ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেণ্টার ও পেন্টাগন হামলার ২২ বছর পর নিহতের তালিকায় যুক্ত হল আরও দুই নতুন নাম। ২২ বছর পূর্তির একদিন আগে ডিএনএ পরীক্ষায় আরও দুজনের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছে। তবে পরিবারের অনুরোধে এই দুই নারী-পুরুষের পরিচয় প্রকাশ করেনি নিউ ইয়র্ক প্রশাসন।
নিউ ইয়র্কের চিফ মেডিকেল অফিসার জানিয়েছেন, নিহতদের তালিকায় এই নিয়ে ১৬৪৯ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হল।এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, প্রথাগত ডিএনএ পরীক্ষার পরিবর্তে ‘নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং টেকনলজি’ ব্যবহার করে এই হামলায় নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে আজও অধরা ১ হাজার ১০৪ জনের পরিচয়। তাদের দেহাবশেষ বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সাইটে মেমোরিয়াল ও মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা আছে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস জানিয়েছেন, ‘আশা করছি স্বজন হারানো মানুষরা এবার এই আশ্বাস পাবেন, দ্রুত বাকিদের পরিচয়ও খুঁজে বের করা হবে।’ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ দুটি শনাক্তকরণ প্রথম জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তার আগে, শেষ শনাক্ত করা হয়েছিল ২০১৯ সালে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ছিল মঙ্গলবার। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ আছড়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারে। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে আত্মঘাতী হামলা করে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায়।
১১০ তলা ভবনটির ৮০তম তলায় ঢুকে পড়ে বিমান। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন শত শত মানুষ, ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন আরও অসংখ্য মানুষ। ১৮ মিনিট পরে, সকাল ৯টা ০৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি হামলা চালায়। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭৫-এর আরেকটি বোয়িং-৭৬৭ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের ৬০তম তলায় আঘাত হানে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইন টাওয়ারের উত্তর দিকের ভবনটি ভেঙে পড়ে। ভবনটি ধসে পড়ার সময় ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ছয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছিল। গুরুতর আহত হয় প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর তৃতীয় হামলাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে।
চতুর্থ বিমান হামলাটি হয় সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩ নামের উড়োজাহাজটি ছিনতাই করা হয়। বিমানে থাকা অবস্থাতেই যাত্রীরা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার বিষয়ে জেনে যান। পরে পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন।
হামলায় ১৯ জন হামলাকারীসহ মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে শুধু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চালানো দুটি বিমান হামলায় মারা যান ২ হাজার ৭৬৩ জন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন দমকলকর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। ৪টি হামলায় সম্মিলিতভাবে ৭৮টি দেশের মানুষ নিহত হন।