আজ চলে যাব যশোর রোডের দিকে। শতাব্দী প্রাচীন শিশু গাছের নরম ছায়াপথ দিয়ে মেঠো পথে হাঁটতে গিয়ে খানিক এগিয়ে গিয়েই পড়বে জোড়া শিবমন্দির। সেটা পার করলেই মিলবে ৩০০ বছরের পুরাতন সেই দুর্গা দালান।
এখন প্রতিমার গায়ে রূপসজ্জার কাজ শেষ। শেষ প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এখন দেখা যাচ্ছে এক অন্যরকম মায়ের মুখ। ঘন সবুজে ঘেরা এবং ধুলোমাখা পথের এক প্রান্তের এই পুজো ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে বহু ঐতিহ্য ও ইতিহাস।
পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধু নদের তীরে। সেই সভ্যতার অন্যতম দুই প্রধান কেন্দ্র হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। সেই মহেঞ্জোদারোর আবিষ্কারের সাথে যিনি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বেক্তি।
জানা যায় বহরমপুর থেকে এসে বনগাঁ ছয়ঘরিয়ায় এই দালানেই দুর্গাপুজো শুরু করেন গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হচ্ছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠাকুরদা।
শোনা যায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গাপুজো শুরু করেন গৌরহরি। দুর্গার যেমন মূর্তি তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, সেই আদলেই প্রতিমা গড়ার আদেশ দেন।
এবার আসি বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গার বৈশিষ্ট্য নিয়ে। সেটা হল তাঁর হাত। দেবীর দুই হাত মানুষের মতো। বাকি আটটি হাত বিড়ালের থাবার মতো। তাই এই প্রতিমার নাম ‘বিড়ালহাতি দুর্গা’।
প্রতিপদ থেকে দুর্গা দালানের একপাশে চণ্ডীতলায় শুরু হয় ঘটপুজো। বোধন থেকে প্রাচীন রীতি মেনেই চলে দেবীর আরাধনা। দশমীতে বরণের পরে মায়ের বিসর্জন হয়। তবে বাড়ির সদস্যরা তার জন্য সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
এটাও জানা গিয়েছে, পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে বাড়ির পিছনে নাওভাঙা নদীতে দেবীর বিসর্জন হয়।
তবে, যত সময় এগচ্ছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর সেই জৌলুস ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু প্রতি গ্রামবাসীদের এই শতাব্দীপ্রাচীন পুজোর আবেগ আর মাকে দেখার সেই ইচ্ছে একটুও পুরোনো হয়ে যায়নি।