ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘পদ্মভূষণ’-এ সম্মানিত হচ্ছেন সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের কূটনীতিবিদ সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি। পাশাপাশি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন বাংলাদেশি প্রত্নতত্ববিদ এনামুল হক। প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরেও আগামী মার্চ-এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য গত শনিবারই এ বছরের সম্মান প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফ থেকে। এবছরে মোট ১৪১ জন এই সম্মান পেতে চলেছেন। যার মধ্যে ৭ জনকে দেওয়া হচ্ছে পদ্মবিভূষণ। ১৬ জন পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন। এছাড়া ১১৮ জনকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় ১৮ জন অনাবাসী ভারতীয় এবং বিদেশি রয়েছেন। বাংলাদেশের এনামুল হক এবং মোয়াজ্জেম আলি এই তালিকায় অন্যতম।
প্রয়াত মোয়াজ্জেম আলি ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশ সচিব। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই কূটনীতিক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে অবসর নেওয়ার পর, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯-এ তিনি প্রয়াত হন। ২০১৪ সাল ত্থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে ভারতে তাঁর কার্যকাল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কার্যকালে দুই দেশের বন্ধুত্বে নয়া মাত্রা যোগ হয়।
মোয়াজ্জেম আলি ১৮ জুলাই ১৯৪৪ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। নিজেকে সিলেটের সন্তান বলে উল্লেখ করতে তিনি গর্ববোধ করতেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস পাস করেন। এরপর তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং লাহোরের সিভিল একাডেমিতে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মোয়াজ্জেম আলি ওয়াশিংটন ডিসিতে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। এখান থেকেই কর্মরত অবস্থায় তিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। এর পরে তাঁর উদ্যোগেই ওয়াশিংটনে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের দূতাবাস। কর্মজীবনে তিনি ভূটান, ইরান, লেবানন, ফ্রান্স, সিরিয়া পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোয়াজ্জেম আলি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ইউনেস্কোর কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস খসড়া প্রতিবেদন দিয়ে ভাষা আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহয়তা করেছিলেন। এরপরে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। যেখানে তিনি ইউরোপে স্বল্পোন্নত দেশের রফতানির জন্য শুল্কমুক্ত করার কাজ করেছিলেন। বিদেশসচিব হিসেবে তিনি অবসর নেন ২০০১ সালে। এরপর ২০১৪ সালে তিনি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, তাঁর ডাকে সারা দিয়ে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। এই পাঁচ বছরে দুই দেশের সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেই কর্মযজ্ঞে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলির ভাইপো সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলির বক্তৃতা থেকে একান্ত আলাপচারিতার মধ্যেও রস-সাহিত্যের ঝলক দেখা যেত। তাঁর এই রসবোধ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিতেও দেখতে পাওয়া যেত। দিল্লিতে ঢাকাই কাচ্চি বিরিয়ানি উৎসব তাঁর উদ্যোগেই শুরু হয়। হাইকমিশনার হিসেবে দিল্লি এবং কলকাতায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি।
অন্যদিকে এনামুল হক হলেন বাংলাদেশে জাদুঘর আন্দোলনের পথিকৃৎ। এই প্রত্নতত্ববিদের হাত ধরেই ১৯৮৩ সালে বিস্মৃতপ্রায় ঢাকা জাদুঘর বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের রূপ নিয়েছিল। আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘরে পরিণত করার মূল কারিগর তিনি। এর পাশাপাশি গীতিনাট্য রচনার ক্ষেত্রেও এনামুল হক অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।