অত্যধিক জ্বর সাথে বমি ও ডায়রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলেই চিকিৎসকেরা রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ এই লক্ষণগুলি মূলত টাইফয়েডের লক্ষণ হয়ে থাকে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টাইফয়েড হলো একধরণের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। ব্যাকটেরিয়া সালমনেল্লা টাইফি-র আক্রমণের ফলেই শরীরে থাবা বসায় টাইফয়েড। কন্টামিনেটেড জল বা খাবার থেকেই ছড়ায় এই রোগটি। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগ মূলত হয়ে থাকে অপরিচ্ছন্ন থাকার ফলে। খাওয়ার আগে হাত না ধুলে খাবারের সাথে হাতে থাকা জীবাণু প্রবেশ করতে পারে শরীরে। আর তার থেকেই হতে পারে টাইফয়েড। এই রোগটি খুব কমন একটি রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসা না হলে এই রোগটি থেকে প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলুন আজ এই রোগটি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক..........
টাইফয়েডের লক্ষণ-
ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসার ৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে শরীরে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগের মূল লক্ষণ হলো অত্যধিক জ্বর এবং সারাগায়ে ফুসকুড়ির আবির্ভাব। এই রোগের ক্ষেত্রে জ্বর মোটামুটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে থাকে। সব রোগীর ক্ষেত্রে অবশ্য গায়ে ফুসকুড়ি বেরোনোর সমস্যাটি দেখা যায় না। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র লাল স্পট হয়েই থেকে যায়। এই রোগের অন্য লক্ষণগুলির মধ্যে কিছু হলো, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, দুর্বলতা, মাথা যন্ত্রনা প্রভৃতি।
রোগের চিকিৎসা-
এই রোগের মূল চিকিৎসা হলো অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যাওয়া। চিকিৎসকের প্রেসক্রাইব করা অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া সেই মুহূর্তে কোনো ওষুধের উপর ভরসা করা উচিত নয়। এইসময় প্রচুর পরিমানে জল পান করা উচিত। শরীর একেবারে হাইড্রেট রাখা উচিত এই সময়ে। দুর্বলতা যেহেতু এই সময়ে সবচেয়ে বেশি থাকে তাই পর্যাপ্ত পরিমান খাবার খেয়ে শরীর যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা যায় সেই চেষ্টা করা উচিত।
রোগের কারণ-
এই রোগটি হয় মূলত সালমোনেল্লা টাইফি নামক একধরণের ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অপরিছন্নভাবে থাকা, খারাপ লাইফস্টাইলের কারণেই মূলত হয়ে থাকে এই রোগ। ফল বা সবজির খোসায় অনেকসময় থেকে যায় এই ব্যাকটেরিয়া। তাই ফল বা সবজি ধোয়ার পরে সেই কন্টামিনেটেড জল দিয়ে যদি রান্না করা হয় তাহলে খাবারের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিছু মানুষ এই রোগের পরোক্ষ ক্যারিয়ার হয়ে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে সেই মুহূর্তে রোগলক্ষন প্রকাশ না পেলেও কিছুদিন পরেও এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
প্রিভেনশন-
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বাইরে কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে নিন। সেই এলাকায় কি কি রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে তা আগে থেকে জানা থাকলে সেইমতো ওষুধ সাথে নিয়ে যাবেন। এই রোগটি আটকানোর জন্য রয়েছে মূলত ভ্যাকসিন। টাইফয়েড জ্বরের জন্য একধরণের ভ্যাকসিন উপলব্ধ রয়েছে তা কোনো জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে নিয়ে নিলেই এই রোগ থেকে অনেকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।