সম্প্রতি জোড়া ঘূর্ণিঝড় হল আরব সাগরে। 'কিয়ার' এবং 'মহা' নিয়ে সকলকেই অবগত করা হয়েছিল। এবারে কিয়ার দুর্বল হওয়ার পর বঙ্গোপসাগরে আসতে চলেছে আরো এক ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল'। কিয়ার এবং মহা দুটিই ছিল আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়। আরব সাগরে একই সময় দুটি ঘূর্ণিঝড় এই প্রথম। তবে দেশের দুই পাশের দুই সাগরে ঘূর্ণিঝড় এর আগেও হয়েছে। যদিও নিয়মিত নয় অবশ্যই। গত ১২৮ বছরে এমনটা মাত্র ২৫ বার ঘটেছে। নভেম্বরে হয়েছে মাত্র ছ'বার। শেষবার হয়েছিল ১৯৭৭ সালে।
দুই সাগরে একই সময়ে দুই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আপাতত যথেষ্ট আলোচনা চলছে। আইপিসিসি সাম্প্রতিক রিপোর্টেও বলেছে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আনাগোনা বাড়বে। উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবরেই বঙ্গোপসাগরের 'তিতলি' ও আরব সাগরের 'লুবন' নামে দু'টি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, অনেক সময়েই আটলান্টিক প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে এই সময়েই একাধিক ঘূর্ণিঝড় থাকে। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরেও জোড়া ঘূর্ণিঝড় এর আগেও হয়েছে। তবে এগুলি যে সব সময় হয় না, তা বলাই বাহুল্য। দু'টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই। অক্ষাংশেরও ফারাক যথেষ্ট। এই ঝড়গুলির মধ্যে পারস্পরিক কোনও সংঘাত না থাকায় একটি ঘূর্ণিঝড় থাকাকালীনও আরো একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারছে।
দুই সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ২৬ তম ঘটনাটি ঘটার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবারে। আন্দামান সাগর লাগোয়া পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। তারই নাম দেওয়া হয়েছে বুলবুল। নামটি দিয়েছে পাকিস্তান। ঝড়টির সম্ভাব্য উপকূল হবে ওড়িশা, বাংলা এবং বাংলাদেশ উপকূল। এই অভিমুখে যাওয়ার পথে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের মত আকার ধারণ করবে বুলবুল। ঠিক কোন স্থলভাগে আছড়ে পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ সেই ঘূর্ণিঝড় যে কোন দিকে যাবে, তা বোঝা যায়না। আপাতত এটুকু বলা যেতেই পারে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হবে। মাঝ সমুদ্রে ১৫৫ কিমি বেগে বাতাস বইতে পারে। শনিবার থেকে সমুদ্রের কাছাকাছি না গেলেই ভালো। মাঝসমুদ্রে একেবারে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎসজীবীদের। যাঁরা ইতিমধ্যেই মাছ ধরতে সেখানে রয়েছেন, তাঁদের ফিরে আসতে বলা হয়েছে। শুক্রবার থেকেই মেঘলা হয়ে যাবে আকাশ। শনিবার বৃষ্টি বাড়তে পারে। আগাম সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের দু-এক জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সী ম্যাথু কল জানান, এই ধরনের ঘটনা ছোট করে দেখা যায়না। সমুদ্রের জলতলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় সাগরে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আনাগোনা বেড়েছে। আরও বাড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।