মোগলাই আর চাইনিজের নাম শুনে জিভে জল এলেও মায়ের হাতের ডাল ভাত, হালকা মাছের ঝোল কিন্তু বড়বড় রেস্টুরেন্টকেও হার মানায়। যাদের কাজের জন্য বাইরেই থাকতে হয় তারাই হয়তো বাড়ির খাওয়ার মর্মটা বোঝেন। লংকার মধ্যে কাঁচা লঙ্কা বা শুকনো লঙ্কা অথবা গুঁড়ো লঙ্কা হোক কিংবা ভাজা লঙ্কা তবে বাঙালির পাত কিন্তু লঙ্কা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। রবিবার দুপুরে মায়ের হাতের মাংস কষা লঙ্কা গুঁড়ো ছাড়া একেবারে ফিকা। আবার ডাল-ভাত হোক বা হালকা ঝোল বাঙালির পাতে লঙ্কাটা মাস্ট।
লংকার উপকারিতা নিয়ে হয়ে আসা নানা গবেষণার যে ফল কিন্তু আপনাদের চমক দেবে খুবই। আকারে ছোট হলেও যে বড় কাজ করা যায় তার প্রমান কিন্তু এই ক্ষুদ্র খাদ্য উপকরণটি ভালই দিয়েছে। ভেজে হোক কিংবা কাঁচা, পছন্দ মতো উপায়ে প্রতিদিন অন্তত একটা করে লঙ্কা খাওয়ার পরামর্শ কিন্তু চিকিৎসকরাই দিচ্ছেন। ওজন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা সকলেরই। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন লঙ্কা হজমের সহায়ক এবং এর পাশাপাশি শরীরে জমে থাকা মেদ কোষ গলাতেও লঙ্কার উপকারিতা রয়েছে| তাই ওজন কমাতে এর উপকারিতা ভোলার নয়| আই সি এম আর এবং কেন্দ্রীয় সরকার জানাচ্ছে, গত কয়েক দশকে আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগের প্রকোপ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে| এছাড়াও রোজের ডায়েটে কাঁচা লঙ্কাকে রাখলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই উপাদানটি দেহে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে সক্ষম ফলে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্টেট ক্যান্সারকে দূরে রাখতে কাঁচা লঙ্কা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
লঙ্কা খেলে ঝাল কেন লাগে জানেন? ঝাল কিন্তু কোনো স্বাদ নয়| ঝাল একধরনের অনুভুতি| এছাড়া লংকার উপাদান স্বাদের গ্রন্থিকে সক্রিয় করার সাথে মাথার হাইপোথ্যালামাস অংশকে সক্রিয় করে,যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়।গরমে শরীর সুস্থ থাকে কিছুটা। সাইনাস থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় লঙ্কার গুনাগুনে। লঙ্কায় থাকে ক্যাপসিন যা শরীরে রক্তের প্রবাহকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ধাঁচকে কমানোর সাথে সাইনাসের প্রভাবকেও কমায় লঙ্কা। ব্যাথার উপশমকারী হিসেবেও লঙ্কার ভূমিকা রয়েছে। আসলে লঙ্কার ভিতরে উপস্থিত উপকারি উপাদান সমূহ দেহের অন্দরে প্রবেশ করার পর এমনপ্রভাব ফেলে, যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমতে সময়ই লাগে না। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও বিশেষ ভুমিকা নেয় এই উপাদানটি। ফাইব্রিনোলেটিক অ্যাক্টিভিটির মাত্রাকে বাড়িয়ে মস্তিষ্কে ক্লটিং হতে দেয়না লঙ্কা। হার্টজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকক্ষেত্রেই কাঁচালঙ্কা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কাঁচালঙ্কায় যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন থাকায় হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভাল রাখতে সাহায্য করে কাঁচালঙ্কা। ভিটামিন সি-এর পরিমাণও লঙ্কায় বেশি থাকে। মুখের স্ট্রেচ মার্কস কমানোর সাথে ত্বককে ভালো রাখতেও কাঁচালঙ্কা অন্যতম উপকারী। তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন,খুব বেশি লঙ্কা খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে শুকনো লঙ্কার ঝালে কোনও সায় নেই তাঁদের। এতে খাদ্যনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রচুর পরিমানে ঝাল খাওয়ার ফলে পাচন ক্ষমতা কমে যায়|
মাত্রাতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো হয়না| খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও সেই বিষয়টি খেয়াল রেখেই সুস্থ থাকা খুব জরুরি। নিত্যদিন খুব বেশি লঙ্কা স্বাদগ্রন্থিকে দুর্বল করে ফলে ঝাল, মিষ্টি কোনো খাবারের স্বাদ বোঝার ক্ষমতাটাই হারিয়ে যায়। লঙ্কার উপকারিতার কথা ভেবে নিয়মিত লঙ্কা খাওয়ার অভ্যেস করতে পারেন তবে মাত্রাটা যেন বজায় থাকে।