বাংলা নাট্যজগতের একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী তৃপ্তি ভাদুড়ী। তিনি ১৯২৫ সালের ২৫ শে অক্টোবর বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আশুতোষ ভাদুড়ী মাতার নাম শৈলবালা দেবী। শৈশবে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে নাট্য সমিতি মঞ্চে শিশু শিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি প্রগতিশীল নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৪৩ সালে ফ্যাসিবিরোধী লেখকশিল্পী সংঘের প্রথম নাটকের মহিলাশিল্পী না থাকায় তার মাসতুতো দাদা বিজন ভট্টাচার্যের 'আগুন' নাটকে তিনি অভিনয় করেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসার পর তাঁর অভিনয়ের বিকাশ ও খ্যাতি বাড়তে থাকে। ১৮৪৫ সালে শম্ভূ মিত্রের সঙ্গে বিবাহ হওয়ার পর তাঁর নাম হয় তৃপ্তি মিত্র যে নামে তিনি বেশি পরিচিত। শম্ভূ মিত্র ছিলেন একজন খ্যাতনামা অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল 'বহুরূপী'। তৃপ্তি মিত্র স্বয়ং ছিলেন বহুরূপীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এবং এই নাট্যদলের বহু নাটকে তাঁর অভিনয় চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এছাড়া তিনি বহু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি বহু নাটকে নির্দেশকের ভূমিকাও পালন করেছেন। ১৯৮০ সালে সাংগঠনিক বিরোধের জন্য বহুরূপী ত্যাগ করে কিছু দিনের জন্য 'চেনামুখ' নাট্যদলে অভিনয় করেন। নতুন অভিনয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি 'আরব্ধ নাট্য বিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মঞ্চে অভিনীত নাটক গুলি হল সেতু, সচিব সখা, বিপ্রদাস, গৃহলক্ষ্মী, থানা থেকে আসছি, সওদাগর, বিরাজ বৌ, দ্বিধা, হাসি। তাঁর আবদ্ধ নাট্য বিদ্যালয়ে প্রযোজিত ও নির্দেশিত নাটক গুলি হল সরীসৃপ, হাজার চুরাশির মা, রক্তকরবী। তাঁর বহুরূপী নাট্যদলে নির্দেশিত নাটক গুলি হল ডাকঘর, অপরাজিত, কিংবদন্তি, গন্ডার, দুরাশা, ঘরে বাইরে, যদি আর একবার, পাখি, বলি প্রভৃতি। তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল আকাডেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী, শান্তিনিকেতনে ভিজিটিং ফেলো। এছাড়াও তিনি বেতার, দূরদর্শনে দক্ষতার সঙ্গে বহু অভিনয় করেছেন। নাট্য মঞ্চের এক মহান অভিনেত্রী কে আমরা হারিয়ে ফেলি ১৯৮৯ সালে। তাঁর সুযোগ্যা কন্যা শাঁওলি মিত্রও একজন অভিনেত্রী।