সর্দিকাশির জন্য সবচেয়ে উপকারী ওষুধ হিসেবে আমরা ছোটবেলা থেকেই তুলসীপাতার নাম শুনে এসেছি। সর্দিকাশির জন্য এর থেকে ভালো ঘরোয়া টোটকা আর হয়না বললেই চলে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন অল্প কাশি হলেও মা ঠাকুমার কিন্তু তুলসী পাতা বেটে তার মধ্যে মধু মিশিয়ে সেই তুলসীর রস আমাদের খাওয়াতেন। এখন বাজারে অনেকরকম ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সর্দিকাশির ক্ষেত্রে বড়রা খুব একটা তুলসী পাতার উপরে ভরসা রাখে না।কিন্তু আজও শিশুদের ক্ষেত্রে সমানভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে তুলসী ও মধুর মিশ্রণ। কিন্তু আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু সর্দিকাশি নয়। আজকে আমরা আলোচনা করবো ত্বকের ও চুলের যত্নে কিভাবে তুলসীকে ব্যবহার করা যায় সেই কথা.............
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে তুলসীকে ওষুধ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। বলা হয়, তুলসীতে এমন সব গুণাবলী রয়েছে যার ফলে ত্বকের ও চুলের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়। তুলসীর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রপার্টি চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করতে সাহায্য করে থাকে। তাই চলুন আজ চুলের যত্নে এবং ত্বকের যত্নে তুলসীর কিছু ব্যবহার জেনে নিই............
১) ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডের সমস্যা- ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডের সমস্যা কমাতে তুলসী উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তুলসী পাতা বেটে যদি কাঁচা হলুদের সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগানো যায় তাহলে ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।তুলসী পাতা বেটে মাখার থেকে তুলসীর রস বেশি উপকার করে থাকে। তুলসী পাতার রস রক্ত পরিস্রুত করতে সাহায্য করে থাকে। তুলসীর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রপার্টি ত্বককে রক্ষা করে থাকে।
২) খুশকির সমস্যা- খুশকির ফলে চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন প্রায় অনেক মানুষই হয়ে থাকেন। তার জন্য আমরা বাইরে থেকে নানাধরণের শ্যাম্পু কিনে চুলে লাগিয়েও থাকি। কিন্তু সবক্ষেত্রে উপকার মেলে না। সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা উপকার দিতে পারে। তুলসীতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রপার্টি থাকে তাই খুশকির সমস্যা কমাতে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার। এর জন্য কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে বেটে তাকে নারকেল তেলের সাথেমিশিয়ে নিন। চুলে যেমনভাবে তেল মালিশ করেন সেই একই পদ্ধতিতে তেল মালিশ করে এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন।
৩) চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা- চুল ঝরে যাওয়ার সমস্যা আমরা প্রায় সকলেই বছরের কোনো না কোনো ঋতুতে প্রতক্ষ্য করেই থাকি। তা সে শীতকাল হোক, গ্রীষ্মকাল হোক বা বর্ষাকাল। চুল ঝরার সমস্যা একবার শুরু হলে তা আটকানো বেশ কঠিন। তুলসী পাতা এক্ষেত্রেও বেশ উপকার করে থাকে। সমপরিমাণ তুলসীপাতা বাটা এবং আমলা পাউডার এইদুটিকে একসাথে মিশ্রিত করে সেই মিশ্রণটিকে জল দিয়ে অল্প পাতলা করে নিন। এবার সেই মিশ্রণ প্যাক হিসেবে চুলে লাগান। প্যাকটি সারারাতের জন্য মাথায় লাগিয়ে রেখে দিন। পরেরদিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন।এই প্যাকটি পাকা চুলের সমস্যাও কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
তুলসীপাতাকে হিন্দু শাস্ত্রে অত্যন্ত পবিত্র বলে ধরা হয়। তাই সকল পুজোতেই তুলসী পাতা প্রয়োজনীয়। দেব নারায়ণকে তুষ্ট করার জন্য তুলসী পাতা অর্পণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু শুধু পুজো নয়, আজ আপনারা জেনে নিলেন ত্বক ও চুলের যত্নে কিভাবে তুলসী পাতা ব্যবহার করবেন। তাই বাজার চলতি নানা প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে এইসব ঘরোয়া টোটকা আগে ট্রাই করে দেখতেই পারেন। উপকার অবশ্যই পাবেন।