গণেশের বাহন হিসেবে পরিচিত ইঁদুর মশাই গেরস্থের বাড়িতে তার উৎপাতের জন্য বিখ্যাত । শুধু তাই নয় এই ক্ষুদ্র প্রাণীর অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কতই না ব্যবস্থা ! তার গুরুত্ব বোঝা সে কি আর সাধারণের কম্ম ! কিন্তু সেই কম্মোটি একমাত্র বোঝেন বিজ্ঞানীরা । কারণ এই ক্ষুদ্র প্রাণী বিজ্ঞনীদের এক বিশেষ বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যম। গবেষণার মূলত জীববিজ্ঞানের যাবতীয় পরীক্ষায় এমনকি ছোট্টবেলার পাঠ্য বইয়েও বিভিন্ন উদাহরণেই হাজির এই ইঁদুর বাবাজি। কিন্তু এদের এহেন আত্মত্যাগের কথা সর্বজনবিদিত হলেও আজ পর্যন্ত সেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা কারোর মনে হয় নি। কিন্তু সেই আক্ষেপও পূর্ণ হয়েছে। কিছুদিন আগে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ সাইটোলজির বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটারীর সমগ্র ইঁদুর কুলের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যেই রাশিয়ার সরকারের অনুমোদনে বিশেষ মূর্তি তৈরী করেছেন ।
ক্যান্সার গবেষণা বা জিনগত পরীক্ষা - নিরীক্ষা - সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা শরণাপন্ন হয়েছেন এই ইঁদুরের। আর তার সাফল্যের ভিত্তিতেই এগোয় পরবর্তী ধাপ ও মানুষের ভবিষ্যৎ। অবশ্য এই কাজে প্রাণ বিসর্জন হয়েছে অসংখ্য ইঁদুরের, আর সেই আত্মত্যাগই বিজ্ঞানের পরবর্তী সাফল্যের ভিতকে সুদৃঢ করে তোলে। তাই তাদের এই অবদানকে সম্মান জানাতেই রাশিয়ার ইনস্টিটিউট অফ সাইটোলজির বিজ্ঞানীরা এই ল্যাবরেটারীর ইঁদুরকে উৎসর্গ করে তৈরী করেছেন একটি মূর্তি। রাশিয়ার সাইবেরিয়ার নোভোসিবিরস্ক শহরে এই ল্যাবরেটরির সামনের একটি পার্কে এটি অবস্থিত। সাইটোলজি এবং জেনেটিক্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ৫৫ তম বার্ষিকীর সম্মানে স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১ জুন, ২০১২ সালে। মাউসের নকশাটি তৈরী করেছিলেন নোভোসিবিরস্ক শিল্পী আন্দ্রে খার্কেভিচ, যিনি চূড়ান্ত নকশায় বসার আগে দশটিরও বেশি স্কেচ তৈরি করেছিলেন। তিনি ক্লাসিক এবং স্টাইলাইজড প্রাণীর চিত্রগুলির বিভিন্ন সংস্করণের মধ্যে থেকেই ডিএনএ হেলিক্স বোনা একটি মাউস নির্বাচন করেছিলেন -যাতে মূর্তিটি অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও যুক্তিযুক্ত হয়। ভাস্কর আলেক্সি এগ্রিকোলিয়ানস্কি মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন। যেখানে গ্রানাইট পাথরের একটি চশমা পরিহিত ইঁদুর উল বোনার সামগ্রী নিয়ে একটা ডিএনএ তৈরী করছে।
গেরস্থের বাড়ির জন্য সে যতই অকিঞ্চৎকর হোক না কেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। যদিও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শারমেয় একাধিকবার সম্মানের নিদর্শনবাহি হলেও এহেন মূর্তি স্থাপন করে ইঁদুরের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের ঘটনা বিশ্বে এই প্রথম। বলতে দ্বিধা নেই যে এর অভিনবত্ত্ব একাধারে পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।