অকপট শুভ রায়চৌধুরী

কালারস বাংলায় চলছে ধারাবাহিক মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য’। এই ধারাবাহিকের টি আর পি’র কাঁটা শুরু থেকেই ঊর্ধগামী। নিমাই চরিত্রটিকে দর্শকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন শুভ রায়চৌধুরী। শুভ টেলিদুনিয়ার পরিচিত মুখ। নেগেটিভ ও পজিটিভ দুই ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তিনি। 

নিমাই চরিত্রটির জন্য নিজের লাইফস্টাইলে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন শুভ রায়চৌধুরী। মদ্যপান এমনকী আমিষ খাবার খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পার্টিমুখী শুভ পার্টিতে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার বদলে তিনি গীতা, শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলী, চর্যাপদ পড়তেন। বলেছিলেন- “একটি চরিত্রকে মেলে ধরতে হলে সবার আগে সেই চরিত্রটির ঝাঁঝ বুঝতে হবে। সেই জায়গায় নিজেকে রেখে ভাবতে হবে আমি যদি সত্যিই ওই মানুষটি হতাম তা হলে কী করতাম। তাই আমি নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করছি শুধুমাত্র এই নিমাই চরিত্রের জন্য।” এখানেই শেষ নয়, শুভ’র আদরের ভাই শুভর অভিনয় নিয়ে খুব আপ্লুত ছিল। দাদার অভিনয়ের খুঁটিনাটি সব কিছু সে দেখত মন দিয়ে। সেই ভাইয়ের আকষ্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন শুভ। তবে, নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন, কারণ ভাই চাইত দাদা অভিনয়টা চালিয়ে যাক। আর মারা যাওয়ার আগেই ভাই জেনে গিয়েছিল যে দাদা এবার নিমাই চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। সে খুব খুশি ছিল এই ব্যাপারটা নিয়ে। আর তাই ভাইয়ের আনন্দকে সম্মান দিতে দিন সাতেকের মধ্যে শুটিঙে হাজির হন শুভ। ইউনিটের সবাই ভেবেছিল শুভ নিশ্চয়ই কাজটা করবেন না, প্রথম দিনের শুটিঙে শুভ হাজির হবে কি হবে না তা নিয়েও বেশ চিন্তায় ছিল ইউনিট। কিন্তু না। সব সামলে প্রথম দিনই সঠিক সময়মতো ফ্লোরে হাজির ছিলেন শুভ। 

এহেন শুভ কেন সরে এলেন চরিত্রটি থেকে? শুভ জিয়ো বাংলার এই সাংবাদিককে জানিয়েছেন- "পারিশ্রমিক পাওয়া বাকি এখনও অনেক। মুখ বুজে কাজ করতে পারলে তুমি ভাল। পারিশ্রমিক চাইলেই তুমি খারাপ।  আমি আমার প্রাপ্য টাকা টুকু চেয়েছিলাম। পাইনি এখনও। হাউজ বদল হয়েছে। আগের হাউজের সঙ্গে আজকের হাউজের কী কথা হয়েছে আমার জানা নেই। এখনকার হাউজের সঙ্গে যতদিন কাজ করেছি সেখানে পারিশ্রমিক নিয়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু আগের হাউজের কাছে আমি শুধু আমার তিন মাসের বকেয়া টাকা চেয়েছিলাম। সেটাই আমার দোষ। টেলিভিশনে কাজ করতে আমরা এখন ভয় পাচ্ছি। আর কতদিন দিন রাত এক করে খেটে আমরা পারিশ্রমিকের আশায় তীর্থের কাকের মতো বসে থাকব? আজ না হয় ১৪ ঘণ্টা শুটিং হয়, এমনও দিন গেছে ২৪ ঘণ্টা টানা কাজ করে গেছি। কোনও চরিত্রকে মানুষের কাছে নিপুণভাবে তুলে ধরাটা সহজ কাজ নয়। আমরা সেটা করি মন প্রাণ দিয়ে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিনের শেষে পারিশ্রমিক পাব কিনা কোনও নিশ্চয়তা নেই আজ। তাই আমিও চরিত্রটা থেকে সরে এলাম। চ্যানেলও আমার সঙ্গ দেয়নি। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে এই ভেবে যে এতদিন কাজ করলাম অথচ আমার এতটুকু সম্মান নেই! প্রাপ্য পারিশ্রমিকটুকুও আমি দাবি করতে পারি না? আমি ইন্ডাস্ট্রির এই অবস্থার চরম প্রতিবাদ জানাচ্ছি।"

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...