গাঁ ঘরের এক পোড়ো বাগান। লোক চলাচল নেই বললেই চলে। সেখানেই সকাল বেলা পথের ধারে বসে গান ধরেছে এক গায়ক। হারমোনিয়ামে রেওয়াজী গলা। শ্রোতা বলতে দুজন। গায়ক গৌরাঙ্গের পুত্র আর এক রাখাল বালক। তাকেই কেষ্ট ঠাকুর সাজিয়ে সকালবেলার কীর্তনের আসর।
ভবঘুরে মনের সহজ সুরে গৌরাঙ্গ গেয়ে চলেছেন, ‘ কানু কহে রাই...’
অনাবিল হাসি আর ভুবনমোহনী আবেদনে গায়কের ওপর থেকে চোখ সরানো দায়। আটপৌরে অভিনয়ে কী যে ‘রিলিফ’! মুহুর্তে হালকা হয়ে যায় মন।
সালটা ১৯৫৬। ছবির নাম ‘নবজন্ম’। গৌরাঙ্গের ভূমিকায় মহানায়ক উত্তম কুমার। গায়ক হিসেবেই এই ছবিতেই প্রথম তাঁর সামনে আসা। সেই প্রথম আর সেই শেষ।
নচিকেতা ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায় এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি।
গান ভালোবাসতেন। অভিনয়ের জগতে আসার বহু আগে থেকেই গানের চর্চার শুরু। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছিলেন নিদানবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া স্কুলে গানের শিক্ষক হিসেবে চাকরিও করেছিলেন কিছুদিন। বাড়িতে চলত নিয়মিত সঙ্গীত চর্চা। ঘরোয়া আসর তো বটেই স্টেজেও অনেক অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে গান গেয়েছেন।
বসুশ্রী সিনেমা হলের পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে তাঁর গান অন্যতম আকর্ষণ ছিল।
সুরকার হিসেবে উত্তম কুমারের প্রথম ছবি ‘কাল তুমি আলেয়া’। পরিচালনায় শচীন মুখোপাধ্যায়।
ছবিতেই গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর সঙ্গীতকার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করেছেন। সিনেমার মতোই তাঁর গানও একই জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু গানের নেপথ্যে থেকে যান তিনি।
শুধু রোমান্টিক ম্যাটিনি আইডল হিসেবে নয়, নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। নিজের প্রতিদ্বন্দী নিজেই। প্রতিবার ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। শিল্পের প্রতি প্যাশন আর নতুন স্রোতে ভাসবার অভিলাষ রঙিন করে তুলেছিল ভবানীপুরের অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি শুধু ‘নায়ক’ নন, রিয়েল লাইফ সিনেমা।