দেশের ‘শেষ গ্রাম' এখন ‘প্রথম’

'ভারতের শেষ গ্রাম'- একসময় এই  হিসেবেই পর্যটকদের কছে পরিচিত ছিল উত্তরাখণ্ডের ‘মানা’ গ্রাম। এখন সেই গ্রামই ভারতের ‘প্রথম গ্রাম’। সম্প্রতি বর্ডার রোড অর্গনাইজেশন এই গ্রামের বাইরেই বসিয়েছে নতুন এক সাইনবোর্ড। তাতে লেখা- 'ভারতের প্রথম গ্রাম'।

নতুন এই সাইনবোর্ড নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি টুইটও করেন। এক  বার্তায় তিনি লেখেন, 'এখন থেকে মানাকে আর ভারতের শেষ গ্রাম নয় বরং প্রথম গ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।'

গতবছর অক্টোবরে চমোলি সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন , 'ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিকে সাধারণত শেষ গ্রাম হিসেবে উল্লেখ করা হলেও আদতে সেগুলি ভারতের ‘প্রথম গ্রাম’।

মনে করা হচ্ছে তাঁর সেই বক্তব্যরে ভিক্তিতেই শেষ থেকে প্রথমে এল মানা গ্রাম।

তবে একসময় উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত মানা ভিলেজ সরকারিভাবে উত্তরাখণ্ডের 'ভারতের শেষ গ্রাম' হিসেবেই স্বীকৃত ছিল।

বদ্রীনাথ থেকে ৩ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থিত মানা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯,০০০ ফুট উচ্চতায় ভারত ও তিব্বতের সীমান্ত ছুঁয়ে।

মানা গ্রাম ঘিরে জড়িয়ে আছে অজস্র পৌরাণিক কাহিনি। যদিও এক গ্রামে তিব্বতি সংস্কৃতির প্রভাব গভীর। এখানকার মানুষের বিশ্বাস,  পাণ্ডবরা স্বর্গ যাত্রার সময় এই গ্রাম অতিক্রম  করেছিলেন।

এই গ্রামে আছে ব্যাস গণেশ গুহা। বেদ ব্যাস বেদ গুফায় চারটি বেদ সংকলন করেছিলেন এই গুহায়। এখানেই প্রথম মহাভারত বর্ণনা করা হয়েছিল। গুহায় বেদ ব্যাসকে নিবেদিত একটি ছোট মন্দিরও রয়েছে। কথিত আছে, মন্দিরটি পাঁচ হাজার বছরের পুরনো।

গণেশ গুহাটি ব্যাস গুহা থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত। মনে করা হয় ভগবান গণেশ এখানে বসে মহাকাব্য মহাভারত রচনা করেছিলেন।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬৫৯৭ উচ্চতায় অবস্থিত নীলকন্ঠ শৃঙ্গ, এই গ্রামের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র। নীলকন্ঠ শৃঙ্গ ‘গড়োয়ালের রানি’ নামেও পরিচিত। তুষারে ঢাকা এই শৃঙ্গের উপরেই অবস্থান করছে বদ্রীনাথমন্দির।

আছে তপ্ত কুন্ড। কথিত আছে ভগবান বদ্রীনাথ এখানে তপস্যা করেছিলেন। তপ্ত কুন্ড জলপ্রপাতের অনেক ঔষধি গুণও পাওয়া গেছে, সেই সঙ্গে এই জলে ডুব দিলে নাকি চর্মরোগ নিরাময় হয় বলেও মানুষ বিশ্বাস করেন।

গ্রামের সরস্বতী নদীর কাছে একটি পাথরের সেতু আছে। এর নাম 'ভীম পুল'। কিংবদন্তী, দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম এই সেতুটি তৈরি করেছিলেন। কথিত আছে, পাণ্ডবরা ভীমপুল হয়ে অলকাপুরী গিয়েছিলেন। তাই একে স্বর্গের পথ বলা হয়। এই সেতু সম্পর্কে আরও বলা হয় যে পাণ্ডবরা যখন এখান দিয়ে গিয়েছিল, তখন দুটি পাহাড়ের মধ্যে একটি পরিখা ছিল। যা অতিক্রম করা যায়নি। এমন অবস্থায় ভীম একটি পাথর তুলে নিক্ষেপ করে ছিলেন, যা সেতুতে পরিণত হয়েছিল।

সড়ক ৫৮ সরাসরি মানাকে যুক্ত করেছে বাকি ভারতের সঙ্গে। ঋষিকেশ, রুদ্রপ্রয়াগ, বদ্রীনাথ হয়ে অবশেষে মানা গ্রামে পৌঁছানো যায়। এরপর এই সড়ক মানা পাসে মিশেছে। বদ্রীনাথ মন্দির থেকে এই গ্রাম মাত্র ৩ কিমি দূরে। অত্যন্ত দুর্গম এই গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ৩৫০-৪০০ জনের মতো। বাসিন্দারা হিন্দি কমই জানেন। কথা বলেন গাড়োয়ালি ভাষায়। মূলত এরা জডস ও বোথাস সম্প্রদায় ভুক্ত।

শীতকালে পুরো বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে যায় এই গ্রাম। তাই সেই সময় এই গ্রামের গোটা জনসংখ্যা নীচে নেমে আসে।

দেবভূমি গাড়োয়ালের অন্যতম আকর্ষণ হল চারধাম যাত্রা। যাত্রা থেকে ফেরার পথে অনেকেই বদ্রীনাথথেকে ঘুরে আসেন মানা। মানার নিকটতম রেলপথ হরিদ্বারের দূরত্ব প্রায় ২৭৫ কিলোমিটার। হরিদ্বার স্টেশনের বাইরে থেকেই মানা গ্রামে যাওয়ার বাস বা ট্যাক্সি পাওয়া যায়। উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন থেকে মানার দূরত্ব মাত্র ৩১৫ কিলোমিটার।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...