আপনি শিব্রামই বলুন অথবা শিবরামই বলুন কিছুতেই তার কোনো আপত্তি নাই আবার She যেহেতু স্ত্রীলোক তাই তাকে She বাদ দিয়ে ব্রাম বাবুও বলতে পারেন তাতেও বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন হওয়া বা কুন্ঠা বোধ করার নেই কারণ শিবরাম স্বয়ং শিবের মতনই অচল অটল।
এই মানুষটি কলকাতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কান্ড ঘটিয়ে ছিলেন 'বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে', আজ সেরকমই কয়েকটা ঘটনার কথা লেখা যাক।একদিন শিব্রাম আর চন্ডী লাহিড়ী হাঁটছেন চেতলার মোড় থেকে রাসবিহারী অ্যাভেনিউ এর দিকে, একটু এগোনর পর মোড়ের মাথায় দেখা মিললো এক ঘুগনি বিক্রেতার, শিবরাম তাকে ডেকে বললেন তিন প্লেট ঘুগনি দাও তো, ঘুগনিওয়ালা ওঁদের দুজনকে দু প্লেট ঘুগনি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো - আর একটা কাকে দেব বাবু? শিবরাম বললেন এটা তুমি খাবে। ঘুগনিওয়ালা হতবাক। আয়েশ করে চেটেপুটে খেয়ে শিবরাম তো পুরো তিন প্লেট ঘুঘনীর দামই ঘুঘনিওয়ালা কে মিটিয়ে দিলেন আর বললেন তুমি কি কখনো নিজের তৈরি ঘুগনি নিজে খেয়ে দেখেছ? তুমি এতো ভালো ঘুগনি তৈরি করো, কিন্তু না তুমি না তোমার জিভ কেউ জানতেই পারে না, এ বড় অন্যায়, সারাদিন ঘুগনি ভর্তি হাঁড়ি শুধু বয়েই বেড়ালেই হবে? নিজে খেতে হবেনা নিজে খেলে তবেই তো দশজনের কাছে খাবারের গুণ গাইতে পারবে| আর একদিন শিবরাম হেঁটে যাচ্ছেন এক হাঁড়ি মিষ্টি নিয়ে, উলটো দিকে থেকে হেঁটে আসছেন লেখক সমরেশ মজুমদার, রাস্তার মাঝখানে অপ্রত্যাশিত ভাবে শিবরামকে দেখতে পেয়ে ওই অবস্থাতাই সমরেশ তাকে প্রণাম করতে যেতেই শিবরাম একেবারে আঁতকে ওঠেন আর একটু হলেই যে তাঁর হাত থেকে মিষ্টির হাঁড়ি প্রায় পড়ে যাচ্ছিল আর কি, কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়েই শিবরাম সমরেশ কে জিজ্ঞাসা করেন তুমি কে ? সমরেশ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন আমি একজন লেখক, নতুন লেখালিখি শুরু করেছি, শিবরাম উত্তর দেন‚ "সে ভালোই বুঝেছি। লেখক না হলে লেখকের সর্বনাশ আর কে করবে!"। আর একবার শিবরাম ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক ভদ্রলোক শিবরাম কে বলেই ফেললেন "দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ আপনার ভক্তি নিবেদন দেখছিলাম" তার উত্তরে শিবরাম বলেন, "ভক্তি-ফক্তির ধার ধারিনে আমি। আমার কাছে অতি ভক্তি-নেহাতই চোরের লক্ষণ। আদায়ের ফন্দিফিকির। আমার মা বলেছেন তাই দিনান্তে একবার অন্তত যাওয়া-আসার পথে এই প্রিমিয়ামটা দিয়ে যাই আমার। ''প্রিমিয়াম না প্রণাম কী বললেন ?'' প্রিমিয়াম, লাইফ ইন্স্যুরেন্সের, মা বলে দিয়েছেন, কলকাতায় পথে পথে অপঘাত, পদে পদে বিপদ, তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিরাময় ভাবে নিরাপদে নির্বিঘ্নে টেকসই হয়ে থাকতে হলে এই টেকস্ দিতে যেন কখনো না গাফিলতি করি"। এরকম আরও হাজার ঘটনা আছে চকরবরটি মশাই এর, তাঁকে নিয়ে লিখতে বসলে লেখা শেষ হবেনা তাই নটে গাছটিকে এখানেই মুড়িয়ে ফেলা ভালো।