একটা বাঁশ। তার মাথায় সাইকেলের একটা বাতিল চাকা। চারদিক দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। হঠাৎ দেখলে মনে হবে বাড়ির ছাদে পায়রা বসার দাঁড় হয়ত। আসলে কিন্তু তা নয়।
এ হল ‘বজ্রবহ যন্ত্র’। Lightning arrester যন্ত্র। ভয়াবহ বাজের হাত থেকে রক্ষা করবে এই যন্ত্র। সোদপুর দেশবন্ধু বিদ্যাপীঠ ফর বয়েজ-এর অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রাজ ঘোষ এই বজ্রবহ যন্ত্রের জন্মদাতা। তার আবিষ্কার সাড়া ফেলে দিয়েছে সব মহলে। এসেছে জাতীয় পুরস্কারের স্বীকৃতি।
গত দু’বছর ধরে বন্ধ স্কুলের পড়াশোনা। ক্লাস চলছে অনলাইনে। তার মধ্যেই এই সাফল্য অক্সিজেন হয়ে উঠেছে স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে। প্রায় এক বছর ধরে চলেছে বজ্রবহ যন্ত্র তৈরির কাজ। রাজের সাফল্যের নেপথ্যে প্রধান উৎসাহদাতা স্কুলের শিক্ষক ড. পশুপতি মন্ডল।
আর্থিকভাবে দুর্বল, পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কথা ভেবেই মূলত এই উদ্ভাবন। ছাত্রের সাফল্যে খুশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নরেন বক্সী।
কালবৈশাখী থেকে বাদল মরসুম বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা বারবার এসেছে খবরের শিরোনামে। এক দিনে বজ্রপাতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই বাংলাতেই। পরপর বাজে মৃত্যুর ঘটনা ভীষন রেখাপাত করেছিল অষ্টমশ্রেণীর ছাত্রটির মনে। বিশেষ করে কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী মানুষের মৃত্যু। সুরাহার পথ খুঁজতে গিয়ে মাথায় আসে বজ্রবহ যন্ত্রের পরিকল্পনা।
বজ্র বহন করে মাটিতে প্রবেশ ঘটাবে বজ্রবহ যন্ত্র। ফাঁকা মাঠ, জলাজমি, খেলার ময়দান কিংবা উঁচু বাড়িতে ৩০ থেকে ২৫ ফুট বাঁশের ওপর লাগাতে হয় এই যন্ত্র। আর্থিং-এর জন্য সঙ্গে থাকে একটি মোটা তামার তার। মাটির গভীরে চারকোল, কার্বন দিতে হয় ঠিক মতো আর্থিং করার জন্য। ছাত্র রাজ ঘোষের কথা অনুযায়ী, সব অনুকূলে থাকলে একদিনে তিনটে যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব।
পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তর ওড়িশা জুড়ে একটি বজ্রপাতের হটস্পট রয়েছে। অর্থাৎ, এই অঞ্চলে ঘন ঘন বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত দু’বছরে বজ্রপাতের অনুপাত যেমন ব্যাপক হারে বেড়েছে, পরবর্তী সময়ে এই হার আরও বাড়ার আশংকা।
এই পরিস্থিতিতে খুদে ছাত্রের আবিষ্কার নজর কেড়েছে সব মহলেই। স্কুল পরিসরে বিজ্ঞান প্রতিভা খুঁজে পাওয়ার দিকটিও উল্লেখযোগ্য। এক ছাত্রের সাফল্য এবং চর্চা বাকি ছাত্রদেরও উৎসাহিত করছে।
বজ্রপাতের বিপদ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা এবং এই আবিষ্কারকে সাধারণের কাছে সহজলভ্য করে তুলে দুই বিষয়েই কাজ করেছে সোদপুরের এই স্কুল। আশা বৃহত্তর ক্ষেত্রে সুফল আসবেই...