“ বাবা মুঝে সোনা আউর চান্দি নেহি কিতাব আউর কলাম চাহিয়ে’
“কিতাঁবে ঘরকা রোশনি হ্যায়”
“ কম উমরি আউর জবরদস্তি শাদী কাবিল সাজা জার্ম হ্যায়”
এরকম বার্তা ঘুরে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানের পথে পথে। শহর তো বটেই গ্রাম গঞ্জ এমনকি দুর্গম প্রদেশেও।
পাকিস্তানি মেয়েদের যন্ত্রণার ছবি তুলে ধরা হচ্ছে রঙে-রেখায়-শব্দে। ক্যানভাস মালবাহী ট্রাক।
মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার সাধারণ ট্রাক। কিন্তু সেই ট্রাকই পাকিস্তান জুড়ে আলাদা ‘সেনসেশন’ তৈরি করেছে। বলা ভাল নারীবাদী আন্দোলনে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সাধারণ মালবাহী ট্রাক।
রঙে-রেখায় ট্রাকের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নারী ক্ষমতায়নের বার্তা। লাল, নীল,বেগুনীর মতো উজ্জ্বল রং সহজেই চোখ টেনে নিচ্ছে সাধারণ মানুষের।
ট্রাক আর্ট পাকিস্তানে খুব জনপ্রিয় শিল্প। ট্রাকের গায়ে ছবি আঁকার রীতি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে।
নৃ- তত্ত্ববিদ সমর মিনাল্লা খানের তৈরি একটি এনজিও পুরো বিষয়টির দায়িত্বে।
সমাজে মেয়েদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে ট্রাক আর্টকে বেছে নেওয়া হয়েছে মাধ্যম হিসেবে। পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সফল মহিলারা এই ক্যাম্পেনে যুক্ত হয়েছেন।
শুধু ছবি নয়, কবিতার লাইন, স্লোগানও লেখা হচ্ছে ট্রাকে। ২০১৮-র অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্পেন। বাল্য বিবাহ, শিশুকন্যা নির্যাতন, পণ, বৈবাহিক অত্যাচারের- এর মতো বিষয়কে মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
শাহজিল মালিক এমনই এক শিল্পী। লিঙ্গ বিভেদ এবং নারী বৈষম্যের নানা দিক তিনি ধরছেন গ্রাফিক আর্টের মাধ্যমে।
হিজাবী বাইকার, বাদামী চামড়ার মেয়ে, ধাক্কা দিয়েছে সাধারণ মানুষের ভাবনায়।
শাহজিল বলেন, ‘ পাকিস্তানের মাটিতে টিকে থাকার জন্য মেয়েদের সাংঘাতিক সংগ্রাম করতে হয়’।
শাহজিল লাহোরের বাসিন্দা। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা অভিজাত পরিবারে । জীবন সম্পর্কে শাহজিলের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যে দেশের অধিকাংশ নারীর বেঁচে থাকার কোনও মিল তা তিনি বিলক্ষণ জানেন।
অর্থনৈতিক শ্রেণি আলাদা হলেও মেয়েদের জীবন বিশেষ বদলায় না। সেখানে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, এবং উচ্চবিত্তে তফাৎ নেই। সমাজের সব স্তরে মেয়েদের অবস্থানটা এক। বিধি- নিষেধ আর অন্ধত্ব ভাবনার বেড়াজাল বারবার জীবনের স্বাভাবিক গতিতে বাধা দেয়। শাহজিলকেও যৌন হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। নারীদের জন্য ‘মানবাধিকার’ বলে কিছু রাখেনি সমাজ। মানবাধিকারের সাধারণ নিয়ম লঙ্ঘিত হওয়া ‘রুটিন’ হয়ে গিয়েছে পৃথিবীর সব দেশে, সব সমাজে।
শাহজিলের ট্রাক আর্টের প্রথম সিরিজ ছিল মেয়েদের ঘরের বাইরে পা রাখার ভয়’ নিয়ে।
একজন মহিলার সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে সাজপোশাকে কীভাবে নজর দিতে হয় তাই উঠে এসেছিল তার দ্বিতীয় সিরিজে। একজন মানুষের মানবিক গুণের বদলে কুর্তি বা পোশাকের নেকলাইন, হেমলাইন, গায়ের শাল, চুলের মাপ, মেক আপ এসব কীভাবে গুরুত্ব পায় সমাজের কাছে।
এমন কী রাস্তায় স্বাধীন ভাবে হাঁটার অধিকারও একজন একা মেয়ের নেই। শুধু রাস্তা নয়, যে কোন পাবলিক প্লেস। কোথাও তার অধিকার নেই।
হায়াত খান নামে এক পাকিস্তানি চিত্রশিল্পীও ট্রাক রাঙাচ্ছেন এভাবেই। ছেলেদের ভাবনায় উঠে আসছে মেয়েদের যন্ত্রণার কথা। ইলাস্ট্রেশনগুলো কমিক্স স্টাইলে করা হয়েছে।
তবে এরকম বার্তা দেওয়া ট্রাকের লাইসেন্স বা রাস্তায় নামানোর অনুমতি সহজে মেলে না। সরকারিভাবে খতিয়ে দেওয়া হয় ট্রাকে কী ধরনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তবু অনেক ট্রাক চালকই শিল্পীদের ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।