কলকাতায় শহরে রয়েছে বহু কালীক্ষেত্র। এই বহু কালীক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম হল কলেজ স্ট্রিটের ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি।
কালীপুজোর সন্ধ্যায় ঠনঠনিয়া কালী বাড়িতে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গিয়েছিল। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে গেছিল মায়ের আরাধনা। এখানে সারা বছর নিত্য মায়ের পুজো চলেই। তবে বিশেষ পুজো হয় কালী পুজোর দিন। অনেক ভক্তদের বিশ্বাস যে এই মন্দিরে আসার পর থেকে মায়ের আশীর্বাদে তাদের জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে যে ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে উদয় নারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক মাটি দিয়ে সিদ্ধেশ্বরী কালী মূর্তি তৈরি করেছিলেন। সেই সময় এই মন্দির আকারে বেশ ছোট ছিল। তাল পাতার ছাউনি, মাটির দেওয়াল দিয়ে তৈরি ছিল এই মন্দির। সেই সময় জায়গাটিও ছিল জঙ্গলে ভরা আর তখন সেরকম ভাবে লোক-বসতি ছিল না । পরবর্তীকালে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে, শঙ্কর ঘোষ নামে এক ধনী ব্যক্তি নতুনভাবে কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তিনি বর্তমান কলেজ স্ট্রিটের ঠনঠনিয়া কালীমন্দিরটি নির্মাণ করেন। সঙ্গে আট চালায় মন্দির তৈরি করেন পুষ্পেশ্বরের। এখানে শিবের নাম পুষ্পেশ্বর।
প্রতিবছরই ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির মূর্তিটি সংস্কার হয় কারণ এটি মাটির মূর্তি। কালো আর লাল রং দিয়ে মূর্তিটি রং করা হয়। জৈষ্ঠ মাসে, ফলহারিণী অমাবস্যায় ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে কালী পুজো হয়। কার্তিক অমাবস্যায় আদি কালীর পুজো ও মাঘ মাসে হয় রটন্তী কালীর পুজো করা হয়।
জানা গিয়েছে, যখন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছোটবেলায় কলকাতায় আসেন, তখন এই এলাকাতেই থাকতেন। সেই সময় এই ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে এসে তিনি মা কালীকে গান শোনাতেন। তাই এই মন্দিরে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে সাধুরা প্রত্যেকেই কালী পূজোর দিন নিয়ম করে প্রতিবার আসেন।
এই মন্দিরে এসে রামকৃষ্ণ দেব যে বানী বলেছিলেন তা আজও মন্দিরের দেওয়ালে লেখা রয়েছে। সেটি হল ‘শঙ্করের হৃদয় মাঝে, কালি বিরাজে।’
মন্দিরের একদিকে যেমন মা সিদ্ধেশ্বরী কালী রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছেন পুষ্পেশ্বর বাবা।
গত রবিবার অর্থাৎ কালীপুজোর দিনের ভোর থেকেই মায়ের নিত্যনৈমিত্তিক পুজোর সঙ্গে অমাবস্যার কালী পুজো ঘিরে, ভক্তদের ভিড় একেবারে চোখে পড়ার মতো ছিল।