ডিমের খোসার উপকারিতা

 

ডিম খেতে ভালোবাসেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন। যারা মাছ বা মাংস পছন্দ করে না তারাও কিন্তু ডিম খেতে বেশ পছন্দ করে। ডিম সেদ্ধ থেকে শুরু করে ডিমের পোঁচ বা ডিমের ডালনা, বাঙালির পাতে ডিমের উপস্থিতি অনিবার্য। ডিম যে শুধু সুস্বাদু তা কিন্তু নয় ডিমের আবার প্রচুর গুনও রয়েছে। তা ডিমের সাদা অংশটি হোক বা কুসুম, পুষ্টিতে ঠাসা দুটিই। ডিমে থাকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন, কোলেস্টেরল, ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন এবং এসেন্সিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড। ডিমের এইসব উপকরণের কারণে ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য বলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে। এ তো গেলো ডিমের কথা কিন্তু ডিমের খোসার যে কি কি গুন রয়েছে তা কি জানা আছে? চলুন আজ ডিমের খোসার নানা গুন নিয়ে আলোচনা করা যাক।

আমরা প্রতিবার ডিম রান্নার সময় যথারীতি তার খোসা ফেলে দিই। কিন্তু সেই খোসা ফেলে না দিয়ে যদি রেখে দেওয়া যায় তাহলে তা দিয়ে কি কি করা যায় চলুন জানা যাক......

১) ফেস প্যাক হিসেবে- ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে এই জিনিসটির জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ত্বক থেকে মৃত কোষ দূরীভূত করার ক্ষমতাও রয়েছে ডিমের খোসার। এর জন্য কি করতে হবে? এর জন্য ডিমের খোসা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। খোসা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে তাকে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এই গুঁড়োর সাথে ডিমের সাদা অংশ যৎসামান্য পরিমান মিশিয়ে নিয়ে সারা মুখে মেখে রেখে দিতে হবে। মিশ্রণটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে তাকে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন ব্যবহারের পর ত্বকের পরিবর্তন নিজেই দেখতে পাবেন। এই প্যাকটি প্রাকৃতিক স্ক্রাবারের কাজ ও করে।

২) ঘর পরিষ্কার করার কাজে- ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার করার জন্য এক প্রাকৃতিক ডিটারজেন্ট হিসেবে কাজ করে ডিমের খোসা। এছাড়া অনেকসময় দেখা যায়, বোতলের ভিতরে এমনভাবে দাগ হয়ে গেছে যে জায়গায় কোনোভাবে ব্রাশ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে বোতলের মধ্যে জল আর ডিমের খোসা গুঁড়ো করে ভরে ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে। ডিটারজেন্টের থেকে ভালো পরিষ্কার হবে। রান্না করার সময় অনেকসময়ই কড়াইতে পোড়া লেগে যায়। সেই পোড়া দাগ তুলতে অবস্থা কাহিল হয় সকলেরই। কিন্তু হাতের কাছে ডিমের খোসা থাকতে আবার চিন্তা কিসের! প্রথমে যেভাবে বাসন মাজেন সেইভাবে মেজে নিন। তারপর ডিমের খোসা দিয়ে আরেকবার। দেখবেন আগের মতোই চকচক করছে সেই বাসন যেই বাসন একটু আগে পড়া কালো দাগ নিয়ে বিরাজমান ছিল।

৩) বেসিনের মুখ খোলার কাজে- অনেকসময়েই নানা ছোট ছোট জিনিসপত্র বেসিনের নালার মুখে আটকে যায়। ফলে সেই জায়গা দিয়ে জল যেতে পারে না। অনেকসময়ই নালার মুখ খোলার জন্য কাঠিজাতীয় বস্তু দিয়ে জায়গাটি পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়। কিছু সময় এই পদ্ধতিতে কাজ দেয় আবার কিছু ক্ষেত্রে এতে কাজ হয় না। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও ডিমের খোসার ভূমিকা রয়েছে। ডিমের খোসা হাফ ভাঙা অবস্থায় যদি বেসিনের নালার মুখে অর্থাৎ ছাঁকনির কাছে রেখে দেওয়া যায় তাহলে সেই খোসা নালার মুখে অন্য কোনো শক্ত জিনিসের আটকানো রোধ করে। প্রাকৃতিক ভাবে যখন ডিমের খোসা পচে যায় তখন সে নিজেই নালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।

৪) বাগানের যত্নে- ডিমের খোসায় প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম এবং মিনেরাল থাকে। তাই ডিমের খোসা গুঁড়ো করে যদি গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে এই খোসা প্রাকৃতিক জৈব সার হিসেবে কাজ করে সেই গাছে ফলন বৃদ্ধি করে। ডিমের খোসা গুঁড়ো করে দেওয়ার ফলে তা পচতে একটি নির্দিষ্ট সময় লাগে। আর সেই সময়ের পর সে নিজেই জৈব সার হয়ে যায় এবং গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দেয়।

৫) ত্বকের সমস্যায়- ত্বকে অনেকসময় পোকামাকড় বা মশার কামড়ের ফলে জ্বালার অনুভূতি হতে থাকে। সেই ক্ষেত্রে নানা অয়েন্টমেন্ট লাগানো হলেও প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ডিমের খোসা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ডিমের খোসা গুঁড়ো করে আপেল সিডার ভিনিগারের সাথে মিশিয়ে একটি বোতলের মধ্যে রেখে দিন। ত্বকের কোনো জায়গায় জ্বালার অনুভুতি হলে বা কোনো জায়গায় মাইনর কাট হলে সেখানে একটি তুলোর বলের সাহায্যে লাগিয়ে নিন। দ্রুত আরাম পাবেন।

৬) গাছ লাগানোর জন্য- বাগান করতে কার না ভালো লাগে কিন্তু অনেকসময় সময়ের অভাবে বাগান করা হয়ে ওঠে না। সেই ক্ষেত্রে ডিমের খোসা ত্রাতা হিসেবে দেখা দিতে পারে। ডিম ফাটানোর সময় ডিমের সরু দিকটা অল্প করে ফাটান। পারলে একটি ছিদ্র করে নিন। সেখান দিয়ে ডিম টি ঢেলে নিন। এবার খোসাটি ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে ছিদ্রটি নখের সাহায্যে ভেঙে একটু বড় করে নিন এবং আলপিনের সাহায্যে ডিমের নিচের দিকেও একটি ছিদ্র করে নিন। এবার সেই খোসার মধ্যে মাটি ভরে নিন আর যে গাছ লাগাতে চাইছেন তার বীজ দিয়ে দিন। ঠিকমতো সময়ে সময়ে জল দিতে থাকলে কিছুদিন পরেই দেখা যাবে সেই ডিমের খোসার মধ্যেই সুন্দর গাছ বেরিয়েছে। ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে এই গাছগুলি ব্যবহার করা যাবে।

৭) পোষ্যের খাবার হিসেবে- ডিমের খোসা ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ৩০ মিনিটের জন্য ওভেনে বেক করে নিন। এর ফলে ডিমের খোসা সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যাবে। এবার এই শুকনো খোসা একদম মিহি করে গুঁড়ো করে নিন। এই গুঁড়ো পোষ্যের খাবারের উপর ছড়িয়ে দিন। পোষ্যের শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে তাহলে বাইরের ওষুধের পরিবর্তে এই পদ্ধতি একবার ফলো করে দেখতে পারেন।

৮) জৈব কীটনাশক হিসেবে- বাগানে ফলের গাছ করলে সেই গাছের যত্নও পর্যাপ্ত পরিমানে নিতে হয় কারণ যত্ন না নিলে নানারকম কীটপতঙ্গ এসে সেই গাছ কেটে দিতে পারে। তার জন্য নানারকম কীটনাশক ব্যবহার করেন  সকলেই যা পরোক্ষভাবে মানুষেরই ক্ষতি করে। সেই জায়গায় যদি প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা যায় তাহলে কেমন হয়? ডিমের খোসা গুঁড়ো করে সেই সবজি বা ফলের উপরে ছড়িয়ে দিলে অন্য কীটনাশক ব্যবহার করার দরকার পড়ে না।

ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা কম হয় না তাই ডিমের গুন সকলেরই জানা। কিন্তু ডিমের খোসার যে এতো গুন তা কি জানা ছিল? যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই প্রচ্ছদটির মাধ্যমে জেনে নিন। আর পরেরবার থেকে ডিমের খোসা ফেলে দেওয়ার আগে ভেবে দেখুন এমন কোনো কাজ রয়েছে কিনা যা ডিমের খোসা দিয়ে করা যায়।     

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...