কলকাতায় গত দুদিনের বৃষ্টিতে জল জমে শহরবাসী নাজেহাল হলো। এই সমস্যা আগামী দিনে আরো বাড়বে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, শহরের সব রাস্তাঘাট বর্তমানে সিমেন্ট ও পিচ দ্বারা বাঁধানো। তাই ভূতলের উপরিভাগের জল মাটির নিচে যাওয়ার কোনো উপায় এখন আর নেই। ফলে নিকাশি ব্যবস্থার মাধ্যমে যতটুকু জল মাটির নিচে নামার তা নামলেও কলকাতার ভূতলের জল শোষণের ক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে। এই কারণে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় জল জমার সমস্যা ক্রমে বাড়ছে।
বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, "শহরের সব রাস্তা বাঁধানো হওয়ার ফলে মাটির নিচে জল প্রবেশ করতে পারছেনা ফলে ভূতল শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। তাই মাঝে মাঝে এখন বিভিন্ন জায়গায় ধস নামছে। সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে এমন ঘটনা ঘটেছে।"
পরিবেশ বিজ্ঞানী সুজিব কর জানিয়েছেন, "ক্রমেই গ্রামগুলো শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে। নগরায়ণ প্রয়োজন, তবে তা বিজ্ঞান ভিত্তিক না হলেই সমস্যা বাড়বে, এখন তাই হচ্ছে। তাই নগরায়নের আগে মাটির ধারণ ক্ষমতা, যেখানে নগরায়ণ হচ্ছে সেখানকার মাটির প্রকৃতি ইত্যাদি পরীক্ষা করেই কাজে হাত দেওয়া উচিত। তা না হলে সমূহ বিপদের সঅম্ভাবনা। এটাই এখন হচ্ছে।"
কলকাতা এমনিতেই অপরিকল্পিত একটা শহর। তার ওপর বর্তমানে সব রাস্তা এখন সিমেন্ট না হয় পিচে ঢাকা। ফলে বর্ষার সময় কোনো ভাবেই মাটির উপরিভাগের জল মাটির নিচে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে ভূগর্ভে শুষ্কতা ক্রমেই বাড়ছে। আসলে অপরিকল্পিত নগরায়ণ-এর ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
তার উপর আদি গঙ্গা এখন প্রায় মজে গেছে। প্লাষ্টিক ও নানা বর্জ পদার্থ, বিভিন্ন আবাসনের নিকাশি ব্যবস্থা এখন আদি গঙ্গায় মিশেছে। তবে সোজা আদি গঙ্গার জল প্রবাহিত হতে না পারলেও সর্বত্রই আদি গঙ্গা যেখান দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেখানকার পার্শ্ববর্তী ভূমিভাগে ভাঙ্গন সৃষ্টি করছে। এর ফলে বরানগর অঞ্চলে কিছুদিন আগে আদি গঙ্গার ভাঙ্গনে একটি কারখানার কিছু অংশ জলের নিচে চলে গাছে।
পরিবেষবিদরা বলছেন, এভাবে ভূতলের জল শুকিযে যাওয়ার ফলে ভূমিকম্পর সম্ভাবনাও বাড়ছে। কেননা কলকাতার নিচ দিয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত চলে গেছে ইয়াসিন হিনজ ফল্ট লাইন। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পর ফলে এই ফল্ট লাইনটি বেশ দুর্বল হয়ে গেছে। তাই কলকাতায় যদি ৫ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্প হয় আর তা যদি তিন থেকে চার মিনিট ধরে চলে তবে কলকাতা, রাজারহাট, সল্টলেক, বেহালা, ভবানীপুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধংস হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। তাই পরিবেশ বিজ্ঞানীদের নির্দেশ, নগরায়ণ হোক তবে তা যেন মাটির চরিত্র বুঝে হয়।