শীতকাল মানেই বিট গাজর দিয়ে তৈরী ভেজিটেবিল চপ। এমনিতে বাচ্চারা বিট খেতে পছন্দ না করলেও এই চপটি কিন্তু সবাই পছন্দ করে। এছাড়াও বিট ভাজা, রোস্টেড বিট নানা খাদ্যই শীতের পাত আলো করতে থাকে। কিন্তু জানা আছে কি কাঁচা বিটের রস শরীরে পক্ষে কতটা উপকারী এবং রোজ বিটের রস পান করলে কি কি উপকার পাবেন, চলুন তার এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক।
বিটে শর্করার পরিমান অন্য সবজির তুলনায় অধিক হওয়ার কারণে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার বিট খেতে পারেন। জানা গেছে, প্রতিদিন সকালে যদি কাঁচা বিটের রস খাওয়া যায় তবে শরীরে হানা দেওয়া উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা একটু হলেও কমে। হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে এক গ্লাস বিটের রস ম্যাজিকের মত কাজ করে। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, প্রতি গ্লাস বিটের রস সিস্টোলিক রক্তচাপকে ৪ থেকে ৫ পয়েন্ট কমাতে সাহায্য করে। বিটে উপস্থিত প্রাকৃতিক নাইট্রেট এই কাজটি করে থাকে। শরীরে প্রবেশের পর এই নাইট্রেট বদলে যায় নাইট্রিক অক্সাইডে। এই নাইট্রিক অক্সাইড শরীরের রক্তজালিকাকে শিথিল করে অধিক রক্ত সংবহনে সাহায্য করে।
ক্লান্তি অবসাদ মানুষের জীবনের চিরসঙ্গী। হঠাৎ কোনো বড় কাজ রয়েছে পরের দিন অথচ শরীরে বাসা বেড়েছে ক্লান্তি। ত্রাতা হিসেবে আপনার উপকারে লাগতে পারে এই বিট। প্রতিদিন জিমে যাওয়ার আগে যদি এক গ্লাস করে বিটের রস পান করা যায় তবে শারীরিক ক্ষমতা প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এতেও ভূমিকা রয়েছে সেই নাইট্রিক অক্সাইডের।
প্রাকৃতিক প্রদাহ নির্মোক হিসেবে কাজ করে বিটের রস। প্রতিদিন বিটের রস পানের ফলে অনেক কঠিন অসুখ হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিটে উপস্থিত প্রচুর পরিমান বেটাইন পরিবেশের নানা স্ট্রেস থেকে শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, প্রোটিন এবং উৎসেচককে রক্ষা করে। একটি স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় ম্যাগাজিনের লেখা থেকে জানা গেছে, এই বেটাইন শরীরের নানা ইনফ্লামেটরি মার্কারের যেমন ক্রিয়েটিভ প্রোটিন, ইন্টারলিউকিন ৬, টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর আলফা প্রভৃতির পরিমান কমাতে সাহায্য করে।
বিটের লাল টুকটুকে রং এখন লিপস্টিক বানাতে বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে কিন্তু জানা আছে কি বিটের এই রং প্রাকৃতিকভাবে ক্যান্সারের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বিটের রস শরীরে একসাথে অনেকগুলি টিউমার ফর্মেশনের পথ অবরুদ্ধ করতে সক্ষম যা পরোক্ষভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধের সমান। এছাড়াও পরীক্ষা করে জানা গেছে, ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিটের রস উপকারী ভূমিকা পালন করে।
এতেই শেষ নয়, এগুলি ছাড়াও বিটের ঝুলিতে রয়েছে আরও নানা উপকারিতার সম্ভার। তাই শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বিটই শরীরের ভরসা এই কথাটি মাথায় রাখুন। প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন বিটের রস তা সে জলখাবারের আগেই হোক বা জিমে যাওয়ার আগে। শরীরের ভাগ্য বিটের উপর ছেড়ে দিয়ে খানিক নিশ্চিন্তেই সময় কাটান।