প্রাইভেট জেট তো শুধু কোটিপতি মানুষেরা চড়তে পারে! ঠিক এমনটাই মনে করেন পৃথিবীর সমস্ত মধ্যবিত্ত লোকজন। প্রাইভেট জেট যেখানে শুধু আপনি থাকবেন কিংবা আপনার চেনা মানুষেরা, এটা তো পুরোই স্বপ্ন। এমনটা শুধু স্বপ্নেই ঘটতে পারে।
তবে, এই স্বপ্নই হয়েছে সত্যি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। সম্প্রতি গ্রিসে বিমানের দুটি টিকিট কেটেছিলেন এক দম্পতি। আর তাঁদের স্বপ্ন হয়ে উঠল সত্যি। তাঁরা কখনও স্বপ্নে ভাবেননি, এমন চমকের অপেক্ষায় ছিল এবং সাক্ষী হবেন তাঁরা। কিন্তু হল।
এই পুরো ঘটনাটাই ঘটেছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে। প্রায় ২ বছর পর সেই খবর সকলের সামনে প্রকাশ্যে আসছে। দম্পতির নাম ছিল কেভিন ও সামান্থা ম্যাককুলিয়ান। তাঁরা দুজনে এক সপ্তাহের ছুটিতে ম্যানচেস্টার থেকে কর্ফু যাওয়ার জন্য ম্যাঞ্চেস্টার জেট ১৭-এর দুটি টিকিট কাটেন। কিন্তু তারপরেই ঘটে সেই আশ্চর্য ঘটনা। বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর তাঁরা জানতে পারেন যে ওই বিমানে তাঁরা ছাড়া আর কোনও যাত্রী নেই। এরপর সেই পুরো যাত্রায় তাঁদের প্রাইভেট জেটের মতন সমস্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
আসলে, জানা গিয়েছে যে সামান্থা এবং কেভিন বিমানবন্দরে পৌঁছায়, তখন দেখে সেই স্থানে আর কোনও যাত্রী নেই। ফলে, তাঁরা ভাবেন যে বোধহয় তাঁরা দেরি করে ফেলেছেন। তাই সব যাত্রীরা বিমানে উঠে পড়েছে। এরপর তাঁরাও তড়িঘড়ি ফ্লাইটে ওঠেন। এরপরেই দেখেন যে ফ্লাইটে আর কোনও যাত্রী নেই, সমস্ত সিট ফাঁকা।
এক সাক্ষাৎকারে সামান্থা জানিয়েছেন যে, তাঁরা যখন চেক ইন করছিল, তখনই তাঁদের মনে একটা অদ্ভুত সংশয় লাগছিল। কারণ তাঁরা আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাননি। এমনকী পাসপোর্ট কন্ট্রোল সেন্টারও দেখতে পাইনি কাউকে। এমনটা তো কখনই হয়েনি তাঁদের সাথে!
প্রথমে তাঁরা ভাবেন যে তাঁদেরই কোনও ভুল হচ্ছে! অর্থাৎ হয় ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছে, আর নয়তো তাঁদের দেরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকাতে তাঁরা দেখে যে, ঠিক সময়তেই তাঁরা এসেছেন। এরপর তাঁরা বিমানবন্দরের কর্মীদের জিজ্ঞেস করতে, তাঁরা জানান যে সব তথ্যই ঠিক আছে, কিছু ভুল নেই। তাও দম্পতির মনে সংশয় থেকেই যায়।
এরপর তাঁরা সিঁড়ি বেয়ে বিমানে উঠতে থাকেন। সেই সময় যুগলকে ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন এবং দুজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট কেভিন এবং সামান্থাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এরপরেই তাঁদের জানানো হয় যে এই ফ্লাইটে তাঁরাই একমাত্র যাত্রী।
অবাক হয়ে যায় তাঁরা! এরপর দম্পতি সিটে বসলে ফ্লাইট কোথায় যাচ্ছে, বাইরের আবহাওয়া সম্পর্কে সমস্ত তথ্য দেন পাইলট। এই তথ্য দেওয়াটাই রেওয়াজ। প্রত্যেক ফ্লাইটে দেওয়া হয়।
এরপর সেই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেন, ‘এটাকে আপনারা প্রাইভেট জেট মনে করুন। আপনাদের যা খুশি করতে পারেন’।
এমন এক ঘোষণা শুনে কেভিন আর সামান্থা তো অবাক হয়ে যায়, তাঁরা যেন আকাশ থেকে পড়ে! দুজনের চোখে মুখে আসে এক বিস্ময়ের চিহ্ন। এরপর তাঁদের ক্রু সদস্যরা শ্যাম্পেন এবং খাবারদাবার দেয়। হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে সকলে। তবে, সব খাবারের জন্য কোনও চার্জ নেননি ফ্লাইট কর্মীরা।
৪ ঘণ্টার পুরো ফ্লাইট জার্নিটা কীভাবে কেটে গেল সেটা বুঝতেও পারেননি তাঁরা। এরপর এক সাক্ষাৎকারে কেভিন এবং সামান্থা বলেছিলেন যে ওই দিন যেন তাঁদের লটারি লেগেছিল।