মাটির কুঁজো বা জালা সম্পর্কে আজকালকার প্রজন্ম প্রায় জানেই না। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন গ্রীষ্মকাল মানেই প্রতি বাড়িতে আগমন হতো নতুন কুঁজো বা জালার। কারণ মাটির জালায় থাকা জল কিন্তু বেশ ঠান্ডা হয়ে থাকতো। তাই বাইরে থেকে অতিথি আসুক বাড়িতে কিংবা বাইরে থেকে ঘুরে এলেন মাটির জালার একটু ঠান্ডা জল তৃপ্তি দিতো সেই সময়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে আসতে লাগলো বিভিন্ন রকম এবং বিভিন্ন ফিচার নিয়ে ওয়াটার পিউরিফায়ার, এছাড়া ফ্রিজ তো আছেই। কোথাও কি হারিয়ে গেলো মাটির জালা? কি কি উপকারিতাই বা ছিল সেই মাটির জালায় যা আজকালকার প্রজন্ম মিস করছে চলুন জানা যাক...
আজকাল ফ্রিজের বাড়বাড়ন্তের জন্য শরীরের অবস্থা কিন্তু বেশ সঙ্গিন। কারণ রোদ থেকে ঘুরে আসার পরেই মানুষ ঠান্ডা এসি লাগানো ঘরে ঢুকে পড়ছে আর ফ্রিজ থেকে বোতল বার করেই সেই জল ঢালছে গলায়। তার ফলে গলা ব্যাথা থেকে শুরু করে সর্দি-কাশি, জ্বর সব হচ্ছে নিত্যদিনের সঙ্গী। অন্যদিকে মাটির জালার ঠান্ডা জল কিন্তু শরীরের উপর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেয় না।
মাটির এই পাত্র যারা তৈরী করে তাদের কুমোর বলা হয়। এই কুমারেরা বেলে মাটি ও এঁটেল মাটির সংমিশ্রনে জালা তৈরী করেন। বেলে মাটির সাথে এঁটেল মাটি ১:২ অনুপাতে মিশিয়ে নিলে তার থেকে তৈরী মৃৎপাত্র বা কুঁজো খুবই শক্তপোক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এর পর একে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। এইভাবে তৈরী মাটির জালায় জল রাখলে সেই জল প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে থাকে। মাটির পাত্রের গায়ে অজস্র সুক্ম ছিদ্রের অবস্থান হয় আর সেই ছিদ্র দিয়ে জল খুব তাড়াতাড়ি ঘনীভূত হয়ে যায় তাই জালার ভিতরে থাকা জল তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়।এছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী বলে এতে রাখা জলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার আশংকা থাকেনা।
এই মাটির কুঁজো বা জালা একটা সময়ে বেশ পিছিয়ে পড়লেও আবারও স্বমহিমায় ফিরতে চলেছে সে। কলকাতার লেক মার্কেটের একটি মাটির সামগ্রীর দোকানের বিক্রেতা জানালেন, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই তার দোকান থেকে বাইরে রপ্তানি হতে শুরু করে মাটির জালা। বর্তমান যুগে যে আবারও মাটির জালার উপর ভরসা রাখছে মানুষ এটা ভেবেই খুশি তিনি।