৩৩৯ বছরে পা দিল হাওড়া জেলার শিবপুর রায়চৌধুরি পরিবারের দুর্গা পুজো। প্রতিবছর খুব জাঁকজমকভাবেই হয় এই পুজো। প্রচুর রীতি ও নিয়ম মেনে নিষ্ঠাভাবে পুজো করা হয়। তবে, এই বাড়ির পুজোর পেছনে রয়েছে এক ঐতিহ্যবাহী গল্প। জানেন কি সেই গল্প? কিভাবে শুরু হল মা দুর্গার পুজার্চনা? চলুন আজকে সেই সমস্ত ব্যাপারে কিছু কথা বলা যাক।
১৬৮৫ সালে থেকে শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরি এই পুজো শুরু করেছিলেন। বাড়ির ঠাকুরদালানে শুরু হয়ে মায়ের পুজো। কিন্তু কথিত আছে যে একটা সময় নাকি এই রায়চৌধুরি পরিবারের সমস্ত সদস্য দেবী চণ্ডীর ভক্ত ছিলেন।
তবে কি করে শুরু হল মা দূর্গার আরাধনা?
কথিত আছে, রাজা রামব্রহ্ম রায়চোধুরির রাজবাড়ির কাছেই শিবপুরের বালি পুকুর নামে এক পুকুর ছিল।সেখানে রোজ দুপুরে একটি মেয়ের সঙ্গে খেলা করতেন রাজকন্যা। খেলা শেষে হলে পুকুরে নেমে স্নানও করতেন। কিন্তু আশ্চর্য বিষয়টি ছিল যে সেই মেয়েকে পরিবারের কেউ কখনো দেখেনি। এমন এক কাল্পনিক মেয়েটি কে? কে, যে রাজকন্যাকে রোজ দুপুরে ডেকে নিয়ে যায়? কোথায় থাকে সেই মেয়েটি? এসব জানতেই মেয়েকে দিয়ে একদিন তাঁর পুকুরের খেলার সঙ্গিনীকে ডেকে পাঠান রাজা। রাজকন্যার সঙ্গিনীর নাম ছিল পদ্মাবতী।
পরদিন দুপুরে পুকুরে গিয়ে রাজকন্যা যখন পদ্মাবতীকে বলেন যে রাজা ডেকেছে তাকে, তখন পদ্মাবতী স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সে রাজার নির্দেশ মানবেন না। সে কারও সঙ্গে দেখা করবে না। তিনি আরও জানিয়ে দেন যে, তিনি কারও সঙ্গে দেখা করেন না। তিনি যদি মনে করেন কারও সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন রয়েছে তবে তিনি তাঁর কাছে নিজেই পৌঁছে যান।
রাজকন্যাকে একথা বাবাকে গিয়ে বলতেই রেগে যান তিনি। সেদিনই রাজা পেয়াদাদের পাঠান পুকুর থেকে পদ্মাবতীকে খুঁজে নিয়ে আসতে। কিন্তু ওই বালি পুকুরে গিয়ে দেখেন পুকুর ধারে শুধু পায়ের ছাপ রয়েছে আর সেখানে কেউ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সেদিন খোঁজ পাওয়া যায়নি পদ্মাবতীর।
তারপর ঘোতে এক অদ্ভুত এক ঘটনা। সেই রাতেই পদ্মাবতী রাজা রামব্রহ্মকে স্বপ্নে দেখা দেন। স্বপ্নে তিনি রাজাকে বলেন, তিনি আসলে দেবী দুর্গা। তিনি রাজকন্যার বন্ধুর রূপে রোজ দুপুরে বালি পুকুরে খেলা করেন। তিনি জানান, তাঁর পুজো যেন শিবপুরের রায়চৌধুরি পরিবারে হয়।
এই স্বপ্ন দেখার পর রাজা রামব্রহ্মের চোখ খোলে এবং তারপর থেকে এখনো অব্দি নিয়মিত প্রতিবছর মা দুর্গা পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ৩৩৯ বছরে পা দিল এই পুজো।
এই বাড়ির গৃহদেবতা মা ব্যাতাইচণ্ডী।
রায়চৌধুরি বাড়িতে একটি ঘরে একটি বেলগাছ রয়েছে। সেই বেলঘরেই দেবী দুর্গার ঘট রাখা হয়। দুর্গা দালানে দেবীমূর্তির পাশাপাশি দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে বেলঘরে রাখা ওই ঘটও পুজো করা হয়।
এরপর, দশমীর দিন এই ঘট বিসর্জন করার পাশাপাশি দেবী দুর্গার মূর্তি ভাসান দিয়ে তাঁর মাথার মুকুট গৃহদেবতা ব্যাতাইচণ্ডীর মাথায় পরানো হয়।
রায়চৌধুরি পরিবারে নিয়মিতভাবে সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিনই পাঁঠাবলি হয়।
শিবপুরে রায়চৌধুরি পরিবারের মতে রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরির স্বপ্নে আসা পদ্মাবতী প্রতিবছর দেবী দুর্গা রূপে রায়চৌধুরি পরিবারে আসেন ও পুজো নেন।