যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষি কাজের ক্ষেত্রেও আসছে নানা পরিবর্তন। চাষের ক্ষেত্রে জমি তৈরি করা থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমানে যত দিন যাচ্ছে শ্রমিকের সংখ্যা যেমন কমছে তার পাশাপাশি চাষের কাজেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সময়মতো শ্রমিক না মেলায় একদিকে যেমন সময়ে চাষের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না, তেমনই শ্রমিকের মজুরি মেটাতে গিয়ে খরচও বাড়ছে কৃষকের। তাই সময়ে কাজ শেষ করে ফেলতে যন্ত্রের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উন্নত মানের যন্ত্রের ব্যবহার করে অনেক কম খরচে চাষের কাজ শেষ করা যেতে পারে।
তবে কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রটি কৃষককে কিনতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। যন্ত্র ভাড়া নিয়েও কৃষক তাঁর প্রয়োজন মেটাতে পারেন। বেশ কিছু কৃষক একসঙ্গে মিলে যদি মনে করেন, সেই এলাকার চাষের প্রয়োজনে কোনও যন্ত্র কিনবেন, তা হলে আবেদনের ভিত্তিতে সরকারি অনুদান পাওয়ার সুযোগও রয়েছে। তবে জমি চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় 'রোটাভেটর' যন্ত্র এখন কৃষকের হাতের নাগালে রয়েছে। এটি ট্রাক্টর দিয়ে চালাতে হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে ৮ ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত মাটি ঝুরঝুরে করে ফেলা সম্ভব। এই যন্ত্র দিয়ে চাষ দিলে পূর্ববর্তী ফসলের অংশ জমির মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। ফলে মাটির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধি পায়। ধানের জমি কাদা করতে যন্ত্রটি বিশেষ কার্যকরী।
ঘণ্টায় এক একর জমির মাটি ঝুরঝুরে করতে পারে এই যন্ত্র। তাছাড়া অসমতল জমিকে সমান করতে এখন এসে গিয়েছে ‘লেজার ল্যান্ড লেভেলার’। এই যন্ত্রটিও ট্রাক্টরের সাহায্যে চালাতে হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রয়োজনীয় ঢাল বজায় রেখে জমি সমতল করা যায়। ফলে কম জলে তুলনামূলক বেশি জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়। এক একর জমি সমতল করতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। ঘণ্টায় যন্ত্রটি চালাতে ডিজেল লাগে ৪ লিটার। তাছাড়া ‘জিরো টিলেজ’ মেশিনের সাহায্যে সরাসরি বীজ বুনে দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন অনেকটা সময় বেচে যায়, তেমনই মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। এই বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাটির মধ্যে রয়েছে কোটি কোটি অণুজীব। মাটি যত লাঙল দিয়ে ওলোট-পালোট করা হবে, সেইসব অণুজীবের তত বেশি ক্ষতি হবে। জিরো টিলেজ মেশিনের সাহায্যে বীজ ও সার একইসঙ্গে সরাসরি একই গভীরতায় জমিতে প্রয়োগ করা সম্ভব। এই মেশিনের সাহায্যে ধান, গম, ভুট্টা চাষের প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এক থেকে দেড় ঘণ্টায় এক একর জমিতে বীজ বোনা যায় এই যন্ত্রের সাহায্যে। আবার আলুর বীজ বপন করার জন্য চলে এসেছে ‘পোট্যাটো প্ল্যান্টার’ নামে যন্ত্র। এছাড়া কৃষিজমিতে সেচের একটি আধুনিক পদ্ধতি ‘ড্রিপ ইরিগেশন’। এই পদ্ধতিতে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে উঁচু জলাধারে সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া হয়। তার পর সেই জল ফিল্টার করে নেওয়া হয়। যাতে পরিস্কার হয়ে যায়। সেই জল পাইপের সাহায্যে জমিতে প্রবাহিত হয়। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় কমবেশি ৫৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়ে থাকে। ধান রোয়া যন্ত্র ব্যবহারের জন্য চারার বিশেষ ধরনের ফরম্যাট তৈরি করতে হয়। ‘সিডার’ মেশিনের সাহায্যে একসঙ্গে চার বা ছয় সারিতে ধান রোপন করা যায়। এই যন্ত্র ব্যবহারে সারি থেকে সারির দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে। প্রয়োজনে সারিতে গুছির দূরত্ব, গুছিতে চারার সংখ্যা, চারা রোপণের গভীরতা কমানো বা বাড়ানো যায়। এজন্য পিভিসি ট্রে বা জমিতে পলিথিন শিটের ওপর ম্যাট বীজতলা তৈরি করতে হয়। ধান রোয়া যন্ত্র ব্যবহারে একদিন আগে জমি কাদা করা প্রয়োজন। এই ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে উন্নত পদ্ধতিতে খুব সহজেই কৃষি কাজ করা যেতে পারে।