২৩ মে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় গৌতম বুদ্ধ নগরে ‘খেলো ইন্ডিয়া’কবাডি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে অন্যতম পোলবার কচুয়া গ্রামের মেয়ে তুহিনা মাইতি। ‘খেলো ইন্ডিয়া কবাডি ইউনিভার্সিটি গেমসে’র কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্গা ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে ৭ পয়েন্টে ম্যাচ জিতে ব্রোঞ্জ পায় তুহিনাদের দল।
বর্তমানে চন্দননগর গভর্মেন্ট কলেজে অনার্সের ছাত্রী তুহিনা। তার পড়াশোনার বিষয় শিক্ষাবিজ্ঞান। কলেজ আর কবাডি দুই চলে সমান তালে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি অবধি তুহিনা প্রথমে জিমন্যাস্টিক্স খেলত। স্থানীয় কালিয়াড়া শক্তি সংঘ ক্লাবে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে কাবাডি ঢুকে পড়ে তার জীবনে।
এখন চন্দননগর হাটখোলা সপ্ত সম্মেলনী ক্লাবের হয়ে কবাডি খেলে তুহিনা, সেখানেই চলে অনুশীলন। জাতীয় স্তরে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সম্প্রতি, বর্ধমান বিশ্ব বিদ্যালয়ের সিলেকশন ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে ইস্ট জোন ইন্টার ইউনিভার্সিটি কবাডি গেমসে ওড়িশায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে টিম চ্যাম্পিয়ন হয়। হরিয়ানার অল ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি গেমসে অংশগ্রহণ করে। এরপর ‘খেলো ইন্ডিয়া’ কবাডি ইউনিভার্সিটি গেমসে কোয়ার্টার ফাইনালে ৭ পয়েন্টে ম্যাচ জিতে দুর্গা ইউনিভার্সিটিকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ জয় করে তুহিনা এবং তার সহপাঠীরা।
অতীতেও সে জিতেছে একাধিক পুরস্কার। ন্যাশনাল স্কুল গেম ও একটি জুনিয়র ওপেন ন্যাশনালের অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে।
ছোটবেলা থেকে তুহিনা অভাব অনাটনের সঙ্গেই বড় হয়েছে। বাবা মন্টু মাইতি, সোনার দোকানের কর্মী। দুই সন্তান, স্ত্রী এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সংসার। টালির চাল আর মাটির ঘরেই কোনওরকমে দিন গুজরান। বর্তমানে সরকারী ঘর পেলেও তা সম্পূর্ণ করতে পারেননি তুহিনার বাবা। এই জীবনটাই বদলাতে চায় জেদী তুহিনা। শুরু থেকেই তুহিনার পাশে ছিলেন মা মানসী মাইতি। মায়ের ইচ্ছে মেয়ে বড় হয়ে খেলাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিক। মা চেয়েছিলেন মেয়েকে খেলোয়াড় তৈরি করতে। তাই বাবার অমতেও মেয়েকে প্রতিদিন মাঠে নিয়ে যেতেন তিনি।
তুহিনার মা বলেন, ‘ওর খেলাধূলা নিয়ে আমার সিদ্ধান্ত প্রথমে কেউ সমর্থন করেননি। ওর বাবা ভেবেছিলেন পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। কিন্তু, মেয়ের জেদ ছিল। ও খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেকে আপত্তি তুললেও মেয়ের জেদ আর সাফল্য দেখে এখন তাঁরাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যদি ও একটি সরকারি চাকরি পায় সেক্ষেত্রে খেলার দিকে আরও মন দিতে পারবে।
‘খেলো ইন্ডিয়া’র ব্রোঞ্জ জয়ী তুহিনা বলে, ‘আরও পরিশ্রম করলে হয়তো হরিয়ানা টিমের মতো প্রথম হতে পারতাম। এখানে থেকে পড়াশোনা এবং খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমি চাই এশিয়ান গেমসে যাতে ভালো জায়গা করতে পারি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চাকরি করতে চাই’।