অভিনব জাতীয় পতাকা

 

আধুনিক যুগের মেশিনের বাড়বাড়ন্তে বিপাকে পড়েছেন তাঁতশিল্পীরা। যথাযথ মর্যাদা না পাওয়া থেকে শুরু করে নিত্য নৈমিত্তিক অবহেলা ধীরে ধীরে সেই সব শিল্পীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল তাদের চিরাচরিত জীবিকা থেকে। অনেকভাবেই তারা হারিয়ে ফেলছিল তাদের স্বত্তাকে। অন্য জীবিকার খোঁজের সাথে সাথে তারা কিন্তু বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের পুরাতন শিল্পকলাকে। নানা সময়ে সরকারের তরফ থেকেও তাদের সাহায্য করা হলেও সেই শিল্পের সঠিক রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছিলো না।

       সম্প্রতি তাদের এই শিল্পকে উন্নীত করার জন্য বহু পরিশ্রম করে দেশের একটি জাতীয় পতাকা বুনে দেশ জুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের এক তাঁতশিল্পী। তাঁতশিল্পকে আরও আগে এগিয়ে নিয়ে চলার উদ্দেশ্যে এই পতাকা বানিয়েছেন রুদ্রক্ষলা রামালিঙ্গ সত্যনারায়ণ। অন্ধ্রপ্রদেশের ভেমাভরম গ্রামের রুদ্রক্ষলা ছিলেন এক হতদরিদ্র তন্তুবায় পরিবারের সন্তান। প্রথম থেকেই পরিবারের ব্যবসাকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে তার। তার সাথেই জীবনে কোনো বড় ঘটনার শরিক হবেন এমনটাও ইচ্ছে ছিল শিল্পীর। স্বাধীনতা দিবসে তার বোনা জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হবে লালকেল্লায় এমনটাই ইচ্ছে তার। এই অভিপ্রায় নিয়ে একটি জাতীয় পতাকা বুনেছেন তিনি। না, জাতীয় পতাকায় কোনো অভিনবত্ব নেই। অভিনবত্ব রয়েছে তার বনন কার্যে। সম্পূর্ণ পতাকাটি তিনি বুনেছেন একবারেই। অর্থাৎ কোনোরকম সেলাই তিনি করেননি সেই পতাকাকে সঠিক রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রথমে ৪x মাপের একটি পতাকা বোনেন তিনি। বোনার পর তিনি ভাবেন এই পতাকাটি হয়তো লাল কেল্লায় উত্তোলন করার জন্য সঠিক নয়। তখন তিনি x ১২ মাপের একটি পতাকা বোনেন। এই বিশেষ জাতীয় পতাকা বুনতে তার সুতো লেগেছে মোট ২৪০০মোট চারটি রঙের সুতো এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। পতাকার মাঝে অশোক চক্র যাতে বিশেষ ভাবে লোকের চোখের নাগালে আসে তার জন্য চক্রের প্রতিটি দণ্ডের প্রতি নজর দিয়েছেন তিনি। শিল্পী জানিয়েছেন, পতাকাটিতে কোনোরকম সেলাই না থাকার কারণে এই পতাকাটি বুনতে সময় লেগেছে মোট ৪ বছর। এছাড়া এই সম্পূর্ণ পতাকা তৈরী করতে তার খরচ হয়েছে ৬.৫ লক্ষ টাকা। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রুদ্রক্ষলা জানান, তার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার বসতবাড়িটিও তিনি বিক্রি করতে পিছপা হননি। তিনি জানান, এই কাজের জন্য রাজনৈতিক মহল থেকেও কিছু অর্থ সাহায্য পেয়েছেন তিনি।

শিল্পীর আর্জি, তাঁতশিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এরকম একটি পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। তার আশা, সরকারের পক্ষ থেকে তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে উপকৃত হবে রুদ্রক্ষলার মতো আরও অনেক শিল্পী। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...