ত্বকের যত্নে দুধের ভূমিকা

'দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে'  গান শুনতে শুনতেই আমাদের বড় হওয়া। দুধের পুষ্টিগুণের কথা কারোরই অজানা নয়। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদানগুলির মধ্যে ২২টি উপাদান উপস্থিত থাকে দুধে। সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইড- দুধের এই তিনটি উপাদান দুধের সাথে রক্তের অসমোটিক প্রেসারের সাম্যতা রক্ষা করে। এছাড়াও দুধে উপস্থিত থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ইনঅর্গানিক ফসফরাস। ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন এ থেকে শুরু করে দুধে উপস্থিত থাকে ভিটামিন ডি,  ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ-এর এক গুরুত্বপূর্ণ সোর্স হিসেবে দুধকে গণ্য করা হয়ে থাকে।

দুধ খেলে যে অনেকটা উপকার পাওয়া যায় তা ছোট থেকে বড় সকলেরই জানা। কিন্তু আজ আমরা জানবো দুধের এমন কিছু ব্যবহার যা আমাদের রূপচর্চার কাজে লাগতে পারে। যে দুধ শরীরের এতো উপকার করে সে ত্বকের উপকার করবে না তা কি হতে পারে? নিশ্চই নয়। কিন্তু রূপচর্চায় কিভাবে আমরা দুধ ব্যবহার করতে পারি চলুন জানা যাক।

কাঁচা দুধ ভিটামিন বি,  আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও নানা অপরিহার্য্য অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এর অফুরন্ত আধার। আর এই উপাদানগুলি স্কিন পলিশিং থেকে শুরু করে স্কিনের যাবতীয় উপকার করে থাকে। দুধ, স্কিনকে সবচেয়ে ভালো পরিচর্যা করে। ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য দুধ অত্যন্ত উপকারী। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকের থেকে অতিরিক্ত সেরাম শুষে নিয়ে ত্বককে ধীরে ধীরে ব্রণমুক্ত করে তোলে। কাঁচা দুধকে খুব ভালো ফেস ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর জন্য একটি পরিষ্কার তুলো কাঁচা দুধে ডুবিয়ে নিয়ে পুরো মুখের উপর ড্যাবিং মোশনে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর অন্য একটি তুলো নিয়ে মুখ থেকে সেই দুধ সার্কুলার মোশনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তুলতে হবে। এর ফলে মুখ থেকে যে পরিমান ধুলো তুলোর মধ্যে উঠবে তা নিজেই দেখতে পাবেন।

ড্রাই স্কিনের জন্য দুধ খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এর জন্য একটি পরিষ্কার তুলো ঠান্ডা দুধে ডুবিয়ে নিন। সেই দুধ সারা মুখে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। এই সময় একটি সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দুধের প্রলেপটি যখন শুকিয়ে আসবে সেই সময় কথা বলা বা কিছু খাওয়া একদমই চলবে না। এর ফলে মুখের আশেপাশে দাগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে মুখ ধোওয়া উচিত।

দুধে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্বল্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই শরীরের ট্যান পড়া জায়গাগুলিতে যদি কাঁচা দুধ লাগানো যায় তাহলে ধীরে ধীরে ট্যানের দাগ উঠে যেতে থাকে। ল্যাকটিক অ্যাসিড শুধু ট্যান দূর করতে সাহায্য করে তাই নয়। এই অ্যাসিড স্কিনের উপরে থাকা ডেড সেল বা মৃত কোষগুলিকে তুলে ফেলতেও সাহায্য করে। এর জন্য একটি বাটিতে কাঁচা দুধ নিয়ে এর মধ্যে একটি নরম কাপড় ডুবিয়ে সেই কাপড় শরীরের যেসব জায়গায় ট্যান হয়েছে সেইসব জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। সপ্তাহে তিনবার স্নানের আগে এই পদ্ধতিতে শরীরে দুধ মাখলে ট্যানের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

দুধে উপস্থিত আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড এক হালকা স্ক্রাবের কাজও করে থাকে। স্কিনের উপরে থাকা মৃত কোষের পর্দা সরিয়ে নরম প্রানোচ্ছল ত্বকের পুনরাবির্ভাব ঘটাতে সাহায্য করে।

গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন ত্বকে জ্বালাযন্ত্রণা শুরু হয় তখনও ত্বকের বন্ধু হিসেবে দেখা দেয় এই দুধ। শরীরের যেসব জায়গায় বেশি রোদের কারণে জ্বালা করতে শুরু করে সেই সব জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা দুধ লাগাতে পারলে তৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যায়।

তাহলে আজ আমরা জানলাম দুধ শুধু খেলেই নয় মাখলেও উপকার পাওয়া যায়। ত্বকের অতিরিক্ত কালোভাব কমানো থেকে শুরু করে ড্রাই স্কিনের সমস্যা সবটাই চোখের নিমেষে নিরাময় করতে পারে দুধ। তাই আজ থেকে খাদ্যতালিকায় দুধ রাখার পাশাপাশি রূপচর্চার তালিকাতেও রাখুন দুধ আর তফাৎটা দেখুন নিজের চোখেই।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...